সাত্ত্বিক, রাজসিক, তামসিক মনুষ্যের লক্ষণ
জীবাত্মা এবং পরমাত্মা ইতর যে সকল পদার্থ এই জগতে রয়েছে তার মূল হলো অব্যক্ত প্রকৃতি যার মধ্যে সত্ত্ব রজঃ তমঃ এই তিন গুণ সমান ভাবে বিদ্যমান রয়েছে। এই তিন গুণের প্রকৃতিই হলো এই জগৎ সৃষ্টির উপাদান পদার্থ এবং পরমাত্মা হলেন জগতের নির্মাণ কর্তা। যেহেতু এই জগতের প্রতিটি বস্তুর মধ্যে প্রকৃতির এই তিন গুণ বিদ্যমান রয়েছে সেহেতু মনুষ্যের শরীরের মধ্যেও এই তিন গুণ বিদ্যমান রয়েছে। মনুষ্যের মধ্যে কিরূপ লক্ষণ দেখা দিলে বোঝা সম্ভব যে তার সত্ত্ব, রজঃ, বা তমঃ গুণের প্রধানতা রয়েছে, এই বিষয়ে ঋষি মনু সুন্দর ভাবে আলোচনা করেছেন।
মনুস্মৃতি ১২ অধ্যায়
যখন আত্মায় জ্ঞান থাকে তখন সত্ত্বগুণ, যখন আত্মায় অজ্ঞানতা থাকে তখন তমঃ গুণ, যখন আত্মায় রাগ-দ্বেষ থাকে তখন রজোগুণ প্রবল বলে জানবে। প্রকৃতির এই তিন গুণ সাংসারিক যাবতীয় পদার্থের মধ্যে ব্যাপ্ত হয়ে আছে।।২৬।।
যখন আত্মায় প্রসন্নতা থাকে, মন প্রসন্ন এবং প্রশান্ত অবস্থার ন্যায় শুদ্ধ ভাবযুক্ত থাকে, তখন বুঝতে হবে যে সত্ত্বগুণ প্রধান, রজঃ ও তমোগুণ অপ্রধান রয়েছে ৷৷ ২৭।।
যখন আত্মা ও মন দুঃখিত ও অপ্রসন্ন হয়ে বিষয়ে ইতস্ততঃ বিচরণ করে, তখন বুঝতে হবে যে, রজোগুণ প্রধান এবং সত্ত্ব ও তমোগুণ অপ্রধান রয়েছে ।।২৮
আত্মা মোহযুক্ত, খারাপ ভালো বিষয়ে জ্ঞান শূন্য, কোনো প্রকার বিচারে অস্পষ্টতা ইন্দ্রিয়ের বিষয়ে আসক্ত তর্ক বিতর্ক শূন্য কোনো বিষয়ে স্পষ্ট জানতে অক্ষম এমন আচরণকারীর মধ্যে তমোগুণের প্রধানতা রয়েছে।।২৯।।
বেদ অভ্যাস, ধর্ম অনুষ্ঠান, জ্ঞান উন্নতি, পবিত্রতা লাভের ইচ্ছা, ইন্দ্রিয় নিগ্রহ, ধর্মক্রিয়া এবং আত্মচিন্তন হলো সত্ত্বগুণের লক্ষণ।।৩১।।
যখন রজোগুণের উদয় এবং সত্ত্ব ও তমোগুণের আবির্ভাব ঘটে, তখন কার্য আরম্ভে অরুচি, ধৈর্য্যত্যাগ, অসৎ কর্ম- গ্রহণ এবং নিরন্তর বিষয়ভোগে প্রীতি হয়ে থাকে। তখনই বুঝতে হবে যে আমার মধ্যে রজোগুণ প্রধানরূপে কাজ করছে।।৩২।।
যখন তমোগুণের আবির্ভাব এবং অন্য দুই গুণের অন্তৰ্ভাব ঘটে, তখন অত্যাধিক লোভ অর্থাৎ সকল পাপের বৃদ্ধি পায়, অত্যাধিক আলস্য ও নিদ্রা, ধৈর্য্য নাশ, ক্রূরতা জন্মে, নাস্তিক্য অর্থাৎ বেদ ও ঈশ্বরের প্রতি অশ্রদ্ধা জন্মে, অন্তঃকরণের বিভিন্ন বৃত্তি ও একাগ্রতা, অভাব যার তার নিকট ভিক্ষা করা, প্রমাদ অর্থাৎ মদ্যপান আদিতে বিশেষ আসক্তি জন্মে তখন বুঝতে হবে যে আমার মধ্যে তমোগুণ প্রধান রূপে কাজ করছে।।৩৩।।
কোনো কর্ম করতে এবং করার ইচ্ছে হলে নিজের আত্মায় লজ্জা, সংশয় ও ভয় অনুভব হয় তখন বুঝতে হবে যে আত্মার মধ্যে তমোগুণের প্রাবল্য হয়েছে।।৩৫।।
যখন জীবাত্মা কর্ম দ্বারা ইহলোকে বিপুল য়শ লাভের আকাঙ্ক্ষা করে এবং দরিদ্র হয়েও প্রসিদ্ধি লাভের জন্য চারণ, ভাট আদিকে দান দেওয়া ত্যাগ করেনা, তখন বুঝতে হবে আমার আত্মায় রজোগুণ প্রবল হয়েছে।।৩৬।।
যখন মনুষ্যের আত্মা সর্বত্র জ্ঞানলাভের ইচ্ছা করে, নানান গুণ গ্রহণ করে থাকে, সৎকর্মে লজ্জা অনুভব করেনা এবং সৎকর্মে প্রসন্ন হয় অর্থাৎ ধর্ম আচরণে রুচি থাকে, তখন বুঝতে হবে আমার মধ্যে সত্ত্বগুণ প্রবল হয়েছে।।৩৭।।
তমোগুণের লক্ষণ কাম, রজোগুণের লক্ষণ অর্থসংগ্রহের ইচ্ছা এবং সত্ত্বগুণের লক্ষণ ধর্ম সেবা। তমোগুণ অপেক্ষা রজোগুণ এবং রজোগুণ অপেক্ষা সত্ত্বগুণ শ্রেষ্ঠ।।৩৮।।
কেউ যদি এমন ভেবে থাকে যে সাত্ত্বিক ব্যক্তির শরীরে শুধুমাত্র সত্ত্ব গুণ রয়েছে বা তামসিক ব্যক্তির শরীরে শুধুমাত্র তমঃ গুণ রয়েছে, তাহলে সেটা ভাবা ভুল হবে।প্রকৃতির মধ্যে এই তিন গুণ সমভাবে রয়েছে কাজেই মনুষ্যের শরীরের মধ্যেও এই তিনগুণ সমভাবে রয়েছে। কিন্তু যার শরীরে যখন সত্ত্বগুণ বা রজঃ গুণ বা তমঃ গুণ প্রধান রূপে কাজ তখন উক্ত প্রকারের লক্ষণ গুলো দেখা দেবে।
সত্যার্থ প্রকাশ সপ্তম সমুল্লাস
সকলকে নমস্তে
কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্🚩🚩
0 Reviews:
Post a Comment