google01b5732cb2ec8f39 আর্যবীর आर्यवीर aryaveer

Recent News

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

জগৎ স্রষ্টা কি যা ইচ্ছে তাই করেন এবং পারেন ?

 জগৎ স্রষ্টা কি যা ইচ্ছে তাই করেন এবং পারেন ? 



প্রশ্নঃ ঈশ্বর কি নিয়ম ব্যতীত কিছু করেন ? ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তাই যা ইচ্ছে করতে পারে, ঈশ্বরের কর্ম কোনো নিয়মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় ?


বর্তমান সমাজে যত সংখ্যক আস্তিক রয়েছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই অন্ধবিশ্বাসী। তারা মনে করেন ঈশ্বর সর্বশক্তিমান তাই সে যা ইচ্ছে করতে পারেন, যে কোনো অসম্ভব কে সম্ভব করা স্রষ্টার কাছে কোনো ব্যাপার নয়।

#পৌরাণিক সনাতনীদের মান্যতাঃ- পৌরণিকদের মধ্যে নানান ভিন্ন ভিন্ন মান্যতা রয়েছে। আমি সেই সব কিছুর বিষয়ে আলোচনা না করে যে অবতারবাদ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় সেই বিষয় নিয়ে আজ আলোচনা করবো। অবতারবাদকে সনাতনীরা অন্ধের মতন বিশ্বাস করে থাকে কেননা এটা তাদের ধর্ম গ্রন্থ কথিত ১৮+ পুরাণ কাহিনী অনুকূল। এই মান্যতা অনুযায়ী যখন এই জগতে অধর্ম বেড়ে যায় তখন ঈশ্বর অবতার হয়ে ধর্মের স্থাপন করে এবং অধর্ম ধ্বংস করে। পৌরাণিক শ্রেষ্ঠ ধর্ম গ্রন্থের মধ্যে একটি হলো ভাগবত পুরাণ। আর এই ভাগবত পুরাণ প্রথম স্কন্ধ/ তৃতীয় অধ্যায়/ ৬-২৫ শ্লোক পর্যন্ত ২২ অথবা ২৫ টি অবতারের কথা বলা হয়েছে। কলিযুগে মাত্র দুইটা অবতার- বুদ্ধ ও কল্কি। কলির শেষের দিকে কল্কি অবতার আসবে অধর্ম কে বিনাশ করতে। শুধু বৈষ্ণবদের মধ্যেই নয়, শৈব অথবা শাক্তদেরও নানান অবতার রয়েছে। কেউ যদি বৈদিক শাস্ত্র B ঈশ্বর কে নিরাকার বলে দাবি করে তাহলে তার কথার উত্তরে বলা হয় যে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান, তাই সে সব কিছুই করতে পারে। যদি সব কিছু করতে না পারে তাহলে সে কিসের সর্বশক্তিমান ? এমন তর্ক দিয়ে থাকে পৌরাণিক বন্ধুরা।


#ইসলামের মান্যতাঃ- কুরআন অনুযায়ী আল্লাহ সব কিছুই করতে পারে। কুরআন সূরাঃ- ২ বাকারাহ/ ২৪৩ অনুযায়ী আল্লাহ মৃত ব্যক্তিদের জীবিত করতে পারে। কুরআন ৭/১৩৩ অনুযায়ী আল্লাহ নিজেই ফেরাউনের আনসারীদের ওপর তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্ত প্রভৃতি দিয়ে আক্রমণ করেছিল। কুরআন ৭/৬৪ এ আল্লাহ বললো অতঃপর তারা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। আমি তাকে এবং নৌকাস্থিত লোকদেরকে উদ্ধার করলাম এবং যারা মিথ্যারোপ করত, তাদেরকে ডুবিয়ে দিলাম। নিশ্চয় তারা ছিল অন্ধ। কুরআন ১৩/২৭ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন এবং যে, মনোনিবেশ করে, তাকে নিজের দিকে পথপ্রদর্শন করে। কুরআন ২/৬৫ অনুযায়ী আল্লাহর কথা শুনেনি বলে তাদেরকে ঘৃণিত বাঁদর বানিয়ে দিয়েছিল। আল্লাহ যখন বলেনকুন ফাইয়াকুন অর্থাৎ 'হয়ে যাও' এমন বলার সাথে সাথে হয়ে যায়।কুরআন ৩/৪৭,৫৯। কুরআন পড়লেও বোঝা যায় আল্লাহ সব কিছুই করতে পারে। 


#সমীক্ষাঃ বলা যায় যে পৌরণিকদের মান্য ঈশ্বর হোক আর কুরআনের আল্লাহ হোক, স্রষ্টা সব কিছুই করতে পারে, তার কোনো নিয়ম নেই, সে অসম্ভব কে সম্ভব করতে পারে কারণ সে সর্বশক্তিমান। কোনো এক মতবাদের সত্যতা যাচাই করতে গেলে সেই বিষয়ে যৌক্তিক বিচার করা আবশ্যিক, নয়তো কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা তা বোঝা সম্ভব নয়। ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার সেই বিষয়ে আজ যাবো না। পৌরাণিকদের মধ্যে এক মহান কুযুক্তি প্রচলিত রয়েছে যে 'ঈশ্বর যদি রূপই না ধারণ করতে পারে তাহলে সেই কিসের সর্বশক্তিমান ? ঈশ্বর রূপ ধারণ করে অধর্ম বিনাশ করে'। পৌরাণিক বন্ধুদের এই কুযুক্তির বিরুদ্ধে আমার যুক্তি হলো এই যে আপনার মান্য ঈশ্বর রূপ ধারণ না করলে যদি অধর্ম ধ্বংসই করতে না পারে তাহলে সে কিসের সর্বশক্তিমান ? যদি এটাই সত্য হয় যে পৃথিবীতে যখন অধর্ম বেড়ে যায় ধর্মের গ্লানি হয় তখন ঈশ্বর অবতার হয়ে আছে অধর্ম ধ্বংস করতে এবং ধর্ম স্থাপন করতে। তাহলে জিজ্ঞাসা চলে আসে বর্তমান সময়েও তো ধর্মের গ্লানি অবশ্যই হচ্ছে [ সারা বিশ্বে প্রায় ১১০ কোটি লোকেরা নিজেদের সনাতনী বলে বাদবাকি কেউই সনাতন ধর্ম মানেনা সেই অর্থে পূর্বের চেয়ে এখন অধর্মের বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক বেশি] কিন্তু এখন একটাও অবতার নেই কেন ? যখন ভারতে ইসলাম শাসন ও খ্রিস্টান শাসন হয় প্রায় কয়েকশো বছর ধরে তখন কি ধর্মের গ্লানি হয়নি ? অবশ্যই হয়েছিল। কিন্তু একটাও অবতারের দেখা  যায়নি কেন ? যিনি অবতীর্ণ হয়ে অধার্মিকদের ধ্বংস করেছে। যদি বলা হয় 'এখন অবতার আসবে না কলির শেষে কল্কি অবতার আসবে' তাহলে পুনরায় প্রশ্ন তৈরি হবে যে আপনাদের ঈশ্বর তো সব কিছুই করতে পারে, আপনাদের মান্য ঈশ্বর তো কোনো নিয়মের মধ্যে আবদ্ধ নয় কিন্তু তাকেই আবার নিয়মের মধ্যে বেঁধে দেওয়া হচ্ছে কেন ? কলিযুগের মাঝে যখন যখন অধর্মের বৃদ্ধি পাবে তখন সেগুলোকে ধ্বংস করার দায়িত্ব আপনাদের ঈশ্বর নেয়নি ? ভাগবত পুরাণ ৩ স্কন্ধের ১৩ অধ্যায় পড়লে বোঝা যায় বরাহ অবতার নিজের দাঁত দিয়ে পৃথিবীকে জলের নিচ থেকে শুরু উপরে তুলেছিল অর্থাৎ বলা যায় যে বরাহ অবতার সুবিশাল রূপ ধরেছিল। এই পৌরাণিক ঈশ্বরের কি এই বুদ্ধিও নাই যে সে যদি বর্তমান সময়ে বরাহ অবতারের সাদৃশ্য কোনো এক রূপ ধারণ করে তাহলেই তো অধর্মের বিনাশ হবে এবং সকলেই পৌরাণিক মান্যতা গ্রহণ করবে, তাই না ? যে ঈশ্বর এতবার অবতার হয়ে আসে অধর্ম ধ্বংস করতে সে ঈশ্বর কি চায়না যে বিশ্বের সকলে তাকে মেনে চলুক ? কিন্তু সে কোনোভাবেই রূপ ধারণ করছে না। এমন নানান যৌক্তিক জিজ্ঞাসার কোনো সমাধান পাওয়া যায় না, কারণ এই অবতারের মান্যতা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কল্পিত। বিনা যুক্তি তর্কে বিনা বিচারে এই সমাজ অলৌকিক, চমৎকার বিষয়কে ধর্মের অংশ খুবই সহজে মেনে নেয় তাই এই সুযোগ বুঝে সমাজের ভণ্ড লোকেরা ঋষি মুনিদের নামে বই লিখে ছিল, যার কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই। উদাহরণ স্বরূপ বলছি- বর্তমান সময়ে হিন্দু সমাজের একজন বিখ্যাত ধার্মিক হল সৎগুরু। সে যদি এখন এই ধরনের একটা অলৌকিক বই লেখে যে মোদী জি ঋষি ছিল, সে একবার গঙ্গা নদীকে পান করে নিয়েছিল, [ যেমনটা অগস্ত্য ঋষি সমুদ্র পান করেছিল] সে ভগবান ব্রহ্মার অবতার ছিল ইত্যাদি। এমন বই বর্তমান সময়ে কেউ বিশ্বাস না করলেও আজ থেকে ৫০০ বছর পর এমন ব্যক্তি অনেক বের হবে যারা সৎ গুরুর এই বইকে অন্ধের মতন বিশ্বাস করবে এবং মোদী জিকে ব্রহ্মার অবতার ভাববে। ঠিক এমনই ভাবে যোগী, ঋষি, মহর্ষি, রাজা ইত্যাদি মহাপুরুষদেরকে ঈশ্বর বানিয়ে এই সকল কপোলকল্পিত পুরাণ কাহিনী তৈরি হয়েছে, যার মধ্যে কিছু কিছু বিষয়ের সত্যতা রয়েছে, যেমনটা মুসলিমদের কুরআনেও ভালো ভালো কিছু বাণী আছে। বর্তমানের আর একটা হাস্যকর বিষয় এই যে মাত্র শত বছরের মধ্যেই অনুকূল ঠাকুর এখন ঈশ্বর হয়ে গেছে, তার এক চ্যালা দেবী দুর্গার থেকেও শ্রেষ্ঠ বলেছে অনুকূলকে। এইভাবে চলতে থাকলে পৌরাণিক সমাজে আগামী ৫০০ বছরের মধ্যে প্রায় এক ডজন ঈশ্বর তৈরি হয়ে যাবে। 


