কিভাবে নিরাকার সর্বব্যাপক ঈশ্বরের পূজা করতে হবে ?
প্রায়ই সাকারবাদী পৌরাণিক বন্ধুরা জানতে চায় যে নিরাকার ঈশ্বরের পূজা কিভাবে করা উচিত। আমার জানা মতে 'পূজা' শব্দের অর্থ শ্রদ্ধা, সম্মান কে বোঝায়। বস্তু ভেদে শ্রদ্ধা, সম্মান নানান ধরণের হয়ে থাকে। যেমন আপনি আপনার বৃদ্ধ পিতা মাতার পূজা করেন অর্থাৎ এর মানে বুঝতে হবে আপনি যথাযথ ভাবে আপনার পিতা মাতাকে ভোজন, পোশাক, ঔষধ আদি দিয়ে সেবা যত্ন করেন। কিন্তু আপনি তা না করে যদি প্রতিদিন পিতা মাতার চরণে গড়াগড়ি করেন আর তাদের আবশ্যিক বস্তু সমূহ না দেন, তাহলে সেটা কখনোই পিতা মাতার পূজা বলে গণ্য হবেনা। মৃত পিতা মাতার পূজা কিভাবে করা যায় ? মৃত পিতা মাতার সকল সৎ গুণ-কর্ম-স্বভাবকে মনন করা এবং সেগুলোকে ধারণ করার চেষ্টা করাই হলো তাদের পূজা। কিন্তু তা না করে যদি মৃত মাতা পিতার ছবির সাথে জীবিত পিতা মাতার সাদৃশ্য পূজা *[সেই ছবি গুলোকে অন্ন, ফল ইত্যাদি খেতে দেওয়া, সেই ছবিকে জীবিত ব্যক্তির মতন ভেবে প্রণাম করা] করা হয় কিন্তু তাদের গুণ-কর্ম-স্বভাবকে ধারণ করার কোনো চেষ্টা না করা হয়, তাহলে কখনোই তা পূজা হতে পারে না।
এইবার প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কিভাবে ঈশ্বরের পূজা করা উচিত ? যে ঈশ্বর এই জগৎ তৈরির পূর্বেও বিদ্যমান ছিলেন এবং এই জগৎ ধ্বংসের পরেও বিদ্যমান থাকবেন, সেই অনন্ত শক্তিমান স্রষ্টা কি কোনো কিছু জাগতিক ভোজন করার দরকার পড়ে ? কিন্তু আমরা সেই স্রষ্টা কে অন্ন, ফল, পায়রা, মহিষ, পাঠা ইত্যাদি খেতে দেই। আমরা ভুলে যাই যে স্রষ্টা স্বয়ং শক্তিস্বরূপ; তারই শক্তিতে জগতের প্রতিটি পদার্থ গতিশীল হচ্ছে, তার কখনোই ভোজন করার দরকার পড়ে না, শুধু পরমাত্মার নয় জীবাত্মারও ভোজন করার দরকার পড়ে না। আমাদের ভোজন করতে হয় এই জীবকে চালানোর জন্য। এই দেহ ভোজন করে এবং মলত্যাগ করে কিন্তু পরমাত্মা এবং জীবাত্মা না ভোজন করে আর না মলত্যাগ করে। কিছু পৌরাণিক বন্ধুরা বলে থাকে যে আমরা স্রষ্টা কে খেতে দেইনা, আমরা আগে যেকোনো খাদ্যবস্তু স্রষ্টাকে অর্পণ করি তারপর আমরা তা গ্রহণ করি। এই পৌরাণিক বন্ধুরা ভুলে যায় যে স্রষ্টা কিন্তু সেই অর্পণ করা খাদ্যবস্তুর মধ্যেও বিরাজমান রয়েছেন, তিনিই খাদ্যবস্তুকে সৃষ্টি করেছেন, সেই খাদ্যবস্তুর প্রতিটি অনু পরমাণু আদি সূক্ষ্ম কণা গুলোকেও তিনিই সঞ্চালন করছেন এবং তাহলে যেকোনো বস্তু স্রষ্টাকে অর্পণ করা কিভাবে সম্ভব ? এমন বহু প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর নেই। এবিষয়ে বেদে হয়েছে-
