google01b5732cb2ec8f39 বেদের প্রতিটি মন্ত্রের আধিদৈবিক, আধিভৌতিক ও আধ্যাত্মিক অর্থ হয় ~ আর্যবীর आर्यवीर aryaveer

Recent News

বেদের প্রতিটি মন্ত্রের আধিদৈবিক, আধিভৌতিক ও আধ্যাত্মিক অর্থ হয়

 



বর্তমান সময়ে ৪ হাত যুক্ত বিষ্ণুর কিছু ভক্তরা (বৈষ্ণব) সকল শাস্ত্র কে তুচ্ছ করে শুধুমাত্র গীতাকে নিয়ে লাফালাফি করে। সনাতন ধর্মের মূল হল বেদ, এরা যুক্তিতে না পারলে বেদকে তুচ্ছ করতেও কারোর পরোয়া করেনা। আর এই সকল বৈষ্ণবরা বেদের চেয়েও গীতাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য গীতা ২/৪৫ শ্লোকটি খুবই ব্যবহার করে থাকে। আসুন দেখি এই শ্লোকে কি রয়েছে- 


ত্রৈগুণ‍্যবিষয়াঃ বেদাঃ নিস্ত্রৈগুণ‍্যঃ ভব অর্জুন ।

নির্দ্বন্দ্বঃ নিত্যসত্ত্বস্থঃ নির্য়োগক্ষেমঃ আত্মবান্ ॥৪৫


অর্থ-বেদে প্রধানত জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুণ সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন! তুমি সেই গুণ গুলিকে অতিক্রম করে নির্গুণস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।



যে সকল পৌরাণিক বিদ্বানরা গীতার ভাষ্য করেছেন, তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই উক্ত শ্লোকের একই অর্থ করেছেন। এখানে বলা হচ্ছে যে বেদে প্রধানত জড় প্রকৃতির তিন গুণের বিষয়ে বলা হয়েছে। এখানে অর্জুনকে বলা হচ্ছে এই গুণ গুলোকে অতিক্রম করতে। আসলে এই ত্রিগুণ কি ? ঋষি কপিল লিখেছেন- সত্ত্বরজস্তমসাং সাম‍্যাবস্থা প্রকৃতিঃ। [সাংখ্য দর্শন ১/৬১] প্রকৃতির মধ্যে সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণ সমান অবস্থায় থাকে। এই সূত্রে আরও বলা হয়েছে এই প্রকৃতি থেকেই সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পদার্থ তৈরি হতে হতে স্থূল ভূত আদি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ এই জগতে যে সকল জড় পদার্থ রয়েছে তা সবই প্ৰকৃতি নামক উপাদানের অংশ। 


এইবার দেখে নেওয়া যাক গীতা ২/৪৫ শ্লোক অনুযায়ী বৈষ্ণব বন্ধুরা যে দাবিটি করে থাকে তা কতটা সত্য। বেদের ৬ টি অঙ্গ রয়েছে যার মধ্যে একটি হল নিরুক্ত, বর্তমানে যে নিরুক্ত শাস্ত্রটি পাওয়া যায় তা লিখেছেন ঋষি য়াস্ক। নিরুক্তের ৭/১ অনুযায়ী বেদের প্রতিটি মন্ত্রের তিন প্রকার অর্থ হয়। এইবার এই বিষয়ে প্রাচীন কিছু নিরুক্ত টীকাকারের মান্যতা দেখে নেওয়া যাক- 


#স্কন্দস্বামী


সর্বদর্শনেশু চ সর্বে মন্ত্রা য়োজনীয়াঃ।  কুতঃ ? স্বয়মেব ভাষ্যকারেণ সর্বমন্ত্রাম্ ত্রিপ্রকারস‍্য বিষয়স‍্য প্রদর্শনায় অর্থবাচঃ পুষ্পফল মাহ ইতি যজ্ঞাদীনাম্ পুষ্পফলত্বেন প্রতিজ্ঞানাত্।


[ নিরুক্ত ৭/৫, স্কন্দস্বামী টীকা] 


অর্থাৎ সর্ব পক্ষে সমস্ত মন্ত্রের যোজনা করা উচিত। কেননা স্বয়ং ভাষ্যকার (নিরুক্তকার য়াস্ক) সমস্ত মন্ত্রে তিন প্রকারের বিষয় কথন করার জন্য অর্থ কে মন্ত্ররূপী বাক্ এর পুষ্প ফল বলেছেন। এবং যজ্ঞ আদিকে পুষ্প বা ফল বলেছেন।



#দুর্গাচার্য


আধ্যাত্মিকাধিদৈবতাধিয়জ্ঞাভিবায়িনাং মন্ত্রাণামর্থাঃ পরিজ্ঞায়ন্তে।


[নিরুক্ত ১/১৮ দুর্গাচার্য টীকা]


দুর্গাচার্য এখানে তিন প্রকারের অর্থের কথা বলেছেন। 


তস্মাদেতেষু য়াবন্তোঽর্থা উপপদ্যেরন্নধিদৈবাধ্যাত্মাধিয়জ্ঞাশ্রয়া সর্ব এব তে য়োজ্যাঃ মাত্রাপরাধোঽস্তি।


[নিরুক্ত ২/৮, দুর্গাচার্য টীকা] 


আধিদৈবিক আধ্যাত্মিক এবং অধিযজ্ঞে  আশ্রিত যতটা অর্থ সম্ভব হয়, সেগুলোর যোজনা করা উচিত। এমনটা করা কোনো অপরাধ নয়। 