#ওদিকে কুরআনের আল্লাহও সব কিছু পারে যারা আল্লাহ কে মানেনা তাদেরকে সে নিজেই শাস্তি দেয়, আল্লাহ মানুষ কে বাঁদরও বানিয়ে দেয়। কিন্তু কুরআনে আল্লাহর যে সব লীলা খেলা রয়েছে তা কিন্তু বর্তমানে আল্লাহ করতে পারছে না। এমন কেন ? যিনি স্রষ্টা তিনি নিজেই শক্তি স্বরূপ, তার নিয়ম সনাতন বা নিত্য হবে। আল্লাহ পূর্বে যা করেছে তা বর্তমানে কেন পারছে না ? যে দেশে ইসলামের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেই জায়গা এখন শাসন করছে খ্রিস্টানরা। যারা কুরআন অনুযায়ী আহলে কিতাব এবং কাফেরও। উইঘুরে মু*সলিমদের ওপর এতো অত্যাচার করছে আল্লাহ কিছুই করতে পারছে না কেন ? ফিলিস্তিনের ইহুদীরা মু*সলিমদের দাস বানিয়ে রেখেছে তবুও আল্লাহ মৌন কেন ? কিছু মুসলিমরা এই সকল প্রশ্নের উত্তরে বলে থাকে যে আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছে। আরে ভাই মুস*লিমরা মার খাচ্ছে আর আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছে মানে ? বিনোদন পূর্ণ কথা বলার আর কোনো জায়গা পাওনা নাকি ? কুরআন ৩৩/২৫এ আল্লাহ বলছে "যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যথেষ্ট হয়ে গেছেন। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী"। যে আল্লাহ বলছে যুদ্ধ করার জন্য মুসলিমদের জন্য সে নিজেই যথেষ্ট, সেই আল্লাহ মৌন হয়ে আছে মুস*লিমরা সারা বিশ্বে কাফেরদের হাতে মা*র খাচ্ছে তবুও কেন এখন ? কুরআন অনুযায়ী পূর্বে আল্লাহ যেমন পাপীদের বাঁদর বানিয়ে দিয়েছিল ঠিক তেমনি যদি বর্তমান সময়ে ইসলাম বিরোধী প্রায় কয়েকশ ব্যক্তিকে বাঁদর বানিয়ে দেয় তাহলেই তো সকলে ইসলাম গ্রহণ করবে, তাই না ? কিন্তু আল্লাহ সেটা করতে পারছে না। 


#অতএব বলা যায় যে পৌরাণিক মান্যতা এবং ইসলামিক মান্যতা অনুযায়ী ঈশ্বরের যে স্বরূপ আমি তুলে ধরে খণ্ডন করলাম, কে মান্যতার কোনো বাস্তবিক ভিত্তি নেই, যে বিষয়ে যৌক্তিক আলোচনা করলে নানান ভুল বেরিয়ে আসে। তা কখনোই প্রকৃত স্রষ্টার স্বরূপ হতেই পারে না। 


#সিদ্ধান্তঃ আধুনিক সময়ে ঋষি দয়ানন্দই এমন ব্যক্তি যিনি উক্তি বিষয়ে ঈশ্বরের সঠিক স্বরূপ কে তুলে ধরেছেন। ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন ঈশ্বর অবশ্যই সর্বশক্তিমান কারণ তিনি নিজের কর্ম অর্থাৎ জগৎ সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয় করতে এবং সর্ব জীবের পাপ পূণ্যের ফল দিতে অন্য কারোরই সহায়তা নেয় না অর্থাৎ তিনি এই সকল কর্ম করতে অন্য কোনো শক্তির সাহায্য নেয়না। কিন্তু পৌরাণিক, মুসলিম ইত্যাদিরা মনে করে ঈশ্বর সর্বশক্তিমান মানে সব কিছুই করতে পারে এই মান্যতা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। ঈশ্বর পাগল হতে পারে না, ঈশ্বর নিজেকে হত্যা করে অসংখ্য ঈশ্বর বানাতে পারে না, ঈশ্বর মূর্খ হতেও পারে না, ঈশ্বর অন্যায়কারী হতে পারেনা, ঈশ্বর নিজের সর্বব্যাপকতা ধ্বংস করে একদেশী হতেও পারেনা, ঈশ্বর মনুষ্য ইত্যাদি জীবের স্বতন্ত্রতা নষ্ট করতে পারেনা। ঈশ্বর আমাদের জীব দেহে ব্যাপক থেকে কর্ম করছেন ঠিকই কিন্তু তিনি জীবের [জীবাত্মা] কর্মে কোনো প্রকারের হস্তক্ষেপ করেনা, কেননা জীব কর্মে স্বতন্ত্র। স্রষ্টার যদি এইটাই কাজ হতো যে সমাজে থাকা অধার্মিকদের ধ্বংস করা তাহলে কখনোই নিরীহ নারীরা ধর্ষিত হতো না অথবা এই সমাজে কখনোই অসৎ ব্যক্তিদের মাধ্যমে সভ্য ব্যক্তিদের অত্যাচারিত হতে হতো না। এমন নানান কর্ম রয়েছে যা ঈশ্বরের গুণ কর্ম বিরোধী, যেগুলো তিনি করতে পারেন না। পদার্থ বিদ্যা অনুযায়ী আধুনিক বিজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করে যে প্রতিটি স্থূল- সূক্ষ্ম কণাও নিয়ম অনুযায়ী চলছে অর্থাৎ  বলা যায় যিনি এই জগৎ স্রষ্টা তিনি তার প্রতিটি কর্ম নিয়ম অনুযায়ী করে থাকেন। অসম্ভব কে সম্ভব করা তার কাজ নয়। অতএব যারা বলে থাকে স্রষ্টা সব কিছুই করতে পারে, তাদের মান্য ঈশ্বরের ওপর নানান প্রশ্ন তৈরি হয়, যার কোনো সমাধান সম্ভব নাই অর্থাৎ তারা নিজেদের ঈশ্বর কে ধোঁকাবাজ, মিথ্যাবাদী বানিয়ে দিচ্ছে মাত্র।


 নমস্তে


কিভাবে নিরাকার সর্বব্যাপক ঈশ্বরের পূজা করতে হবে ?

কিভাবে নিরাকার সর্বব্যাপক ঈশ্বরের পূজা করতে হবে ?



প্রায়ই সাকারবাদী পৌরাণিক বন্ধুরা জানতে চায় যে নিরাকার ঈশ্বরের পূজা কিভাবে করা উচিত। আমার জানা মতে 'পূজা' শব্দের অর্থ শ্রদ্ধা, সম্মান কে বোঝায়। বস্তু ভেদে শ্রদ্ধা, সম্মান নানান ধরণের হয়ে থাকে। যেমন আপনি আপনার বৃদ্ধ পিতা মাতার পূজা করেন অর্থাৎ এর মানে বুঝতে হবে আপনি যথাযথ ভাবে আপনার পিতা মাতাকে ভোজন, পোশাক, ঔষধ আদি দিয়ে সেবা যত্ন করেন। কিন্তু আপনি তা না করে যদি প্রতিদিন পিতা মাতার চরণে গড়াগড়ি করেন আর তাদের আবশ্যিক বস্তু সমূহ না দেন, তাহলে সেটা কখনোই পিতা মাতার পূজা বলে গণ্য হবেনা। মৃত পিতা মাতার পূজা কিভাবে করা যায় ? মৃত পিতা মাতার সকল সৎ গুণ-কর্ম-স্বভাবকে মনন করা এবং সেগুলোকে ধারণ করার চেষ্টা করাই হলো তাদের পূজা। কিন্তু তা না করে যদি মৃত মাতা পিতার ছবির সাথে জীবিত পিতা মাতার সাদৃশ্য পূজা *[সেই ছবি গুলোকে অন্ন, ফল ইত্যাদি খেতে দেওয়া, সেই ছবিকে জীবিত ব্যক্তির মতন ভেবে প্রণাম করা] করা হয় কিন্তু তাদের গুণ-কর্ম-স্বভাবকে ধারণ করার কোনো চেষ্টা না করা হয়, তাহলে কখনোই তা পূজা হতে পারে না। 

এইবার প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে কিভাবে ঈশ্বরের পূজা করা উচিত ? যে ঈশ্বর এই জগৎ তৈরির পূর্বেও বিদ্যমান ছিলেন এবং এই জগৎ ধ্বংসের পরেও বিদ্যমান থাকবেন, সেই অনন্ত শক্তিমান স্রষ্টা কি কোনো কিছু জাগতিক ভোজন করার দরকার পড়ে ? কিন্তু আমরা সেই স্রষ্টা কে অন্ন, ফল, পায়রা, মহিষ, পাঠা ইত্যাদি খেতে দেই। আমরা ভুলে যাই যে স্রষ্টা স্বয়ং শক্তিস্বরূপ; তারই শক্তিতে জগতের প্রতিটি পদার্থ গতিশীল হচ্ছে, তার কখনোই ভোজন করার দরকার পড়ে না, শুধু পরমাত্মার নয় জীবাত্মারও ভোজন করার দরকার পড়ে না। আমাদের ভোজন করতে হয় এই জীবকে চালানোর জন্য। এই দেহ ভোজন করে এবং মলত্যাগ করে কিন্তু পরমাত্মা এবং জীবাত্মা না ভোজন করে আর না মলত্যাগ করে। কিছু পৌরাণিক বন্ধুরা বলে থাকে যে আমরা স্রষ্টা কে খেতে দেইনা, আমরা আগে যেকোনো খাদ্যবস্তু স্রষ্টাকে অর্পণ করি তারপর আমরা তা গ্রহণ করি। এই পৌরাণিক বন্ধুরা ভুলে যায় যে স্রষ্টা কিন্তু সেই অর্পণ করা খাদ্যবস্তুর মধ্যেও বিরাজমান রয়েছেন, তিনিই খাদ্যবস্তুকে সৃষ্টি করেছেন, সেই খাদ্যবস্তুর প্রতিটি অনু পরমাণু আদি সূক্ষ্ম কণা গুলোকেও তিনিই সঞ্চালন করছেন এবং তাহলে যেকোনো বস্তু স্রষ্টাকে অর্পণ করা কিভাবে সম্ভব ? এমন বহু প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর নেই। এবিষয়ে বেদে হয়েছে- 


ঈশা বাস্যমিদং সর্বং য়ত্ কিঞ্চ জগত্যাং জগৎ ।

তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জীথা মা গৃধঃ কস্য স্বিদ্ধনম্ ॥১॥(য়জু ৪০/১) 


অতএব সেই সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমাদের সর্বদা সমস্ত দিক হতে প্রত্যক্ষ করছেন; এই জগত ঈশ্বর দ্বারা ব্যাপ্ত অর্থাৎ সকল স্থানে ঈশ্বর বিদ্যমান রয়েছেন। এই জগতে সে সকল ভোগ্য বস্তু রয়েছে তা আমাদের কারোরই নয় কেননা এগুলো স্রষ্টার সৃষ্ট বস্তু। তাই আমাদের উচিত আমরা যেন এই সকল বস্তুকে ত্যাগ পূর্বক ভোগ করি, আমরা যেন কোনো জাগতিক বস্তুতে আসক্ত না হই। ঈশ্বর কে অর্পণ করার বাস্তবিক স্বরূপ এই মন্ত্রে তুলে ধরা হয়েছে। 

ঈশ্বরের বাস্তবিক পূজা হয়ে থাকে স্তুতি, প্রার্থনা ও উপাসনার মাধ্যমে। ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন -স্তুতি দ্বারা ঈশ্বরের প্রতি প্রীতি জন্মে। তার গুণ কর্ম স্বভাব দ্বারা নিজ গুণ কর্ম স্বভাবের সংশোধন হয়। প্রার্থনা দ্বারা নিরভিমানতা, উৎসাহ ও সাহায্য লাভ হয় এবং উপাসনা দ্বারা স্রষ্টার সাথে মিলন ঘটে, তার সাথে সাক্ষাৎকার হয়। স্তুতি ও প্রার্থনা বিষয়ে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। দেখেনিন- 