ঈশা বাস্যমিদং সর্বং য়ত্ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ ।
তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্ ॥১॥(য়জু ৪০/১)
অতএব সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের সর্বদা সমস্ত দিক হতে প্রত্যক্ষ করছেন; এই জগত ঈশ্বর দ্বারা ব্যাপ্ত অর্থাৎ সকল স্থানে ঈশ্বর বিদ্যমান রয়েছেন। এই জগতে সে সকল ভোগ্য বস্তু রয়েছে তা আমাদের কারোরই নয় কেননা এগুলো স্রষ্টার সৃষ্ট বস্তু। তাই আমাদের উচিত আমরা যেন এই সকল বস্তুকে ত্যাগ পূর্বক ভোগ করি, আমরা যেন কোনো জাগতিক বস্তুতে আসক্ত না হই। ঈশ্বর কে অর্পণ করার বাস্তবিক স্বরূপ এই মন্ত্রে তুলে ধরা হয়েছে।
ঈশ্বরের বাস্তবিক পূজা হয়ে থাকে স্তুতি, প্রার্থনা ও উপাসনার মাধ্যমে। ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন -স্তুতি দ্বারা ঈশ্বরের প্রতি প্রীতি জন্মে। তার গুণ কর্ম স্বভাব দ্বারা নিজ গুণ কর্ম স্বভাবের সংশোধন হয়। প্রার্থনা দ্বারা নিরভিমানতা, উৎসাহ ও সাহায্য লাভ হয় এবং উপাসনা দ্বারা স্রষ্টার সাথে মিলন ঘটে, তার সাথে সাক্ষাৎকার হয়। স্তুতি ও প্রার্থনা বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। দেখেনিন-
ঈশ্বরের স্তুতি
https://aryaveeratwa.blogspot.com/2022/11/blog-post_18.html
প্রার্থনা
https://aryaveeratwa.blogspot.com/2022/11/blog-post.html
আজকে আলোচনা করা হবে উপাসনা বিষয়ে; উপাসনার মূল হলো য়োগ। ঋষি পতঞ্জলি য়োগ বিষয়ে একটি শাস্ত্র লিখেছেন যা য়োগদর্শন নামে পরিচিত। *[অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে যে আমি যোগ না লিখে য়োগ কেন লিখছি ? এমনটা লিখছি এই কারণেই যাতে আপনারা শুদ্ধ উচ্চারণ করতে সক্ষম হন। দেবনাগরী লিপিতে 'य' অক্ষরের উচ্চারণ য় হয়। আর বাংলায় আমরা 'য' অক্ষরের উচ্চারণ জ করি। তাই শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য য না লিখে য় লেখাই উচিত]। কারোর মনে প্রশ্ন উৎপন্ন হতে পারে যে ঋষি পতঞ্জলির য়োগদর্শন লিখিত হওয়ার আগে কি য়োগ ছিল না ? হ্যাঁ অবশ্যই ছিল, ঈশ্বরের সাক্ষাৎকার হওয়ার একমাত্র পথ হলো য়োগ। ঋষি পতঞ্জলি মনুষ্যের হিতার্থে য়োগ বিষয়ক একটি শাস্ত্রই লিখেছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণও অর্জুনকে য়োগবিষয়ে বহুবার বলেছেন যা আমরা গীতার মধ্যে পেয়ে থাকি।
য়োগ কি ?
