google01b5732cb2ec8f39 ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কেন করা হয় ? ~ আর্যবীর आर्यवीर aryaveer

Recent News

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কেন করা হয় ?

 

প্রার্থনা কেন করা হয় ? 


আমাদের সমাজে এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক যারা আজও বিশ্বাস করে যে ঈশ্বরের কাছে কিছু প্রার্থনা করলেই তা সফল হয়। প্রায় সকল গ্রামে গেলেই শোনা যায় যে অমুক কালী, অমুক শিব খুবই আদি জাগ্রত, তাদের কাছে যা প্রার্থনা করবে তা সফল হবেই হবে। এইরূপ মান্যতা সম্পূর্ণ রূপে একপ্রকার অন্ধবিশ্বাস মাত্র, এতে কোনো সত্যতা নেই, এই বিষয়ে নীচে চর্চা করা হবে। এখন প্রশ্ন রয়ে যায় যে এগুলো যদি মিথ্যা হয় তাহলে বেদে কেন প্রার্থনা বিষয়ক নানান মন্ত্র রয়েছে ? ঋষি দয়ানন্দ প্রার্থনা বিষয়ে বলেছেন 'প্রার্থনা করলে নিরভিমানতা, উৎসাহ এবং সাহায্য লাভ হয়।' [সত্যার্থ প্রকাশ, সপ্তম সমুল্লাস] 


অতএব ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে অভিমান রহিত হয়, নিজের মধ্যে উৎসাহ লাভ ও সাহায্য লাভ হয়। সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি অনেক আছে যারা নিজের অভিমানের জন্য জরুরি অবস্থাতেও অন্যের কাছে কিছু চাইতে পারে না। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত শুদ্ধ চিত্তে পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তাহলে আমাদের মধ্য থেকে অভিমান দূর হয়ে যাবে। প্রার্থনা বিষয়ক মন্ত্র-


বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরা সুব।য়দ্ভদ্রম্ তন্নঽআ সুব।। 

[য়জুর্বেদ ৩০/৩]


এই মন্ত্রে বলা হয়েছে যে পরমেশ্বর যেন আমাদের মধ্যে থেকে দুষ্ট গুণ দূর করেন এবং যা কল্যাণকর তা দান করেন। আমরা পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি যে আমাদের মধ্যে থেকে সকল দুর্গুণ নষ্ট হোক এবং যা যা কল্যাণকর তা তা যেমন আমাদের দান করেন। যেমন এক নিষ্ঠাবান সন্তান তার পিতা মাতার কাছে প্রার্থনা করে যে সে যেন সত্যের পথে চলে, অন্যের মঙ্গল করতে পারে এবং কখনোই অধর্ম আচরণ না করে। সন্তানের এইরূপ কথা শুনে পিতা মাতা তাকে তার সেই পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা দিয়ে থাকে। যা থেকে সেই সন্তানের মধ্যে একপ্রকার উৎসাহ ও সাহায্য লাভ হয়। ঠিক তেমনি ঈশ্বরের আছে ধর্ম অনুকূল প্রার্থনা করলে উৎসাহ লাভ হয়ে থাকে। 


ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন -'যে ব্যক্তি যে বিষয়ে প্রার্থনা করবে, তার উচিত সেইরূপ আচরণ করা। কেউ যদি সর্ব উত্তম বুদ্ধি লাভ করার জন্য পরমেশ্বরের নিকট প্রার্থনা করে, তাহলে তাকে সেই বিষয়ে যথা সম্ভব প্রযত্ন করতে হবে। অর্থাৎ নিজ পুরুষার্থের অতিরিক্ত প্রার্থনাও করা উচিত। বেদে বলা হয়েছে- 


কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ। [য়জুর্বেদ ৪০/২] 

এখানে পরমেশ্বর আজ্ঞা দিচ্ছেন যে মনুষ্য যেন শত বছর পর্যন্ত অর্থাৎ আজীবন কর্ম করতে করতে জীবন ধারণের ইচ্ছে করে। কখনই অলস যেন না হয়। 