ঈশ্বরের স্তুতি

https://aryaveeratwa.blogspot.com/2022/11/blog-post_18.html

প্রার্থনা

https://aryaveeratwa.blogspot.com/2022/11/blog-post.html

আজকে আলোচনা করা হবে উপাসনা বিষয়ে; উপাসনার মূল হলো য়োগ। ঋষি পতঞ্জলি য়োগ বিষয়ে একটি শাস্ত্র লিখেছেন যা য়োগদর্শন নামে পরিচিত। *[অনেকেই প্রশ্ন করতে পারে যে আমি যোগ না লিখে য়োগ কেন লিখছি ? এমনটা লিখছি এই কারণেই যাতে আপনারা শুদ্ধ উচ্চারণ করতে সক্ষম হন। দেবনাগরী লিপিতে 'य' অক্ষরের উচ্চারণ য় হয়। আর বাংলায় আমরা 'য' অক্ষরের উচ্চারণ জ করি। তাই শুদ্ধ উচ্চারণের জন্য য না লিখে য় লেখাই উচিত]। কারোর মনে প্রশ্ন উৎপন্ন হতে পারে যে ঋষি পতঞ্জলির য়োগদর্শন লিখিত হওয়ার আগে কি য়োগ ছিল না ? হ্যাঁ অবশ্যই ছিল, ঈশ্বরের সাক্ষাৎকার হওয়ার একমাত্র পথ হলো য়োগ। ঋষি পতঞ্জলি মনুষ্যের হিতার্থে য়োগ বিষয়ক একটি শাস্ত্রই লিখেছেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণও অর্জুনকে য়োগবিষয়ে বহুবার বলেছেন যা আমরা গীতার মধ্যে পেয়ে থাকি।


য়োগ কি ? 


♦️ঋষি পতঞ্জলি লিখেছেন- 

য়োগঃ চিত্ত-বৃত্তি-নিরোধঃ। [য়োগদর্শন ১/২] 

=> চিত্ত বা মনের সকল বৃত্তির নিরোধ হওয়াকে য়োগ বা সমাধি বলা হয়। 


♦️য়ম-নিয়ম-আসন-প্রাণায়াম-প্রত‍্যাহার-ধারণা-ধ‍্যান-সমাধয়ঃ অষ্টৌ অঙ্গানি। [য়োগদর্শন ২/২৯]

=> য়োগের ৮ টি অঙ্গ রয়েছে- য়ম্, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি। 


⭕️য়ম্⭕️


♦️অহিংসা-সত‍্য-অস্তেয়-ব্রহ্মচর্য়-অপরিগ্রহাঃ য়মাঃ। [য়োগদর্শন ২/৩০]

=>য়োগের প্রথম অঙ্গ য়মকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে- অহিংসা, সত্য, আস্তেয়, ব্রহ্মচর্য় এবং অপরিগ্রহ। ঋষি ব্যাস অহিংসা বিষয়ে লিখেছেন 'তত্রাহিংসা সর্বথা সর্বদা সর্বভূতানামনভিদ্রোহঃ।'[য়োগদর্শন ভাষ্য ২/৩০] অর্থাৎ সর্বত্র ভাবে সমস্তকালে সমস্ত প্রাণীদের দুঃখ না দেওয়া অহিংসা। অশাস্ত্রীয় অর্থাৎ অবৈধ ভাবে অন্যের ধন গ্রহণ করা হলো 'স্তেয়' অতএব চৌর্যবৃত্তি আদি ত্যাগ করা 'অস্তেয়'। যে পদার্থ যেমন তার বিষয়ে তেমনই বাণীতে ও মনে হওয়াই 'সত্য'। 'ব্রহ্মচর্য়' বিদ্যা অভ্যাস করা, বীর্য রক্ষা করা, জিতেন্দ্রিয় আদি হওয়া। অভিমান আদি দোষ হতে পৃথক হওয়া 'অপরিগ্রহ'। 



⭕️নিয়ম⭕️


♦️শৌচ-সন্তোষ-তপঃ-স্বাধ‍্যায়-ঈশ্বরপ্রণিধানানি নিয়মাঃ। [য়োগদর্শন ২/৩২]

=> য়োগের দ্বিতীয় অঙ্গ নিয়মকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে- শৌচ, সন্তোষ, তপঃ, স্বাধ্যায় এবং ঈশ্বরপ্রণিধান। শৌচ- ধর্মাচরণ, সত্যভাষণ, বিদ্যাভ‍্যাস আদি দ্বারা অন্তরের শুদ্ধিকরণ এবং জল আদি দ্বারা শারীরিক শুদ্ধিকরণ। সন্তোষ- পুরুষার্থের পশ্চাদ যা পাওয়া যায় তাতে সন্তুষ্ট থাকা, তার থেকে অধিক কিছু পাওয়ার ইচ্ছা না করা। তপঃ- ধর্মাচারণ দ্বারা হানি-লাভ, সুখ-দুঃখ, মান-অপমান, শীত-গ্রীষ্ম আদিতে সহনশীল থাকা। স্বাধ্যায় বিষয়ে ঋষি ব্যাস লিখেছেন- 'স্বাধ্যায়ো মোক্ষশাস্ত্রাণামধ‍্যয়নম্ প্রণবজপো বা' [য়োগদর্শন ব্যাস ভাষ্য ২/৩২] অর্থাৎ মোক্ষ বিষয়ক বেদ আদি শাস্ত্র অধ্যয়ন এবং প্রণব জপ।  ঈশ্বরপ্রণিধান- পরম গুরু পরমেশ্বরে সমস্ত কর্ম সমর্পিত করা, তার ভক্তি করা, তার আদেশ আদি পালন করা। 



⭕️আসন⭕️


♦️স্থির- সুখম্ আসন। [য়োগদর্শন ২/৪৬]

=> যে অবস্থায় শরীর স্থির ও সুখযুক্ত হয় তা আসন। এই কথাটি না বললেও নয় যে ঋষি পতঞ্জলি এখানে স্পষ্ট ভাবে লিখেছেন আসন স্থির ও সুখ যুক্ত,যেমন- পদ্মাসন, বীরাসন আদি। আসন প্রাণায়াম, ধ্যান আদি সিদ্ধির জন্য প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন এমন কিছু আসন রয়েছে যার সাথে য়োগ শাস্ত্রের আসনের দূর দূর কোনো সম্পর্ক নেই আর না সেই সকল আসন প্রয়োগ করে ধ্যান, সমাধি করা সম্ভব, তবুও সেগুলোকে য়োগাসন নামে প্রচার করা হচ্ছে। যেমন- ধনুরাসন, ভুজঙ্গাসন, নৌকাসন, শশাঙ্কাসন ইত্যাদি। এই সকল আসন স্থির হলেও কখনোই সুখযুক্ত নয়, কাজেই এগুলো বাস্তবিক আসন নয়। ঋষি ব্যাস জি য়োগদর্শন ভাষ্যে কয়েকটি আসনের কথা উল্লেখ করেছেন- পদ্মাসন, বীরাসন, ভদ্রাসন, স্বস্তিক, দণ্ডাসন আদি। 


⭕️প্রাণায়াম⭕️


♦️বাহ‍্য-আভ‍্যন্তর-স্তম্ভবৃত্তিঃ--দেশ-কাল-সংখ‍্যাভিঃ পরিদৃষ্টঃ দীর্ঘ-সূক্ষ্মঃ। বাহ‍্যাভ‍্যন্তরবিষয়াক্ষেপী চতুর্থঃ। [য়োগদর্শন ২/৫০,৫১] 

=> য়োগশাস্ত্র অনুযায়ী ৪টি প্রাণায়াম রয়েছে-বাহ্য প্রাণায়াম, আভ্যন্তর প্রাণায়াম, স্তম্ভবৃত্তিপ্রাণায়াম ও বাহ্য আভ্যন্তর বিষয়াক্ষেপী। 



⭕️প্রত্যাহার⭕️


♦️স্ববিষয়াসম্প্রয়োগে চিত্তস‍্য স্বরূপানুকার ইবেন্দ্রিয়াণাং প্রত‍্যাহারঃ। 

=> প্রত্যাহার- ইন্দ্রিয় সমূহের নিজ নিজ বিষয়ের সাথে সংযোগ না থাকার কারণে চিত্তের স্বরূপের অনুকরণ করা অর্থাৎ চিত্ত নিরুদ্ধ হওয়ার পশ্চাদ চিত্তের সাদৃশ্য সকল ইন্দ্রিয় নিরুদ্ধ হয়ে যায়। যেমন রানী মৌমাছির উড়লে সকল মৌমাছি উড়ে থাকে, সে বসলে সকলে বসে ঠিক তেমনি চিত্ত নিরুদ্ধের কারণে সকল ইন্দ্রিয় নিরুদ্ধ হয়ে যায়। 



⭕️ধারণা⭕️


♦️দেশবন্ধশ্চিত্তস‍্য ধারণা। [য়োগদর্শন ৩/১] 

=> দেশ বা স্থান বিশেষে চিত্তকে স্থির করাই হলো ধারণা। ঋষি ব্যাস ধারণা বিষয়ে লিখেছেন-'নাভিচক্রে, হৃদয়পুণ্ডরীকে, মূর্ধ্নি জ্যোতিষি, নাসিকাগ্রে, জিহ্বাগ্র ইত‍্যেবমাদিষু দেশেষু বাহ‍্যে বা বিষয়ে চিত্তস‍্য বৃত্তিমাত্রেণ বন্ধ ইতি ধারণা' অর্থাৎ নাভিচক্রে, হৃদয়ে, মস্তকগত প্রকাশে, নাসিকার অগ্রভাগে, জিহ্বার অগ্রভাগে অথবা বাহ্য বিষয়ে চিত্তকে কেবল

বৃত্তির সাথে জড়ানোর প্রক্রিয়াকে ধারণা বলা হয়। 


⭕️ধ্যান⭕️


♦️তত্র প্রত‍্যয়ৈকতানতা ধ‍্যানম্। [য়োগদর্শন ৩/২] 

=>যে স্থানে ধারণা করা হয়েছে ওই স্থানে জ্ঞেয় বিষয়ক জ্ঞান একই থাকা অর্থাৎ জ্ঞেয় বিষয়ক জ্ঞান হতে ভিন্ন জ্ঞান উপস্থিত না করাই হলো ধ্যান। যোগ জিজ্ঞাসুদের উচিত ধ্যান বিষয়ে বিশেষ ভাবে জ্ঞান রাখা। ঈশ্বরের ধ্যানকারী সাধকের উচিত প্রথমে শব্দ প্ৰমাণ অথবা অনুমান প্রমাণ এর সাহায্যে ঈশ্বরের স্বরূপ সম্পর্কে যথাযথভাবে জ্ঞাত হওয়া। যদি সাধক ঈশ্বরের স্বরূপ সম্পর্কে সঠিক না জানে অথবা বিপরীত জানে তাহলে ধ্যানের সফলতা লাভ হয়না। যেমন শব্দ প্ৰমাণ দ্বারা জানা যায় যে ঈশ্বর সর্ব-ব্যাপক, সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান, আনন্দস্বরূপ। ধ্যানের সময়ে এই প্রকারে ঈশ্বরের সঠিক স্বরূপকে জেনে তার ধ্যান করতে হবে।