♦️ঋষি পতঞ্জলি লিখেছেন-
য়োগঃ চিত্ত-বৃত্তি-নিরোধঃ। [য়োগদর্শন ১/২]
=> চিত্ত বা মনের সকল বৃত্তির নিরোধ হওয়াকে য়োগ বা সমাধি বলা হয়।
♦️য়ম-নিয়ম-আসন-প্রাণায়াম-প্রত্যাহার-ধারণা-ধ্যান-সমাধয়ঃ অষ্টৌ অঙ্গানি। [য়োগদর্শন ২/২৯]
=> য়োগের ৮ টি অঙ্গ রয়েছে- য়ম্, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি।
⭕️য়ম্⭕️
♦️অহিংসা-সত্য-অস্তেয়-ব্রহ্মচর্য়-অপরিগ্রহাঃ য়মাঃ। [য়োগদর্শন ২/৩০]
=>য়োগের প্রথম অঙ্গ য়মকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে- অহিংসা, সত্য, আস্তেয়, ব্রহ্মচর্য় এবং অপরিগ্রহ। ঋষি ব্যাস অহিংসা বিষয়ে লিখেছেন 'তত্রাহিংসা সর্বথা সর্বদা সর্বভূতানামনভিদ্রোহঃ।'[য়োগদর্শন ভাষ্য ২/৩০] অর্থাৎ সর্বত্র ভাবে সমস্তকালে সমস্ত প্রাণীদের দুঃখ না দেওয়া অহিংসা। অশাস্ত্রীয় অর্থাৎ অবৈধ ভাবে অন্যের ধন গ্রহণ করা হলো 'স্তেয়' অতএব চৌর্যবৃত্তি আদি ত্যাগ করা 'অস্তেয়'। যে পদার্থ যেমন তার বিষয়ে তেমনই বাণীতে ও মনে হওয়াই 'সত্য'। 'ব্রহ্মচর্য়' বিদ্যা অভ্যাস করা, বীর্য রক্ষা করা, জিতেন্দ্রিয় আদি হওয়া। অভিমান আদি দোষ হতে পৃথক হওয়া 'অপরিগ্রহ'।
⭕️নিয়ম⭕️
♦️শৌচ-সন্তোষ-তপঃ-স্বাধ্যায়-ঈশ্বরপ্রণিধানানি নিয়মাঃ। [য়োগদর্শন ২/৩২]
=> য়োগের দ্বিতীয় অঙ্গ নিয়মকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে- শৌচ, সন্তোষ, তপঃ, স্বাধ্যায় এবং ঈশ্বরপ্রণিধান। শৌচ- ধর্মাচরণ, সত্যভাষণ, বিদ্যাভ্যাস আদি দ্বারা অন্তরের শুদ্ধিকরণ এবং জল আদি দ্বারা শারীরিক শুদ্ধিকরণ। সন্তোষ- পুরুষার্থের পশ্চাদ যা পাওয়া যায় তাতে সন্তুষ্ট থাকা, তার থেকে অধিক কিছু পাওয়ার ইচ্ছা না করা। তপঃ- ধর্মাচারণ দ্বারা হানি-লাভ, সুখ-দুঃখ, মান-অপমান, শীত-গ্রীষ্ম আদিতে সহনশীল থাকা। স্বাধ্যায় বিষয়ে ঋষি ব্যাস লিখেছেন- 'স্বাধ্যায়ো মোক্ষশাস্ত্রাণামধ্যয়নম্ প্রণবজপো বা' [য়োগদর্শন ব্যাস ভাষ্য ২/৩২] অর্থাৎ মোক্ষ বিষয়ক বেদ আদি শাস্ত্র অধ্যয়ন এবং প্রণব জপ। ঈশ্বরপ্রণিধান- পরম গুরু পরমেশ্বরে সমস্ত কর্ম সমর্পিত করা, তার ভক্তি করা, তার আদেশ আদি পালন করা।
⭕️আসন⭕️
♦️স্থির- সুখম্ আসন। [য়োগদর্শন ২/৪৬]
=> যে অবস্থায় শরীর স্থির ও সুখযুক্ত হয় তা আসন। এই কথাটি না বললেও নয় যে ঋষি পতঞ্জলি এখানে স্পষ্ট ভাবে লিখেছেন আসন স্থির ও সুখ যুক্ত,যেমন- পদ্মাসন, বীরাসন আদি। আসন প্রাণায়াম, ধ্যান আদি সিদ্ধির জন্য প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন এমন কিছু আসন রয়েছে যার সাথে য়োগ শাস্ত্রের আসনের দূর দূর কোনো সম্পর্ক নেই আর না সেই সকল আসন প্রয়োগ করে ধ্যান, সমাধি করা সম্ভব, তবুও সেগুলোকে য়োগাসন নামে প্রচার করা হচ্ছে। যেমন- ধনুরাসন, ভুজঙ্গাসন, নৌকাসন, শশাঙ্কাসন ইত্যাদি। এই সকল আসন স্থির হলেও কখনোই সুখযুক্ত নয়, কাজেই এগুলো বাস্তবিক আসন নয়। ঋষি ব্যাস জি য়োগদর্শন ভাষ্যে কয়েকটি আসনের কথা উল্লেখ করেছেন- পদ্মাসন, বীরাসন, ভদ্রাসন, স্বস্তিক, দণ্ডাসন আদি।