দেখুন, সৃষ্টিতে যত প্রাণী ও অপ্রাণী  রয়েছে, তারা সকলেই নিজ নিজ কর্মে এবং সচেষ্ট থাকে। পিপীলিকা আদি সদা কর্মে রত থাকে, পৃথিবী আদি ভ্রমণ করে, বৃক্ষ আদি বৃদ্ধি ও হ্রাস পায়। এই সকল দৃষ্টান্ত মনুষ্যেরও গ্রহণ করা উচিত। যেরূপ পুরুষার্থে রত থাকা ব্যক্তির সহায়তা অন্যরা করে থাকে, সেইরূপ পরমেশ্বরও ধর্মপথে পুরুষার্থকারীর সহায়তা হয়ে থাকে।  যেমন কর্মঠ ব্যক্তিদের যেমন সেবক রূপে নিযুক্ত করা হয়, অলস ব্যক্তিকে করা হয়না, যেরূপ দর্শন করতে ইচ্ছুক এবং যার নেত্র রয়েছে সেই পুরুষকে কোনো বস্তু দেখানো যায়, অন্ধকে নয়। সেইরূপ পরমেশ্বর সকলের উপকার কর্মে সহায়ক হয়, হানিকারক কর্মে নয়। যেমন কেউ যদি বলে গুড় মিষ্টি, এই কথা বলা মাত্র সে যেমন গুড় প্রাপ্ত হয়না, বা গুড়ের স্বাদ পায়না, কিন্তু যত্নবান পুরুষ শীঘ্র অথবা বিলম্বে হোক, একসময় গুড় পেয়েই থাকে।'


অতএব বলা যায় যে ঈশ্বরের কাছে কোনো বিষয়ে প্রার্থনা করলেই সেটা সফল হয়ে যাবে এমনটা কিন্তু নয়। এই বিষয়ে আরও একটা উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করছি যেমন- কোনো এক ব্যক্তি মনে করলেন যে এই উক্ত 'বিশ্বানি দেব' মন্ত্র জপ করলেই তার মধ্যে থেকে সকল দুষ্ট গুণ দূর হয়ে যাবে। সেই ব্যক্তি এই মন্ত্র জপ করেন ঠিকই কিন্তু তিনি নিজের কুকর্ম ত্যাগ করার কোনো প্রকার প্রচেষ্টা করেন না। তাহলে কি কোনো লাভ আছে ? নাহ নেই। আমরা যেমন দুষ্টগুণ দূর করার ইচ্ছা প্রকাশ করে পরমাত্মার কাছে প্রার্থনা করছি ঠিক সেই অনুযায়ী আমাদের এমন কর্মও করতে হবে, যার মাধ্যমে সকল দুষ্ট গুণ যেন দূর হয় এবং কল্যাণকর গুণ লাভ হয়। তাই কোনো ব্যক্তি যদি এই মন্ত্র প্রতিদিন কয়েক হাজারবার জপ করার পরেও নিজের কুকর্ম ত্যাগ না করে তাহলে, এই মন্ত্র জপ করার কোনো লাভ নেই। 


ঈশ্বরের কাছে কোনো প্রার্থনা করলেই যদি তা সফল হতো, তাহলে এই সংসারে কেউই অসুখী হতো না, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে সকলেই নিজের সমস্ত কামনা পূরণ করে নিতো। আমাদের পশ্চিম বাংলার, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় একটা বিখ্যাত মাকালী রয়েছে যার নাম বোল্লা কালী। এই মা কালীর পূজার সময় হাজার- হাজার পাঠা বলি হয়ে থাকে, বোল্লা কালীর মূর্তিতে কয়েক কেজি সোনার গহনাও দেওয়া হয়। একবার ভেবে দেখুন তো এগুলো কারা দেয় ? এগুলো তারাই দেয় যারা মনে করে বোল্লা কালী খুবই জাগ্রত এবং মাকালীর কাছে  প্রার্থনা করার পর যাদের কামনা সফল হয়েছিল। এই সকল ব্যক্তিরা ভুলেই যায় যে সে নিজের কর্মের জন্য সফল হয়েছে, মা কালীর কাছে প্রার্থনা করার কারণে নয়। অনেক ব্যক্তি এমনও আছে যারা এই মা কালীর কাছে অনেক প্রার্থনা করা সত্ত্বেও তাদের কামনা পূর্ণ হয়নি। তাহলে এইবার কি বলবেন ? নাস্তিকেরা তো ঈশ্বরই মানেনা, কারোর কাছে প্রার্থনা করা তো দূরের কথা, তাহলে তারা কি নিজের কর্মে সফল হয় না ? যদি একজন মুসলিম বা খ্রিস্টান বা ইহুদি বা নাস্তিক ব্যক্তি সৎ হয় এবং তার সাথে যদি কোনো প্রকারের অন্যায় না হয় তাহলে সেই ব্যক্তি অবশ্যই কোনো একদিন নিজ কর্মের সফলতা অর্জন করবেই। যা কর্মের নিয়ম। অতএব ঋষি দয়ানন্দ প্রার্থনা বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা যথার্থ। 


নমস্তে।

0 Reviews:

Post a Comment