⭕️সমাধি⭕️


♦️তদেবার্থমাত্রনির্ভাসং স্বরূপশুন‍্যমিব সমাধিঃ।[য়োগদর্শন ৩/৩] 

=> সেই ধ্যান= ধ্যেয় বিষয়ক জ্ঞানই কেবল বস্তুর স্বরূপকে প্রকাশকারী নিজ স্বরূপ হতে শুন্য হয় তা সমাধি। ধ্যানকালে ধ্যাতা= যিনি ধ্যান করেন, ধ্যান= যে জ্ঞানের দ্বারা ধ্যেয় বস্তুর গবেষণা করা হয় সেই জ্ঞান এবং ধ্যেয়= যে বস্তুর গবেষণা করা হয় সেই বস্তু ভিন্ন ভিন্ন রূপে ভাসতে থাকে। কিন্তু সমাধি অবস্থায় ধ্যেয় বস্তুর স্বরূপ মুখ্য রূপে প্রকাশিত হয় অর্থাৎ সমাধি অবস্থায় ধ্যান গৌণ হয়ে যায় এবং পদার্থের স্বরূপই মুখ্য থাকে। স্বরূপ শূন্য এই কথনের তাৎপর্য এই নয় যে যোগীর জ্ঞান শুন্য হয়ে যায়।  এই কথনের তাৎপর্য এই যে ধ্যেয় বস্তুর সাক্ষাৎকার সমাধি অবস্থায় মুখ্য হয়ে থাকে। যোগী যে বস্তুর ধ্যান করে সমাধি অবস্থায় সেই বস্তুর পূর্ণাঙ্গ স্বরূপ কে জানতে পারে। 


আজকে য়োগ বিষয়ে খুবই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। আমি পরবর্তী সময়ে য়োগের এক একটি অঙ্গের বিস্তৃত আলোচনা করবো।যদি কেউ য়োগ বিষয়ে খুবই বিস্তারিত জানতে চান তাহলে য়োগদর্শন অবশ্যই পড়বেন। কিছু ব্যক্তি এমন আছে যারা শুরুতেই ধর্ম বিষয়ে কিছু জানার পরেই ধ্যান করতে চায়, কেউ কেউ বলে থাকে যে সে যখন ধ্যানে বসে তখন তার মন স্থির হয়না, চঞ্চলই থাকে। আমি এই সকল বন্ধুদের বলতে চাই যে ধ্যান হলো য়োগের ৭ নং অঙ্গ। য়ম্, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার ঠিক ভাবে পালন না করে সরাসরি 'ধ্যান' অঙ্গে লাফিয়ে গেলে ধ্যানের সিদ্ধিলাভ কিভাবে সম্ভব হবে ? ১-৯ শ্রেণীর শিক্ষা অর্জন না করে ১০ শ্রেণীতে শিক্ষা অর্জন করা যেমন বোকামী ঠিক তেমনি য়োগের ৬ অঙ্গ না মেনে ধ্যানে লাফিয়ে যাওয়া বোকামী মাত্র। যে ব্যক্তি শুরুর য়ম্, নিয়ম ঠিক ভাবে পালন করতে সক্ষম হবে তিনি একসময় বাদবাকি ৬ অঙ্গকে অবশ্যই লাভ করতে পারবে। কেননা য়ম্ ও নিয়মের মধ্যে যে ১০ টি বিষয় রয়েছে তা যথাযথ ভাবে পালন করা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত কঠিন।


■যে ব্যক্তি এই অষ্ট অঙ্গকে লাভ করতে পারেন, তিনিই য়োগী হন। সেই য়োগী যখন পরমাত্মার মাধ্যমে অপরা- পরা বিদ্যা কে যথাযথ ভাবে জানতে পারেন, তখন তিনি মুক্তি লাভ করেন। যেমন #ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যিনি প্রকৃতি কে এবং ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞাত হন তিনি মুক্তিলাভ করেন [গীতা ১৩/২৪] আশা রাখি আমি আপনাদের মধ্যে উপাসনা বিষয়ে সাধারণ ধারণা দিতে সক্ষম হয়েছি। 


নমস্তে🙏

সনাতন ধর্মের জয় হোক 🚩🚩

জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩

কৃণ্বান্তো বিশ্বমার্য়ম্🚩🚩



ঈশ্বরের স্তুতি কেন করা হয় ?

 স্তুতি কেন করা হয় ? 


আমরা সনাতনীরা সনাতন ধর্ম কে ঠিকভাবে বুঝি আর নাই বা বুঝি, তবুও আমরা কম-বেশি ঈশ্বরের স্তুতি করে থাকি। যেমন তিনি সচ্চিদানন্দ স্বরূপ অর্থাৎ ঈশ্বর সত্য-চেতন যুক্ত ও আনন্দ স্বরূপ, তিনি শিব স্বরূপ অর্থাৎ তিনি জীবের মঙ্গলকারী ইত্যাদি। আমরা ঈশ্বরের নানান গুণগত নাম দ্বারা স্তুতি করে থাকি। স্তুতির বিষয়ে ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন-''ঈশ্বরের স্তুতি করলে তার প্রতি প্রীতি জন্মে। তার গুণ-কর্ম-স্বভাব দ্বারা নিজ গুণ কর্ম স্বভাবের সংশোধন হয়'' [সত্যার্থ প্রকাশ, সপ্তম সমুল্লাস] । যেমন ঈশ্বরের এক নাম 'শিব' [য়জুর্বেদ ১৬/২,৩,৪ ১৩] অর্থাৎ তিনি কল্যাণকারী, এই স্তুতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে আমরাও যেন কল্যাণকারী হই। ঈশ্বরের আর এক নাম 'কবি' [য়জুর্বেদ ৪০/৮]  অর্থাৎ তিনি সর্বজ্ঞ। এই স্তুতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত যে আমরাও যেন বেদ আদি শাস্ত্র দ্বারা অপরা-পরা বিদ্যা সম্পর্কে জ্ঞাত হই। ঈশ্বরের আর এক নাম 'শুদ্ধম্' অর্থাৎ তিনি শুদ্ধ, তিনি অবিদ্যা আদি দোষ রহিত, তাই আমরাও যেন অবিদ্যা আদি দোষ রহিত হতে পারি এবং শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে শুদ্ধ থাকি। ঈশ্বর 'অপাপবিদ্ধম্' অর্থাৎ তিনি কখনই পাপের সহিত যুক্ত, পাপকারী এবং পাপের প্রতি আকৃষ্ট হয়না, তাই আমরাও যেন পাপ কাজ না করি। ঈশ্বর ন্যায়কারী তাই আমাদেরও ন্যায়কারী হওয়া উচিত। ঈশ্বরের আর এক নাম 'মিত্র' অর্থাৎ আমাদের উচিত সকলের সাথে মিত্র ভাব রাখা। ঈশ্বরের এমন নানান গুণগত নাম রয়েছে যেগুলো আমাদের ধারণ করা উচিত। 

আমরা যদি ইশ্বরের গুণ গুলোর সম্পর্কে জ্ঞাত হয়ে তার কীর্তন করি, তাহলে আমাদের মধ্যে ঈশ্বরে প্রতি প্রীতি ভাব উৎপন্ন হবে এবং তার যে সকল গুলো আমাদের কাছে ধারণের যোগ্য, সেগুলো ধারণ করার ফলে আমাদের গুণ-কর্ম-স্বভারের সংশোধন হবে। কিন্তু আমরা যদি শুধুই ঈশ্বরের স্তুতি করি এবং তার গুণ কর্ম স্বভাব কে ধারণ করার কোনো চেষ্টা না করে ঈশ্বরের গুণ কর্ম স্বভাবের বিপরীত কুকর্ম করি, তাহলে স্তুতি করে কোনো লাভ নাই। ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন- যে ব্যক্তি ভণ্ডের ন্যায় পরমেশ্বরের গুণ কীর্তন করে থাকে এবং নিজ চরিত্র সংশোধন করে না তার স্তুতি নিষ্ফল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যে কোনো এক ব্যক্তি য়জুর্বেদ ৪০/৮ মন্ত্র দ্বারা ঈশ্বরের স্ততি করেন এবং তিনি এই মন্ত্র দ্বারা জানতে পারেন যে ঈশ্বর পাপ কাজ করে না। কিন্তু সেই ব্যক্তি নিয়ত চুরি করে এবং চুরি করাকে সে পেশা মনে করে। তাহলে তার কি লাভ ঈশ্বরের স্তুতি করে ? অতএব আমরা স্তুতিতে ঈশ্বরের যে সকল গুণের কীর্তন করি তার দ্বারা আমাদের গুণ কর্ম স্বভাবকে সংশোধন করতে হবে, তাহলেই আমাদের উপকার হওয়া সম্ভব।

ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা কেন করা হয় ?

 

প্রার্থনা কেন করা হয় ? 


আমাদের সমাজে এমন ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক যারা আজও বিশ্বাস করে যে ঈশ্বরের কাছে কিছু প্রার্থনা করলেই তা সফল হয়। প্রায় সকল গ্রামে গেলেই শোনা যায় যে অমুক কালী, অমুক শিব খুবই আদি জাগ্রত, তাদের কাছে যা প্রার্থনা করবে তা সফল হবেই হবে। এইরূপ মান্যতা সম্পূর্ণ রূপে একপ্রকার অন্ধবিশ্বাস মাত্র, এতে কোনো সত্যতা নেই, এই বিষয়ে নীচে চর্চা করা হবে। এখন প্রশ্ন রয়ে যায় যে এগুলো যদি মিথ্যা হয় তাহলে বেদে কেন প্রার্থনা বিষয়ক নানান মন্ত্র রয়েছে ? ঋষি দয়ানন্দ প্রার্থনা বিষয়ে বলেছেন 'প্রার্থনা করলে নিরভিমানতা, উৎসাহ এবং সাহায্য লাভ হয়।' [সত্যার্থ প্রকাশ, সপ্তম সমুল্লাস] 


অতএব ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলে অভিমান রহিত হয়, নিজের মধ্যে উৎসাহ লাভ ও সাহায্য লাভ হয়। সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি অনেক আছে যারা নিজের অভিমানের জন্য জরুরি অবস্থাতেও অন্যের কাছে কিছু চাইতে পারে না। কিন্তু আমরা যদি নিয়মিত শুদ্ধ চিত্তে পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তাহলে আমাদের মধ্য থেকে অভিমান দূর হয়ে যাবে। প্রার্থনা বিষয়ক মন্ত্র-


বিশ্বানি দেব সবিতর্দুরিতানি পরা সুব।য়দ্ভদ্রম্ তন্নঽআ সুব।। 

[য়জুর্বেদ ৩০/৩]


এই মন্ত্রে বলা হয়েছে যে পরমেশ্বর যেন আমাদের মধ্যে থেকে দুষ্ট গুণ দূর করেন এবং যা কল্যাণকর তা দান করেন। আমরা পরমেশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছি যে আমাদের মধ্যে থেকে সকল দুর্গুণ নষ্ট হোক এবং যা যা কল্যাণকর তা তা যেমন আমাদের দান করেন। যেমন এক নিষ্ঠাবান সন্তান তার পিতা মাতার কাছে প্রার্থনা করে যে সে যেন সত্যের পথে চলে, অন্যের মঙ্গল করতে পারে এবং কখনোই অধর্ম আচরণ না করে। সন্তানের এইরূপ কথা শুনে পিতা মাতা তাকে তার সেই পথে এগিয়ে চলার প্রেরণা দিয়ে থাকে। যা থেকে সেই সন্তানের মধ্যে একপ্রকার উৎসাহ ও সাহায্য লাভ হয়। ঠিক তেমনি ঈশ্বরের আছে ধর্ম অনুকূল প্রার্থনা করলে উৎসাহ লাভ হয়ে থাকে। 


ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন -'যে ব্যক্তি যে বিষয়ে প্রার্থনা করবে, তার উচিত সেইরূপ আচরণ করা। কেউ যদি সর্ব উত্তম বুদ্ধি লাভ করার জন্য পরমেশ্বরের নিকট প্রার্থনা করে, তাহলে তাকে সেই বিষয়ে যথা সম্ভব প্রযত্ন করতে হবে। অর্থাৎ নিজ পুরুষার্থের অতিরিক্ত প্রার্থনাও করা উচিত। বেদে বলা হয়েছে- 


কুর্বন্নেবেহ কর্মাণি জিজীবিষেচ্ছতং সমাঃ। [য়জুর্বেদ ৪০/২] 

এখানে পরমেশ্বর আজ্ঞা দিচ্ছেন যে মনুষ্য যেন শত বছর পর্যন্ত অর্থাৎ আজীবন কর্ম করতে করতে জীবন ধারণের ইচ্ছে করে। কখনই অলস যেন না হয়। 


দেখুন, সৃষ্টিতে যত প্রাণী ও অপ্রাণী  রয়েছে, তারা সকলেই নিজ নিজ কর্মে এবং সচেষ্ট থাকে। পিপীলিকা আদি সদা কর্মে রত থাকে, পৃথিবী আদি ভ্রমণ করে, বৃক্ষ আদি বৃদ্ধি ও হ্রাস পায়। এই সকল দৃষ্টান্ত মনুষ্যেরও গ্রহণ করা উচিত। যেরূপ পুরুষার্থে রত থাকা ব্যক্তির সহায়তা অন্যরা করে থাকে, সেইরূপ পরমেশ্বরও ধর্মপথে পুরুষার্থকারীর সহায়তা হয়ে থাকে।  যেমন কর্মঠ ব্যক্তিদের যেমন সেবক রূপে নিযুক্ত করা হয়, অলস ব্যক্তিকে করা হয়না, যেরূপ দর্শন করতে ইচ্ছুক এবং যার নেত্র রয়েছে সেই পুরুষকে কোনো বস্তু দেখানো যায়, অন্ধকে নয়। সেইরূপ পরমেশ্বর সকলের উপকার কর্মে সহায়ক হয়, হানিকারক কর্মে নয়। যেমন কেউ যদি বলে গুড় মিষ্টি, এই কথা বলা মাত্র সে যেমন গুড় প্রাপ্ত হয়না, বা গুড়ের স্বাদ পায়না, কিন্তু যত্নবান পুরুষ শীঘ্র অথবা বিলম্বে হোক, একসময় গুড় পেয়েই থাকে।'


অতএব বলা যায় যে ঈশ্বরের কাছে কোনো বিষয়ে প্রার্থনা করলেই সেটা সফল হয়ে যাবে এমনটা কিন্তু নয়। এই বিষয়ে আরও একটা উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করছি যেমন- কোনো এক ব্যক্তি মনে করলেন যে এই উক্ত 'বিশ্বানি দেব' মন্ত্র জপ করলেই তার মধ্যে থেকে সকল দুষ্ট গুণ দূর হয়ে যাবে। সেই ব্যক্তি এই মন্ত্র জপ করেন ঠিকই কিন্তু তিনি নিজের কুকর্ম ত্যাগ করার কোনো প্রকার প্রচেষ্টা করেন না। তাহলে কি কোনো লাভ আছে ? নাহ নেই। আমরা যেমন দুষ্টগুণ দূর করার ইচ্ছা প্রকাশ করে পরমাত্মার কাছে প্রার্থনা করছি ঠিক সেই অনুযায়ী আমাদের এমন কর্মও করতে হবে, যার মাধ্যমে সকল দুষ্ট গুণ যেন দূর হয় এবং কল্যাণকর গুণ লাভ হয়। তাই কোনো ব্যক্তি যদি এই মন্ত্র প্রতিদিন কয়েক হাজারবার জপ করার পরেও নিজের কুকর্ম ত্যাগ না করে তাহলে, এই মন্ত্র জপ করার কোনো লাভ নেই। 


ঈশ্বরের কাছে কোনো প্রার্থনা করলেই যদি তা সফল হতো, তাহলে এই সংসারে কেউই অসুখী হতো না, ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে সকলেই নিজের সমস্ত কামনা পূরণ করে নিতো। আমাদের পশ্চিম বাংলার, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় একটা বিখ্যাত মাকালী রয়েছে যার নাম বোল্লা কালী। এই মা কালীর পূজার সময় হাজার- হাজার পাঠা বলি হয়ে থাকে, বোল্লা কালীর মূর্তিতে কয়েক কেজি সোনার গহনাও দেওয়া হয়। একবার ভেবে দেখুন তো এগুলো কারা দেয় ? এগুলো তারাই দেয় যারা মনে করে বোল্লা কালী খুবই জাগ্রত এবং মাকালীর কাছে  প্রার্থনা করার পর যাদের কামনা সফল হয়েছিল। এই সকল ব্যক্তিরা ভুলেই যায় যে সে নিজের কর্মের জন্য সফল হয়েছে, মা কালীর কাছে প্রার্থনা করার কারণে নয়। অনেক ব্যক্তি এমনও আছে যারা এই মা কালীর কাছে অনেক প্রার্থনা করা সত্ত্বেও তাদের কামনা পূর্ণ হয়নি। তাহলে এইবার কি বলবেন ? নাস্তিকেরা তো ঈশ্বরই মানেনা, কারোর কাছে প্রার্থনা করা তো দূরের কথা, তাহলে তারা কি নিজের কর্মে সফল হয় না ? যদি একজন মুসলিম বা খ্রিস্টান বা ইহুদি বা নাস্তিক ব্যক্তি সৎ হয় এবং তার সাথে যদি কোনো প্রকারের অন্যায় না হয় তাহলে সেই ব্যক্তি অবশ্যই কোনো একদিন নিজ কর্মের সফলতা অর্জন করবেই। যা কর্মের নিয়ম। অতএব ঋষি দয়ানন্দ প্রার্থনা বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা যথার্থ। 


নমস্তে।

শ্রাদ্ধ বিষয়ক শাস্ত্রীয় ও যৌক্তিক আলোচনা

              শ্রাদ্ধ বিষয়ক শাস্ত্রীয় ও যৌক্তিক আলোচনা



প্রায় হাজারও বছর ধরে চলছে আমাদের আর্যাবর্ত দেশে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা। এই কথা সকলের জেনে রাখা উচিত যে এই আর্যাবর্ত দেশ থেকেই ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছিল আবার এই আর্যাবর্ত দেশ থেকেই সর্বপ্রথম অধর্মেরও প্রচার শুরু হয়েছিল। ঋষি কপিল সাংখ্য দর্শনে লিখেছেন- যখন সমাজে উত্তম-উত্তম উপদেশকারী থাকেনা তখন অন্ধ পরম্পরা চলতে থাকে [সাংখ্যসূত্র ৩/৭৯,৮২]। অর্থাৎ বলা যায় যখন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের সংখ্যা কমতে শুরু করে সেই সময় অল্প শিক্ষিত ভণ্ড ব্যক্তিরা ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করে। আর এই সমস্ত ধর্ম ব্যবসায়ীদের বর্তমান সময়ে ব্রাহ্মণ বলা হয়, যদিও ব্রাহ্মণ তাকেই বলে যিনি বেদজ্ঞ, যিনি বেদানুকূল জীবন ধারণ করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে নিজেদের জন্মগত ব্রাহ্মণ বলে চেল্লানো কথিত ব্রাহ্মণরা বেদ পড়া তো দূরের কথা বেদ পড়ার ২% যোগ্যতাও তাদের নাই, এরা কোনো ভাবেই প্রকৃত ব্রাহ্মণ নয়। 


এই সমস্ত ধর্ম ব্যবসায়ী কথিত ব্রাহ্মণদের ডজন ডজন ব্যবসার মধ্যে একটি ব্যবসা হলো মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করা। কোনো ব্যক্তি যতই পাপ করুক না কেন চিন্তার কোনো কারণ নেই, মৃত্যুর পর যদি সেই ব্যক্তির নামে শুধু মাত্র শ্রাদ্ধ করা হয় তাহলে সেই ব্যক্তি স্বর্গ লাভ করবে। আমাদের বৈদিক শাস্ত্রে মনুষ্যের ১৬ টি সংস্কারের কথা রয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে কোথাও শ্রাদ্ধ নামক সংস্কার নাই। কেননা এটা পুরোই কুসংস্কার মাত্র। 


১৬ সংস্কার

১।গর্ভাধান

২।পুংসবন 

৩।সীমান্তোয়ন 

৪।জাতকর্ম

৫।নামকরণ

৬।নিষ্ক্রমণ

৭।অন্নপ্রাশন

৮।চূড়াকর্ম

৯।কর্ণবেধ

১০।উপনয়ন 

১১।বেদারম্ভ 

১২।সমাবর্তন 

১৩।বিবাহ

১৪।বানপ্রস্থ

১৫।সন্ন্যাস

১৬।অন্ত্যেষ্টি 

এই হলো আমাদের ১৬ সংস্কার, গর্ভাধান থেকে শুরু করে অন্তেষ্টি ক্রিয়া পর্যন্ত। শ্মশানে মৃতদেহ আগুনে দাহ করার ক্রিয়াকে "অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া" বলা হয়। অন্ত‍্যা অর্থাৎ অন্তিম এবং ইষ্টি অর্থাৎ যজ্ঞ বা শুভ কর্ম বা সংস্কার বোঝায়। এই অন্তিম সংস্কারকে নরমেধ, পুরুষমেধ, পুরুষযাগও বলা হয়। মৃতদেহ আগুনে দাহ করাই হল শেষ সংস্কার, এরপর শ্রাদ্ধ বা পিণ্ড দান আদি কোনো নিয়ম শাস্ত্র সম্মত নয়।


য়জুর্বেদ ৪০/১৫

বায়ুরনিলমমৃতমথেদং ভস্মান্তং শরীরম্।ওম্ ক্রতো স্মর ক্লিবে স্মর কৃতং স্বর।।

এই মন্ত্র অনুযায়ী শরীর ভস্ম করা অর্থাৎ অন্ত্যেষ্টি সংস্কারই শেষ সংস্কার। এরপর শরীরের জন্য অন্য কোন সংস্কারই অবশিষ্ট থাকে না।  শ্মশান ভূমিতে জ্বলন্ত চিতায় সমিধা, সুগন্ধি, রোগনাশক ও বুদ্ধিবদ্ধক ঔষধ এবং ঘৃত আহুতি দ্বারা মৃত শরীরকে ভস্মীভূত করাই অন্ত্যেষ্টি সংস্কার। জীব তার কৃত কর্মে ফল নিজেই ভোগ করে। বংশধরদের কোন কার্যই তাকে সাহায্য করতে পারে না।

বর্তমান সময়ে কোনো সনাতনী বন্ধুকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করলে কি হয় ? তিনি উত্তরে বলবেন, যে মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ হবে সে স্বর্গ লাভ করবে। ঋষি বাল্মীকি লিখেছেন- 