⭕️প্রাণায়াম⭕️
♦️বাহ্য-আভ্যন্তর-স্তম্ভবৃত্তিঃ--দেশ-কাল-সংখ্যাভিঃ পরিদৃষ্টঃ দীর্ঘ-সূক্ষ্মঃ। বাহ্যাভ্যন্তরবিষয়াক্ষেপী চতুর্থঃ। [য়োগদর্শন ২/৫০,৫১]
=> য়োগশাস্ত্র অনুযায়ী ৪টি প্রাণায়াম রয়েছে-বাহ্য প্রাণায়াম, আভ্যন্তর প্রাণায়াম, স্তম্ভবৃত্তিপ্রাণায়াম ও বাহ্য আভ্যন্তর বিষয়াক্ষেপী।
⭕️প্রত্যাহার⭕️
♦️স্ববিষয়াসম্প্রয়োগে চিত্তস্য স্বরূপানুকার ইবেন্দ্রিয়াণাং প্রত্যাহারঃ।
=> প্রত্যাহার- ইন্দ্রিয় সমূহের নিজ নিজ বিষয়ের সাথে সংযোগ না থাকার কারণে চিত্তের স্বরূপের অনুকরণ করা অর্থাৎ চিত্ত নিরুদ্ধ হওয়ার পশ্চাদ চিত্তের সাদৃশ্য সকল ইন্দ্রিয় নিরুদ্ধ হয়ে যায়। যেমন রানী মৌমাছির উড়লে সকল মৌমাছি উড়ে থাকে, সে বসলে সকলে বসে ঠিক তেমনি চিত্ত নিরুদ্ধের কারণে সকল ইন্দ্রিয় নিরুদ্ধ হয়ে যায়।
⭕️ধারণা⭕️
♦️দেশবন্ধশ্চিত্তস্য ধারণা। [য়োগদর্শন ৩/১]
=> দেশ বা স্থান বিশেষে চিত্তকে স্থির করাই হলো ধারণা। ঋষি ব্যাস ধারণা বিষয়ে লিখেছেন-'নাভিচক্রে, হৃদয়পুণ্ডরীকে, মূর্ধ্নি জ্যোতিষি, নাসিকাগ্রে, জিহ্বাগ্র ইত্যেবমাদিষু দেশেষু বাহ্যে বা বিষয়ে চিত্তস্য বৃত্তিমাত্রেণ বন্ধ ইতি ধারণা' অর্থাৎ নাভিচক্রে, হৃদয়ে, মস্তকগত প্রকাশে, নাসিকার অগ্রভাগে, জিহ্বার অগ্রভাগে অথবা বাহ্য বিষয়ে চিত্তকে কেবল
বৃত্তির সাথে জড়ানোর প্রক্রিয়াকে ধারণা বলা হয়।
⭕️ধ্যান⭕️
♦️তত্র প্রত্যয়ৈকতানতা ধ্যানম্। [য়োগদর্শন ৩/২]
=>যে স্থানে ধারণা করা হয়েছে ওই স্থানে জ্ঞেয় বিষয়ক জ্ঞান একই থাকা অর্থাৎ জ্ঞেয় বিষয়ক জ্ঞান হতে ভিন্ন জ্ঞান উপস্থিত না করাই হলো ধ্যান। যোগ জিজ্ঞাসুদের উচিত ধ্যান বিষয়ে বিশেষ ভাবে জ্ঞান রাখা। ঈশ্বরের ধ্যানকারী সাধকের উচিত প্রথমে শব্দ প্ৰমাণ অথবা অনুমান প্রমাণ এর সাহায্যে ঈশ্বরের স্বরূপ সম্পর্কে যথাযথভাবে জ্ঞাত হওয়া। যদি সাধক ঈশ্বরের স্বরূপ সম্পর্কে সঠিক না জানে অথবা বিপরীত জানে তাহলে ধ্যানের সফলতা লাভ হয়না। যেমন শব্দ প্ৰমাণ দ্বারা জানা যায় যে ঈশ্বর সর্ব-ব্যাপক, সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, আনন্দস্বরূপ। ধ্যানের সময়ে এই প্রকারে ঈশ্বরের সঠিক স্বরূপকে জেনে তার ধ্যান করতে হবে।
⭕️সমাধি⭕️
♦️তদেবার্থমাত্রনির্ভাসং স্বরূপশুন্যমিব সমাধিঃ।[য়োগদর্শন ৩/৩]
