google01b5732cb2ec8f39 গৌতম অহল্যা ও ইন্দ্রের বাস্তবিক ব্যাখ্যা ~ আর্যবীর आर्यवीर aryaveer

Recent News

গৌতম অহল্যা ও ইন্দ্রের বাস্তবিক ব্যাখ্যা

গৌতম-অহল্যা ও ইন্দ্রের বাস্তবিক ব্যাখ্যা ব্রাহ্মণ শাস্ত্র অনুসারে





 রামায়ণে এবং পৌরাণিকদের কথিত পুরাণে গৌতম ঋষির স্ত্রী অহল্যা ও দেবরাজ ইন্দ্রের বিষয়ে একটা ব্যভিচারের কাহিনী রয়েছে, যা আমরা অনেকেই জানি, আসুন দেখি রামায়ণ থেকে এই কাহিনি__


বাল্মীকি রামায়ণ, বালকাণ্ড, ৪৮ সর্গে এই কাহিনী রয়েছে, আমি সংক্ষেপে বলছি- একদিন গৌতম ঋষি আশ্রম থেকে দূরে কোথাও গিয়েছিলেন, আশ্রমে গৌতম ঋষির পত্নি অহল্যা একা ছিলেন, সেই সুযোগে দেবরাজ ইন্দ্র গৌতম ঋষির রূপ ধারণ করে আশ্রমে প্রবেশ করেন এবং তিনি অহল্যার সাথে সহবাস করতে চান। ইন্দ্র যে গৌতমের রূপ ধরেছেন সেটা অহল্যা বুঝতে পারা সত্ত্বেও প্রসন্ন পূর্বক ইন্দ্রের সাথে মৈথুন করেন। তখন অহল্যা বলেন হে ইন্দ্র আমার মনোরথ পূরণ হয়ে গেছে এখন আপনি চলে যান। গৌতম ঋষি যখন নিজের আশ্রমে প্রবেশ করেন তখন দেবরাজ ইন্দ্রকে সেখান থেকে বেরিয়ে যাওয়া দেখতে পান। তারপর গৌতম ঋষি এই অপকর্মের বিষয়ে জানতে পেরে খুবই ক্রোধিত ভাবে ইন্দ্র কে অভিশাপ দেন যে তার অণ্ডকোষ যেন খসে পড়ে যায়, অতঃপর ইন্দ্রের অণ্ডকোষ মাটিতে পড়ে গেল এবং অহল্যা কে অভিশাপ দিলেন যে তিনি যেন ওই কুটিরে অদৃশ্য হয়ে থাকেন হাজারও বছর। 

একটু ভেবে দেখুন তো এই সমস্ত কাহিনীর কি কোনো সত্যতা থাকা সম্ভব ? এই সমস্ত কাহিনী বানিয়ে আমাদের সনাতনীরা কি নিজেদের ঋষি, দেবতাদের চরিত্র কে কুলষিত করেছে নাকি উজ্জ্বল করেছে ? প্রায় হিন্দুরা এই সমস্ত কাহিনী দেখে বলে থাকে যে 'এগুলো মোল্লারা বিকৃত করেছে, এগুলো সব মিথ্যা' হা এই সমস্ত কাহিনী অবশ্যই মিথ্যা, কিন্তু এগুলো মোল্লারা বানিয়েছে এর কোনো প্রমাণ আছে ? কিছুক্ষণের জন্য মানলাম যে এগুলো মোল্লারা বানিয়েছে আর আপনারা তার প্রমাণ পেয়েছেন, তা আজ পর্যন্ত রামায়ণ থেকে এই ইন্দ্র অহল্যার অপকর্মের কাহিনীটি বাদ দেওয়া হলো না কেন ? মুখে অনেকেই বলবে এগুলো বিকৃত, কিন্তু ঠিক কোনটা সেটাও বলার কেউ নেই আর আজ পর্যন্ত এই সমস্ত কাহিনী যা ঋষি, মুনি, দেবতাদের কলঙ্কিত করা হয়েছে এমন কাহিনী রেখেই দেওয়া হয়েছে ঋষিকৃত গ্রন্থে, কারণ কি ?


ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী বৈদিক শাস্ত্রের তথ্য সহকারে এই কাহিনীর প্ৰকৃত ব্যক্তিটি দিয়েছেন। কথিত পন্ডিতরা ব্রাহ্মণ শাস্ত্র কে ঠিক ভাবে বুঝতে না পেরে মূর্খতা বশত এই সমস্ত কাহিনী বানিয়েছে। এইবার আসুন দেখি ইন্দ্র, অহল্যা ও গৌতম আসলে কি______


তত্ৰেদৃশ্যো মিথ্যৈব  কথাঃ সন্তি। কুতঃ ? আসামপ্যলঙ্কারার্থতাৎ। তদ্যথা - ইন্দ্রাগচ্ছেতি। গৌরাবস্কন্দিন্নহল্যায়ৈ জারেতি। তদ্যান্যেবাস্য চরণানি তৈরেবৈনমেতৎপ্রমুমোদয়িষতি ।। শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/৩/৪/১৮


রেতঃ সোমঃ।। শতপথ ব্রাহ্মণ ৩/৩/২/১ 


সূর্য্যরশ্মিশ্চন্দ্রমা গন্ধর্ব।। যজুর্বেদ ১৮ /৪০


 ইত্যপি নিগমো ভবতি। সোহপি গৌরুচ্যতে।। নিরুক্ত ২/৬


 জার আ ভগম্ জারঃ ইব ভগম্। আদিত্যোহ ত্রজার উচ্যতে, রাত্রের্জরয়িতা।। নিরক্ত ৩/১৬


এষ এবেন্দ্রো য় এষ তপতি। শতপথ ব্রাহ্মণ  ১/৬/৪/১৮



 এখানে ইন্দ্রোগচ্ছতি ইত্যাদির তাৎপর্য্য এই যে, ইন্দ্ৰ শব্দে সূৰ্য্য বুঝায়, এবং রাত্রিকে অহল্যা বলা হয়েছে, তথা চন্দ্রমা গৌতম সাদৃশ্য হয়ে থাকেন। এস্থানে রূপকালঙ্কার মতে রাত্রিকে চন্দ্রমার স্ত্রীরূপে বর্ণন করা হয়েছে। চন্দ্রমা আপনার স্ত্রীর সহিত রাত্রিকালে সকল প্রাণীর আনন্দদায়ক হয়ে থাকে। এই রাত্রিকালের জার আদিত্য অর্থাৎ সূৰ্য্য হয়ে থাকে, কারণ সূর্যের উদয় হলেই, রাত্রি অন্তর্ধান হয়ে যায় অর্থাৎ চন্দ্রমাকে ছেড়ে দেয়, বিশেষতঃ সূর্য্যকে রাত্রীর জার এইজন্য বলা যায় যে, সূর্য্যের আগমনেই চন্দ্রমাকে ছেড়ে দেয়, সূর্যকে রাত্রীর জার এইজন্য বলা যায় যে, সূর্য্যের আগমনেই চন্দ্রমার সহিত রাত্রির শৃঙ্গার ভঙ্গ বা নষ্ট করে দেয়, এইজন্য রাত্রি চন্দ্র ও সূর্য্য, স্ত্রীপুরুষ ও জারকর্তা রূপে রূপকালঙ্কার দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। যেরূপ স্ত্রীপুরুষ একত্রে থাকে, সেইরূপ রাত্রি ও চন্দ্রমা একত্রিত হয়ে থাকে। চন্দ্রমাকে গৌতম এইজন্য বলা যায় যে উক্ত চন্দ্রমা অত্যন্ত বেগশালী এবং রাত্রিকে অহল্যা এই কারণে বলা যায় যে ঐ রাত্রিতে দিবস লয় হয়ে যায়, পুনরায় সূর্য্যই রাত্রির নিবৃত্তকারী, এজন্য সূর্য্যকে রাত্রির জার বলা যায়। এইরূপ চমৎকার রূপকালঙ্কারকে অল্পবুদ্ধি ও বিদ্যাহীন পুরুষেরা নষ্ট ও শ্রীভ্রষ্ট করে তার অনর্থ প্রকাশ করে। এজন্য সজ্জনমাত্রেই পুরাণোক্ত মিথ্যা ও অনর্থযুক্ত বাক্য গুলিকে মূলের সহিত যেন ত্যাগ করেন।


এই হলো বৈদিক শাস্ত্রে থাকা ইন্দ্র অহল্যার গৌতমের প্রকৃত ব্যাখ্যা। আশাকরি সকলে বুঝতে পেরেছেন। 


নমস্তে



0 Reviews:

Post a Comment