#ঋষি দয়ানন্দও একই মান্যতা দিয়েছেন- 


সর্বেমন্ত্রাস্ত্রিবিধানামর্থানাম্ বাচকা ভবন্তি। কেচিত্ পরোক্ষাণাং, কেচিত্ প্রত‍্যক্ষাণাং, কেচিদধ‍্যাত্মম্ বক্তুমর্হাঃ।


[ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা, প্রশ্নোত্তরবিষয়ঃ, ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী] 


অতএব বেদের প্রতিটি মন্ত্রের তিন প্রকারের অর্থ পাওয়া যায়, যেমন- আধ্যাত্মিক অর্থাৎ যা জীবাত্মা- পরমাত্মা বিষয়ক, আধিদৈবিক যা সূর্য, চন্দ্র আদি পদার্থ বিষয়ক এবং আধিযাজ্ঞিক বা আধিভৌতিক অর্থাৎ যাজ্ঞিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আদি বিষয়ক। অতএব গীতা ২/৪৫ শ্লোক অনুযায়ী যে দাবিটি করে থাকে আমাদের বৈষ্ণব বন্ধুরা তা শতভাগ মিথ্যা!কেননা শাস্ত্র অনুযায়ী বেদের প্রতিটি মন্ত্রের আধ্যাত্মিক অর্থ হয়। তাই এই কথা বলা পুরোই পাগলামি যে বেদের মধ্যে প্রধানত জড় প্রকৃতির বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।


এই শ্লোক নিয়ে বৈষ্ণবরা আরও ধরণের পাগলামি করে থাকে, বৈষ্ণবদের মতে বেদে যেহেতু প্রধানত জড় প্রকৃতির বিষয়ে আলোচনা রয়েছে তাই বেদে কে অতিক্রম করে গুণাতীত হতে বলা হয়েছে অর্থাৎ বেদ জ্ঞান অর্জন করার কোন দরকার নাই, গীতা মানলেই গুণাতীত হওয়া যাবে। বৈষ্ণবদের এই পাগলামি দেখে একটা ১০ বছরের বুদ্ধিমান শিশুও হাসবে! কিছুক্ষণের জন্য যদি ধরেও নেওয়া হয় বেদে শুধুই জড় প্রকৃতির বিষয়ে কথন রয়েছে আর গীতায় বলা হয়েছে এই সকল গুণ অতিক্রম করতে। তো এই ত্রিগুণ যুক্ত প্রকৃতির বিদ্যা (বেদ) না জেনেই কি এই ত্রিগুণকে অতিক্রম করা যাবে ? উদাহরণ স্বরূপ একজন ব্যক্তিকে বলা হলো যে- আপনি আর মাত্র ১০০ কিমি পথ অতিক্রম করলেই দিল্লি পৌঁছে যাবেন। তার মানে কি এই যে ওই ব্যক্তিকে ১০০ কিমি পথ যেতে বারণ করা হচ্ছে ? ১-৯ শ্রেণীর বিদ্যা অতিক্রম করলে ১০ শ্রেণীতে ওঠা যায়। এর মানে কি এই যে ১-৯ শ্রেণীর বিদ্যা ত্যাগ করে ১০ শ্রেণীতে ওঠা সম্ভব ? সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি জড় প্রকৃতির গুণ সমূহকে আগে জানতে হবে তারপরই সেই গুণ গুলোকে অতিক্রম করা সম্ভব, অন্যথা সম্ভব নয়। এখন কিছু বৈষ্ণব বলতে পারে যে 'আমরা জড় প্রকৃতিকে জানতে চাই না, না জানলেও ঈশ্বর কে পাওয়া যাবে গীতা ১৮/৬২, ৬৬ শ্লোক মানলেই হবে'। আমি এই সকল বৈষ্ণবদের বলতে চাই যে গীতা ১৩/২৪ শ্লোকে স্পষ্ট করে বলা আছে প্রকৃতি কে এবং ঈশ্বর কে জানলে মোক্ষ লাভ হবে। অতএব গীতা ২/৪৫ শ্লোকে যদি প্রকৃতির বিদ্যাকে জানতে বারণ করে, তাহলে তো এই বৈষ্ণবরা নিজেই গীতাকে স্ববিরোধী ও মিথ্যা শ্লোকের গ্রন্থ বানিয়ে দিচ্ছে। 



#শেষে এটাই বলবো যে গীতা গীতা করে লাফানো এবং বেদ কে তুচ্ছ মনে করা প্রাণীদের উদ্দেশ্যে বলবো যে আপনারা গীতা কে আগে ভালো করে পড়ুন। গীতা ঠিক করে না পড়ে ও বুঝে লম্ফঝম্প করা বন্ধ করুন! আপনাদের বৈষ্ণবদের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে এর জন্য নিজেদের বিশাল ভাবার কিছু নাই, জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেই যে তা সত্যের পথ এমনটা মনে করা ভ্রম মাত্র। বর্তমান সময়ে খ্রিষ্টান মতবাদের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি তাদের সারা বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি খ্রিস্টান রয়েছে। তাই কেউ যদি বলে খ্রিস্টানরা সত্যের পথে আছে এমনটা ভাবা মুর্খতাপূর্ণ। ধর্ম মিথ্যা বা অন্ধবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে চলে না, যা অযৌক্তিক, মিথ্যা তা ধর্মের অংশ হতে পারে না। স্রষ্টা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি তার তৈরি ধর্মও সত্য। 



নমস্তে

সত্যমেব জয়তে

কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্

সনাতন ধর্মের জয় হোক

জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩



0 Reviews:

Post a Comment