য়দাচরতি কল্যাণি শুভম্ বা য়দি বাঽশুভম্ 

তদেব লভতে ভদ্রে কর্তা কর্মজমাত্মনঃ।।

মনুষ্য যেমন ভালো অথবা খারাপ কর্ম করে ঠিক তেমনই ফল ভোগ করে। কর্তা কে নিজের কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হয়।।

[বাল্মীকি রামায়ণ, অরণ্যকাণ্ড/ ৬৩/৬]


অতএব আপনি যে কর্ম করবেন [খারাপ বা ভালো] তার ফল আপনাকে ভোগ করতেই হবে। কিন্তু এই কথিত শ্রাদ্ধ অনুযায়ী যে যতই পাপী হোক না কেন তার মৃত্যুর পর যদি সন্তানেরা শ্রাদ্ধ করে তাহলেই তার স্বর্গ লাভ। বাহ কি দারুণ! এদের মতে স্বর্গ করা লাভ এতটাই সহজ! একজন চোর, ধর্ষক, খুনি, জঙ্গি, ব্যভিচারী ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি তার শ্রাদ্ধ করা হয় তাহলেই সেই ব্যক্তি মুক্তি লাভ করবে। ঈশ্বর হচ্ছেন ন্যায়কারী তিনি সকলকে কর্ম অনুযায়ী ফল প্রদান করেন। সনাতনী বন্ধুদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা এই যে মনুষ্য কর্ম অনুযায়ী ফল প্রাপ্ত হয় নাকি শ্রাদ্ধ অনুযায়ী ? যদি কেউ বলেন মনুষ্যের কৃত কর্ম অনুযায়ী ফল প্রাপ্ত হয়। তাহলে মনুষ্যের কৃত কর্ম অনুযায়ী যখন ফল লাভ হয় তাহলে শ্রাদ্ধ কেন করা হয় ? যে ব্যক্তি স্বর্গ লাভের যোগ্য সে ব্যক্তি অবশ্যই স্বর্গ লাভ করবে, তাই না ? আবার কেউ যদি বলেন মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ করলেই মুক্তি বা স্বর্গ লাভ হয় কৃতকর্ম অনুযায়ী নয়। তাহলে এটাই বলা যায় যে আপনার মান্য ঈশ্বর নিশ্চিতরূপে ঘুষখোর! কেননা আপনার মান্য ঈশ্বর বিচার করছেন না যে অমুক ব্যক্তি কিরূপ কর্ম করেছেন জীবিত অবস্থায়, সে কি আদৌ মোক্ষ লাভের যোগ্য ? ঈশ্বর এমনটা বিচার না করে তিনি শ্রাদ্ধ নামক ঘুষ নিয়ে যেকোনো ব্যক্তিকে মোক্ষ বা স্বর্গ লাভ করিয়ে দিচ্ছেন। অতএব যারা বিশ্বাস করেন মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করলেই সেই ব্যক্তি আত্মা স্বর্গ লাভ করে, তাদের মান্য ঈশ্বর ১০০% ঘুষখোর। 

যারা মনে করেন শ্রাদ্ধ অনুযায়ীই মুক্তি লাভ হয় তাদের মতানুসারে ঈশ্বর অবশ্যই বোকা, কেননা সে ফালতু ফালতু বেদের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মন্ত্র দিয়েছেন, তিনি যদি বোকা না হতেন তাহলে বেদের মধ্যে এতগুলো মন্ত্র না দিয়ে শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ বিষয়ক কিছু মন্ত্র দিতে পারতেন, কেননা জীবের মূল উদ্দেশ্য হলো মোক্ষ লাভ। এদিকে যারা শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানেন এবং মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধে বিশ্বাসী তাদের মতেও শ্রীকৃষ্ণ বোকা হওয়া উচিত, কেননা শ্রীকৃষ্ণ যদি বোকা না হতেন তাহলে তিনি গীতায় অর্জুন কে ফালতু ফালতু এত জ্ঞান দিতেন না। শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ বিষয়ক কয়েকটা শ্লোক বলতেন তাহলেই তো হয়ে যেত। কেননা জীবের পরম লক্ষ মোক্ষ লাভ করা আর শ্রাদ্ধ করলেই তো স্বর্গ বা মোক্ষ লাভ তাই না ? 

মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করলেই মুক্তি, এই সকল উদ্ভট কথাবার্তায় কোনো যুক্তি নেই আর নেই কোনো বেদানুকূল শাস্ত্রীয় প্রমাণ। এই শ্রাদ্ধ হলো কথিত ব্রাহ্মণদের একটা ব্যবসা মাত্র, এর মধ্যে কোনো সত্যতা নেই। এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য গড়ুর পুরাণ আদি নানান কথিত পুরাণ লিখেছেন যার মধ্যে এই শ্রাদ্ধের বিধি বিদ্যমান। শ্রাদ্ধ শব্দটি শ্রদ্ধা থেকে এসেছে, জীবিত পিতা মাতার সেবা যত্ন করাই প্রকৃত শ্রাদ্ধ। আপনার পিতা মাতা যদি জীবিত থাকে তাহলেই আপনি তাদের সম্মান বা অসম্মান করতে সামর্থ্য হবেন এবং তারা সেটাকে অনুভব করতে পারবেন। আপনি যদি তাদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রাখেন তাহলে অবশ্যই আপনার পূণ্য হবে এবং আপনি যদি তাদের অসম্মান করেন, দুঃখ দেন তাহলে আপনার পাপ হবে। কিন্তু আপনি আপনার পিতা বা মাতাকে যতই শ্রদ্ধা করুন না কেন তার জন্য আপনার পিতা মাতার কৃত কর্মের ফল বদলে যাবে না। যে ব্যক্তি যেমন কর্ম করবে সেই অনুযায়ী পরমাত্মা তাকে পুনর্জন্ম দেবে অথবা স্বর্গ(মুক্তি) লাভ করাবে। কিন্তু যে সকল কথিত ব্রাহ্মণরা এই শ্রাদ্ধ প্রথা চালু করেছে, তাদের মতে আপনার পিতা মাতার স্বর্গ লাভ হবে তখন যখন আপনি আপনার পিতা মাতার শ্রাদ্ধ করবেন। ভেবে দেখুন এই কথিত ব্রাহ্মণরা নিজেদের নোংরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিরূপ হাস্যকর, ভিত্তিহীন বিধান তৈরি করেছে। 

এইবার বেদাদি শাস্ত্র থেকে দেখি মোক্ষ লাভ কখন সম্ভব-

য়জুর্বেদ ৪০/১১

সম্ভূতিং চ বিনাশং চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ ।

বিনাশেন মৃত্যুং তীৰ্ত্বাঽসম্ভূত্যাঽমৃতমশ্নুতে।।১১।

পদার্থ : হে মনুষ্য! (য়ঃ) যে বিদ্বান (সম্ভূতিম্) যারমধ্যে  পদার্থ উৎপন্ন হয় সেই কার্যরূপ সৃষ্টিকে (চ) এবং সৃষ্টির গুন, কর্ম, স্বভাবকে এবং (বিনাশম্) যার মধ্যে পদার্থ বিনষ্ট = অদৃশ্য হয়ে যায় ওই কারণরূপ প্রকৃতিকে তথা (চ) তার গুন, কর্ম, স্বভাবের (সহ) একত্রে (উভয়ম্ তত্) সেই কার্যকারণ রূপ জগতকে (বেদ) জানেন; তিঁনি ( বিনাশেন) নিত্য স্বরূপকে উপলব্ধি করার কারন (মৃত্যুম্) শরীর এবং আত্মার বিয়োগে উৎপন্ন দুঃখকেও (তীৰ্ত্বা) অতিক্রম করে (সম্ভূত্যা) শরীর ইন্দ্রিয় অন্তকরণ রূপ উৎপন্ন হওয়ায় কার্যরূপ, ধর্মকার্যে প্রবৃত্ত কারী  সৃষ্টির সহযোগে (অমৃতম্) মোক্ষ সুখকে প্রাপ্ত হয় ।


গীতা ১৩/২৪

 য়ঃ এবম্ বেত্তি পুরুষম্ প্রকৃতিম্‌ চ গুণৈঃ সহ ।

সর্বথা বর্তমানঃ অপি ন সঃ ভুয়ঃ অভিজায়তে ।২৪।

অর্থঃ- যে ব্যক্তি এই প্রকারে পরমপুরুষ কে আর গুণের সাথে প্রকৃতি কে জানেন ,সে সর্বথা সংসারে বর্তনাম থেকেও কর্ম ফল ভোগের জন্য জন্ম ধারণ করেনা । 

বেদ ও গীতার উক্ত কথন অনুযায়ী এটাই বলা যায় যে মোক্ষ লাভ করতে গেলে জড় প্রকৃতির বিদ্যা কে জানা আবশ্যিক। যখন জীব জড় প্রকৃতির বিদ্যাকে জানেন বা ঈশ্বরের সৃষ্টি প্রতিটি পদার্থের বিদ্যা সম্পর্কে এবং আধ্যাত্মিক বিদ্যা সম্পর্কে অবগত হন তখন জীব মোক্ষ লাভ করেন। স্রষ্টার সৃষ্টিকে না জেনে  স্রষ্টাকে জানা সম্ভব নয়। যেমন- স্রষ্টা কে ? একজন সাধারণ মুসলিম, খ্রিষ্টান বা সনাতনী এই প্রশ্নের সাধারণ উত্তর হিসেবে বলবেন যে যিনি আপনাকে- আমাকে, সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী আদি পদার্থ সৃষ্টি করেছেন বা যিনি জগৎ নির্মাণ করেছেন তিনি স্রষ্টা বা ঈশ্বর। যদি বলা হয় সূর্য আদি কোনো পদার্থের বিষয়ে কথন না করে উত্তর দিন যে স্রষ্টা বা ঈশ্বর কে ? তাহলে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়, কেননা স্রষ্টার বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে পদার্থের সৃষ্টি বিষয়ে আলোচনা ছাড়া স্রষ্টার মাহাত্ম্য বিষয়ে জানা এবং অন্যকে জানানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করতে গেলে স্রষ্টার সৃষ্টি পদার্থ সমূহের বিদ্যা ও আধ্যাত্মিক বিদ্যা লাভ করতে হবে। যারা মনে করেন হরেকৃষ্ণ জপ, শ্রাদ্ধ, গঙ্গাতে স্নান, গীতা পাঠ করলে, ভাগবত পুরাণ পাঠ করলে, কাশী বৃন্দাবন আদি কথিত তীর্থ ভ্রমণ করলেই মোক্ষ লাভ হয়, তারা সকলেই ভ্রম জালে বসবাস করছেন। আমরা সনাতনীরা বিচারবুদ্ধি ত্যাগ করেছি, আমরা শুধুমাত্র অন্যের কথাকে অন্ধের মত মেনে চলি কিন্তু বিচার করিনা। ঋষি য়াস্ক লিখেছেন- মনুষ‍্যঃ কস্মাত্ মত্বা কর্মাণি সীব‍্যতি অর্থাৎ যিনি বিচার পূর্বক কর্ম করে তিনি মনুষ্য [নিরুক্ত ৩/৭]। ভেবে দেখুন তো আমরা কি সত্যিই মানুষ হতে পেরেছি ? ৪ এর সাথে ৪ যোগ করলে ৮ হয়, এইটা জানার জন্য মহান শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত হতে হয়না, সাধারণই জ্ঞানই যথেষ্ট। ঠিক এমনই আমাদের সমাজে যে সকল কুসংস্কার রয়েছে, সেগুলোকে ধ্বংস করার জন্য সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট। 