=> সেই ধ্যান= ধ্যেয় বিষয়ক জ্ঞানই কেবল বস্তুর স্বরূপকে প্রকাশকারী নিজ স্বরূপ হতে শুন্য হয় তা সমাধি। ধ্যানকালে ধ্যাতা= যিনি ধ্যান করেন, ধ্যান= যে জ্ঞানের দ্বারা ধ্যেয় বস্তুর গবেষণা করা হয় সেই জ্ঞান এবং ধ্যেয়= যে বস্তুর গবেষণা করা হয় সেই বস্তু ভিন্ন ভিন্ন রূপে ভাসতে থাকে। কিন্তু সমাধি অবস্থায় ধ্যেয় বস্তুর স্বরূপ মুখ্য রূপে প্রকাশিত হয় অর্থাৎ সমাধি অবস্থায় ধ্যান গৌণ হয়ে যায় এবং পদার্থের স্বরূপই মুখ্য থাকে। স্বরূপ শূন্য এই কথনের তাৎপর্য এই নয় যে যোগীর জ্ঞান শুন্য হয়ে যায়। এই কথনের তাৎপর্য এই যে ধ্যেয় বস্তুর সাক্ষাৎকার সমাধি অবস্থায় মুখ্য হয়ে থাকে। যোগী যে বস্তুর ধ্যান করে সমাধি অবস্থায় সেই বস্তুর পূর্ণাঙ্গ স্বরূপ কে জানতে পারে।
আজকে য়োগ বিষয়ে খুবই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। আমি পরবর্তী সময়ে য়োগের এক একটি অঙ্গের বিস্তৃত আলোচনা করবো।যদি কেউ য়োগ বিষয়ে খুবই বিস্তারিত জানতে চান তাহলে য়োগদর্শন অবশ্যই পড়বেন। কিছু ব্যক্তি এমন আছে যারা শুরুতেই ধর্ম বিষয়ে কিছু জানার পরেই ধ্যান করতে চায়, কেউ কেউ বলে থাকে যে সে যখন ধ্যানে বসে তখন তার মন স্থির হয়না, চঞ্চলই থাকে। আমি এই সকল বন্ধুদের বলতে চাই যে ধ্যান হলো য়োগের ৭ নং অঙ্গ। য়ম্, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার ঠিক ভাবে পালন না করে সরাসরি 'ধ্যান' অঙ্গে লাফিয়ে গেলে ধ্যানের সিদ্ধিলাভ কিভাবে সম্ভব হবে ? ১-৯ শ্রেণীর শিক্ষা অর্জন না করে ১০ শ্রেণীতে শিক্ষা অর্জন করা যেমন বোকামী ঠিক তেমনি য়োগের ৬ অঙ্গ না মেনে ধ্যানে লাফিয়ে যাওয়া বোকামী মাত্র। যে ব্যক্তি শুরুর য়ম্, নিয়ম ঠিক ভাবে পালন করতে সক্ষম হবে তিনি একসময় বাদবাকি ৬ অঙ্গকে অবশ্যই লাভ করতে পারবে। কেননা য়ম্ ও নিয়মের মধ্যে যে ১০ টি বিষয় রয়েছে তা যথাযথ ভাবে পালন করা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত কঠিন।
■যে ব্যক্তি এই অষ্ট অঙ্গকে লাভ করতে পারেন, তিনিই য়োগী হন। সেই য়োগী যখন পরমাত্মার মাধ্যমে অপরা- পরা বিদ্যা কে যথাযথ ভাবে জানতে পারেন, তখন তিনি মুক্তি লাভ করেন। যেমন #ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যিনি প্রকৃতি কে এবং ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞাত হন তিনি মুক্তিলাভ করেন [গীতা ১৩/২৪] আশা রাখি আমি আপনাদের মধ্যে উপাসনা বিষয়ে সাধারণ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি।
নমস্তে🙏
সনাতন ধর্মের জয় হোক 🚩🚩
জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩
কৃণ্বান্তো বিশ্বমার্য়ম্🚩🚩