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তার অমরত্ব গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশে ও সংস্করবিধিতে শ্রাদ্ধ বিষয়ক মান্যতা খণ্ডন করেছেন👇

 প্রথম খণ্ডন

দ্বিতীয় খণ্ডন

সকল সনাতনী বন্ধুদের উচিত সত্যকে জানার চেষ্টা করা, যেকোনো সংস্কৃত বইকে ধর্মগ্রন্থ ভাবা বন্ধ করা উচিত, নিজেকে সাধু বলে পরিচয় দেওয়া কোন ব্যক্তি কি বললো সেটা ধর্মের অংশ মনে করার আগে সেই বিষয়ে বিচার করা। সনাতন ধর্মের প্রতিটি মান্যতা সত্য এবং তার মধ্যে যৌক্তিকতা অবশ্যই বিদ্যমান। মিথ্যা, যুক্তিহীন কোনো মান্যতা কখনোই সনাতন ধর্মের অংশ হতেই পারে না, এটা আমাদের মাথায় রাখা উচিত। আমরা যদি সকলে উদ্যোগ নেই যে কথিত ব্রাহ্মণদের তৈরি মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করার ব্যবসাকে বন্ধ করবো, তাহলে খুবই তাড়াতাড়ি এই ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব কিন্তু আমরা যদি মূর্খের মতন কথিত ব্রাহ্মণদের এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে সাহায্য করি, তাহলে এই ব্যবসাকে বন্ধ করার ক্ষমতা কারোর নেই। আচাৰ্য় চাণক্য লিখেছেন-

     য়স‍্য নাস্তি স্বয়ম্ প্রজ্ঞম্ শাস্ত্রম্ তস‍্য করোতি কিম্।

     লোচনাভ‍্যাম্ বিহীনস‍্য দর্পণঃ কিম্ করিষ‍্যতি।।

যে ব্যক্তির বুদ্ধি নাই সেই ব্যক্তিকে শাস্ত্র কিছুই করতে পারবে না। যেমন চক্ষু বিহীন ব্যক্তিকে আয়না কিছুই দর্শন করাতে পারে না।

[চাণক্য নীতি ১০/৯]


নমস্তে

সত্যমেব জয়তে

কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্

সনাতন ধর্মের জয় হোক

জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩


ঋষি দয়ানন্দ কৃত য়জুর্বেদ ২৫/৭ ভাষ্যের ভ্রান্তি নিবারণ

 ঋষি দয়ানন্দ কৃত য়জুর্বেদ ২৫/৭ ভাষ্যের ভ্রান্তি নিবারণ


ঋষি দয়ানন্দকৃত য়জুর্বেদ ২৫/৭ মন্ত্রের ভাষ্যের হিন্দি অনুবাদ নিয়ে বাংলা ও হিন্দি ভাষী পৌরাণিক বন্ধুরা খুবই খিল্লি করে থাকে এবং ঋষি দয়ানন্দ কে নানান ভাষায় গালিও দিয়ে থাকে।ফলে বৈদিক বন্ধুদের মনে শঙ্কা উৎপন্ন হতেই পারে যে তাহলে কি সত্যিই ঋষি দয়ানন্দ ভুল ভাষ্য করেছেন ? পৌরাণিকদের আচরণ দেখলে বোঝা যায় তারা ঋষি দয়ানন্দকে গালি দিলে নিজেকে গর্বিত মনে করে। যে সকল পৌরাণিক বন্ধুরা উক্ত মন্ত্রের হিন্দি অনুবাদ অনুসারে ঋষি দয়ানন্দকে গালি দিয়ে থাকে তারা কি একবারও দেখার চেষ্টা করে যে তাদের পৌরাণিক বিদ্বানেরা এই মন্ত্রের অর্থ কিরূপ করেছে ? যদি তারা পৌরাণিক বিদ্বানদের মহাবিকৃত ভাষ্য দেখতো তাহলে কখনোই ঋষি দয়ানন্দকে নিয়ে খিল্লি করতো না। ঋষি দয়ানন্দ আদৌ কোনো ভুল করেছে নাকি অন্য বিদ্বানেরা ভুল করেছে এই বিষয়ে সবার শেষে বিস্তৃত আলোচনা করা হবে। আগে দেখে নেওয়া যাক পৌরাণিক বিদ্বানেরা য়জুর্বেদ ২৫/৭ মন্ত্রের কিরূপ অর্থ করেছে-

■ আচাৰ্য সত্যব্রত সামশ্রমী, মহিধরের ভাষ্যের ওপর আধারিত■ 

য়জুর্বেদ ২৫/৭


পুষাকে বনিষ্ঠু দ্বারা প্রীত করি, অন্ধঅহিদিগকে স্থূল গুদা দ্বারা, সর্পগণকে গুদা দ্বারা, বিহতদিগকে আন্ত্র দ্বারা, জলদেবীকে বস্তি দ্বারা, বৃষণকে অণ্ডদ্বয় দ্বারা, বাজিনকে শেপ দ্বারা, প্রজাকে রেতঃ দ্বারা, চাষদিগকে পিত্ত দ্বারা প্রদরদিগকে পায়ু দ্বারা কূশ্মগণকে শকপিণ্ড দ্বারা প্রীত করি। 

■স্বামী করপাত্রীর ভাষ্য, অদ্বৈতবাদীদের একজন মহান বিদ্বান ব্রহ্মস্বরূপ■

য়জুর্বেদ ২৫/৭


बड़ी आंत के स्थानीभूत घृत से पूषा देवता को, स्थूल गुदा से अन्धे सर्पों को, गुदा के अन्य भागों से सर्पों को, छोटी आँतों से विह्रुत देवता को बस्ति से जल देवता को, वृषणों से कामनावर्षी वृषण देवता को मेद्र से बाजी को वीर्य से प्रजा को पित्त से चाप को, पायु से प्रदर को और लीद के पिण्डों से कूश्म को प्रसन्न करता हूँ।।७।।

■জিজ্ঞাসাঃ পৌরাণিকদের মহান বেদ ভাষ্যকার মহিধর ও অদ্বৈতবাদী ব্রহ্মস্বরূপ করপাত্রী উক্ত মন্ত্রের প্রায় একই ধরণের অর্থ করেছে,তারা লিখেছে- স্থূল গুদা দ্বারা অন্ধ সাপকে, গুদার অন্য ভাগ দিয়ে সর্প কে প্রসন্ন বা প্রীত করি। আমি সকল মহিধর ভক্ত ও করপাত্রী ভক্ত অদ্বৈতবাদীদের কাছে জানতে চাই যে আপনারা পশু নাকি প্রাণীর মলদ্বার দ্বারা অন্ধ সাপ কে প্রসন্ন করেন ? নাকি নিজেদের ম*লদ্বার দিয়ে অন্ধসাপ কে প্রসন্ন করেন ? স্থূল ম*লদ্বার দিয়ে অন্ধ সাপ কে প্রসন্ন করার প্রযুক্তিবিদ্যাটা কেমন, তা জানতে চাই! এবং এটাও জানতে চাই যে স্বয়ং করপাত্রী বা মহিধরও নিশ্চয় ম*লদ্বার দিয়ে অন্ধ সাপকে প্রসন্ন করেছিল ? যেহেতু মায়াবাদীদের মতে করপাত্রী ব্রহ্মস্বরূপ ছিলেন, তাই বলা যায় যে করপাত্রী ভুল করতেই পারে না। আমি আশা রাখি এইবার থেকে সকল অদ্বৈতবাদীরা স্থূল মলদ্বার দিয়ে অন্ধ সাপ কে এবং সাধারণ সাপ কে প্রসন্ন করার যথাযথ চেষ্টা করবে।

■ডঃ রেখা ব্যাস ( এম.এ., পি-এস. ডি.)>সংস্কৃত সাহিত্য প্রকাশন> আচার্য উব্বট এর অনুবাদের ওপর আধারিত■

য়জুর্বেদ ২৫/৭


बड़ी आंत पूषा देव, स्थूल गुदा अंधे सर्प देव, सामान्य गुदा अन्य सर्प देवों, बची हुई आंतें विद्युत् देव, वस्ति भाग जल देव, अंडकोष वृषण देव व उपस्थ बल देव से संबंधित हैं. वीर्य प्रजापति देव, पित्त चाष देव, पायु (गुदा) प्रदर देव व शक पिंड कूश्म देव से संबंधित हैं।। ७।।

■জিজ্ঞাসাঃ এখানে বলা হচ্ছে ''স্থূল গুদা অন্ধ সর্প দেব, সামান্য গুদা অন্য সর্প দেব সম্বন্ধীয়।'' খাজুরাহ মন্দিরের মূর্তি প্রিয় সকল পৌরাণিক বন্ধুদের কাছে আমি জানতে চাই যে কোন পশু বা প্রাণীর স্থূল ম*লদ্বার অন্ধ সাপ দেবতা সম্বন্ধীয় ? এবং কাদের সামান্য মলদ্বার অন্য সাপ দেবতা সম্বন্ধীয় ? কোন পশু বা প্রাণীর স্থূল ও সামান্য ম*লদ্বার কিভাবে সাপ সম্বন্ধীয় হতে পারে ? কারোর ম*লদ্বার থেকে সাপের বিবরণ পাওয়া কি সম্ভব ? কি আশ্চর্য! পৌরাণিক বন্ধুরা আপনাদের বিদ্বানেরা খুবই সুন্দর বেদ ভাষ্য করেছে তাই না ? 

■শ্রীরাম শর্মা আচার্য এবং ওনার শিষ্য ভগবতী দেবী শর্মার ভাষ্য■

য়জুর্বেদ ২৫/৭


स्थूल आँत का भाग पूषादेवता के लिए, स्थूल गुदा नेत्रहीन सर्पों के लिए तथा अन्य सर्पों के लिए सामान्य गुदा का भाग, आँतों का शेष भाग विह्रुत देवता के लिए, वस्ति भाग को जल के लिए, अण्डकोषों की शक्ति वृषणदेव के लिए, उपस्थ की शक्ति वाजी देव के लिए, वीर्य प्रजा के लिए, पित्त 'चाष' देवता के लिए, गुदा का तृतीय भाग प्रदरदेवों के लिए तथा शकपिण्डों को कूश्म देवता की प्रसन्नता के लिए समर्पित करते हैं ॥७ ॥

শ্রীরাম শর্মাও প্রায় মহিধর, করপাত্রীর মতোই লিখেছে 'স্থূল মলদ্বার অন্ধ সাপের জন্য এবং অন্য সাপের জন্য সামান্য মলদ্বার ভাগ প্রসন্নতার জন্য সমর্পিত করি।'

এইবার আলোচনা করা যাক ঋষি দয়ানন্দকৃত সংস্কৃত ভাষ্যের হিন্দি অনুবাদের বিষয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে ঋষি দয়ানন্দ কি আদৌ কোনো ভুল লিখেছেন ? উত্তর হবে 'না' কেননা ঋষি দয়ানন্দ য়জুর্বেদ, ঋগ্বেদ এর ভাষ্য করেছেন সংস্কৃত ভাষায়, আর সেই ভাষ্যকে হিন্দি অনুবাদ করেছে অন্যান্য বিদ্বানেরা। তাই এই বিষয়টা সকলের মাথায় ঢুকিয়ে নেওয়া উচিত যে ঋষি দয়ানন্দের বেদ ভাষ্যের বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে বেদাঙ্গ, ব্রাহ্মণ ইত্যাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন করুন কেননা তিনি সংস্কৃতে বেদ ভাষ্য করেছেন হিন্দিতে নয়। আমাদের আর্য় সমাজের একজন মহান পণ্ডিত য়ুধিষ্ঠির মীমাংসক একটি গ্রন্থ লিখেছেন যার নাম 'ऋषि दयानन्द के ग्रन्थों का इतिहास' 'ঋষি দয়ানন্দ কে গ্রন্থ কা ইতিহাস' [মার্গশীর্ষ ২০০৬ সম্বত্> ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত] এই গ্রন্থে মীমাংসক জি ঋষি দয়ানন্দ কৃত সকল সংস্কৃত ও হিন্দি গ্রন্থের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যে সকল বিদ্বানেরা সংষ্কৃত ভাষ্য থেকে হিন্দি ভাষানুবাদ করেছিলেন তারা প্রায়ই জায়গায় ভুল করেছিলেন, ঋষি দয়ানন্দ কিছু ভুল সংশোধনও করেছিলেন কিন্তু সম্পূর্ণরূপে করতে পারেননি। ঋষি দয়ানন্দকৃত বেদভাষ্য বিষয়ে মীমাংসক জি উক্ত গ্রন্থের ৯০-১০৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, তিনি সেখানে ঋষি দয়ানন্দের 'পত্র ব্যবহার' থেকে নানান প্ৰমাণও দিয়েছেন।


এইবার দেখে নেওয়া যাক ঋষি দয়ানন্দ য়জুর্বেদ ২৫/৭ মন্ত্রের সংস্কৃত ভাষ্য-

पदार्थ :- (पूषणम्) पुष्टिकरम् (वनिष्ठुना) याचनेन ( अन्धाहीन्) अन्धान् सर्पान् (स्थूलगुदया) स्थूलया गुदया सह ( सर्पान्) (गुदाभि:) (विह्रुतः) विशेषेण कुटिलान् (आन्त्रैः) उदरस्थैर्नाडीविशेषैः (अप) जलानि ( वस्तिना) नाभेरधोभागेन ( वृषणम्) वीर्याधारम् ( आण्डाभ्याम्) अण्डाकाराभ्यां वृषणावयवाभ्याम् (वाजिनम्) अश्वम् (शेपेन) लिङ्गेन (प्रजाम् ) सन्ततिम् (रेतसा) वीर्येण (चापान्) भक्षणानि (पित्तेन ) ( प्रदरान्) उदरावयवान् (पायुना) एतदिन्द्रियेण ( कूश्मान् ) शासनानि । अत्र कशधातोर्मक्प्रत्ययोऽन्येषामपीति दीर्घश्च (शकपिण्डैः) शक्तैः संघातैः॥७॥


ঋষি দয়ানন্দ এই মন্ত্রের ভাষ্যে যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তা হিন্দি অনুবাদকেরা বুঝে উঠতে পারেনি, কাজেই তারা এই মন্ত্রের অর্থ তেমনই করেছে যেমনটা বেদ অজ্ঞ পৌরাণিক বিদ্বানেরা করেছে, প্রকৃত ভুলটা হয়েছে এই জায়গায়। দুঃখের বিষয় হলো আজ পর্যন্ত এই ভুল গুলোকে সংশোধন করা হয়নি। পৌরাণিকরা যেমন এমন এক ধরণের প্রাণী যারা ১৮+ পুরাণ কাহিনীর মধ্যে নিজেদের মান্য ঈশ্বর, মুনি, ঋষিদের লম্পট বানিয়েছে, কুলষিত করেছে তবুও আজ পর্যন্ত এমন কোনো পুরাণ বিদ্বান দেখলাম না যারা পুরাণ থেকে বিকৃত বিষয় গুলোকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছে অথবা পুরাণ কাহিনীর বিকৃত বিষয় গুলোর বিরুদ্ধে কিছু লিখেছে, ঠিক এই প্রকারের প্রাণী আর্য সমাজের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে নয়তো এই সকল ভুল গুলোকে সংশোধন করা হতো। আমাদের বৈদিকদের মধ্যে কয়জন জানে যে ঋষি দয়ানন্দ হিন্দি ভাষায় নয় বরং সংস্কৃতে বেদ ভাষ্য করেছিলেন ? অনেকেই জানেনা, কাজেই তারা মনে করে হিন্দি ভাষ্যও ঋষি দয়ানন্দ স্বয়ং করেছেন। ফলে হিন্দি অনুবাদে কোনো ভুল পেলে মনে করা হয় ঋষি দয়ানন্দই ভুল করেছে, এতে হিন্দি অনুবাদকের না বরং ঋষি দয়ানন্দেরই বদনাম হবে। এই সাধারণ জ্ঞান গুলো  আমাদের ওই সকল বিদ্বানদের নেই যারা আজও ভুল গুলোকে সংশোধন করার কোনো প্রয়াস করেনি!


বর্তমান সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ বৈদিক বিদ্বান এবং নৈষ্টিক ব্রহ্মচারী হলেন আচাৰ্য় অগ্নিব্রত। যিনি মহর্ষি ঐতরেয় মহিদাসের লেখা ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ভাষ্য করেছেন, যে গ্রন্থের নাম দেওয়া হয়েছে 'বেদ বিজ্ঞান আলোক'। ওনার সম্পর্কে আরও জানতে হলে vaidic physics ইউটিউব চ্যানেল দেখুন। আচাৰ্য় অগ্নিব্রত জি ঋষি দয়ানন্দ কৃত সংস্কৃত ভাষ্যের বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন। আসুন দেখি-


পদার্থঃ হে মনুষ্য! (বনিষ্ঠুনা) যাচন অর্থাৎ গ্রহণ করার ইচ্ছা তথা নষ্ট করার প্রবৃত্তি এই উভয় প্রকারের কর্ম দ্বারা (পূষণম্) পুষ্টি করণের ক্রিয়া সম্যক্ প্রকারে সম্পূর্ণ হয়। এই বিষয়ে ধ্যান দেওয়া উচিত যে শরীর এবং ব্রহ্মাণ্ড উভয়ের সংযোগ-বিয়োগ অথবা সৃজন-বিনাশ উভয় প্রকারের প্রবৃত্তির প্রক্রিয়া একসাথে চলে। 

এদের মধ্যে একটির অভাব হলেই সৃষ্টি প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে যাবে। এখানে ঋষি দয়ানন্দকৃত 'য়াচনেন' পদের দুই প্রকারের অর্থ গ্রহণ করা উচিত। যদি এখানে কেউ 'য়াচনেন' পদের দুই প্রকার অর্থ গ্রহণ না করে তাহলে তাকে বনিষ্ঠুনা পদ 'বনু য়াচনে' তথা 'বনু সম্ভক্তৌ' এই দুই ধাতু হতে ব্যুৎপন্ন মানা উচিত। তাহলে এখানে দুই প্রকার অর্থ বের হয়।  (স্থূলগুদয়া) স্থূল গুদা অথবা পুচ্ছভাগ দ্বারা (অন্ধাহীন্) অন্ধ সর্প নিজের ক্রিয়া সমূহকে করতে সমর্থ হয়। আমরা জানি যে সমস্ত সাপ অন্ধ হয় তাদের পুচ্ছ বা লেজ মুখের সাদৃশ্য মোটা হয়ে থাকে। সেখানেই সর্পের গুদাও থাকে। সেই স্থূল গুদার মাধ্যমে সর্প ডিম দেয়। এই কারণে  গুদা স্থূল হয়ে থাকে। brahminy blind snake শুধুমাত্র মহিলা হয়, পুরুষ হয়না। এই কারণে এই সাপ পুরুষের সংযোগ ছাড়াই গুদা দ্বারা ডিম দেয়। কাজেই বলা হয়েছে স্থূল গুদা দ্বারা অন্ধ সর্প নিজের কর্ম করে থাকে। 

Brahminy blind snake
                              

(গুদাভিঃ) গুদা অথবা পুচ্ছভাগ দ্বারা (বিহ্রুতঃ) বিশেষ রূপে বক্রগতি করা সর্প নিজের গতি আদি ক্রিয়াকে সম্যগ্রূপেণ করতে সমর্থ হয়। এখানে 'বিহ্রুতঃ' শব্দ দ্বারা শাকল সর্প গ্রহণ করা যায়। এই সাপ নিজের পুচ্ছ অথবা গুদা ভাগকে মুখ দিয়ে দাবিয়ে রেখে গোলাকার হয়ে চাকার সাদৃশ্য গতি করে থাকে। এই সর্পকে ইংরেজি ভাষায় hoop snake বলা হয়।

Hoop snake
                                      

 এই প্রকারের সর্পের বিষয়ে বৈজ্ঞানিকদের শঙ্কা রয়েছে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণেও এক স্থানে এই প্রকার সর্পের বর্ণনা রয়েছে। আচার্য সায়ণও ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ভাষ্যে এই সর্পের চর্চা করেছেন, সম্ভবত এই সর্পের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু সর্প নিজের লেজ নাড়িয়ে আওয়াজ পূর্বক শিকারকে আকর্ষিত করে ধরে নেয়, এখানেও কিন্তু গুদা বা পুচ্ছের ভূমিকা থাকে কিন্তু এখানে গতি করার  জন্য নয় বরং শিকার করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এই কারণে গুদার মাধ্যমে এদের ক্রিয়াশীল হওয়া অথবা সম্যক্ ক্রিয়া করার চর্চা এখানে রয়েছে। (সর্পান্) অন্য প্রকারের সর্প (আন্ত্রৈঃ) উদরস্থ নাড়ী [অমতি জানাতি প্রোপ্নোতি য়েন তত্ অন্ত্রম্ (উণাদি কোষ ৪/১৬৫)] অর্থাৎ সর্প শরীরের ওপর তৈরি হওয়া শল্কের দ্বারাই সে নিজের সকল কর্ম করতে সমর্থ হয়। 

ভাবার্থঃ হে মনুষ্য! সৃষ্টিতে সংযোগ বিয়োগের গুণ দ্বারা বিভিন্ন ক্রিয়া, পদার্থের রক্ষা এবং পালন, অন্ধ সাপের পুচ্ছ বা গুদাভাগ দ্বারা ডিম দেয় অথবা এর সাহায্যে শাকল সাপের গতি করা, সমস্ত সাপের মাংসপেশী দ্বারা হওয়া কর্ম, শরীরে মূত্র বিসর্জনের সম্যক্ ক্রিয়ার দ্বারা শরীরে জলের সম্যক্ কার্যশীল থাকা, অন্ডকোষে অবয়ব ভূত অণ্ড স্বস্থ হওয়াতেই অন্ডকোষের সমর্থ হওয়া। পৌরুষ শক্তি সম্পন্ন ঘোড়া আদি বলবান প্রাণীর বল বিদ্যমান থাকা, শুক্র এবং বীর্যের শুদ্ধতা এবং স্বাস্থ্যের দ্বারা স্বস্থ প্রজা  উৎপন্ন হওয়া, পিত্ত আদি পাচক রসের দ্বারা ভোজন পচনশীল হওয়া, মল আদি বিসর্জনের সম্যক্ ক্রিয়ার দ্বারা শরীরের সকল অঙ্গ স্বস্থ থাকা এবং মস্তিকগত স্নায়ু সমূহের স্বস্থ এবং সবল থাকার ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ সমূহের সম্যক্ নিয়ন্ত্রণ এবং সঞ্চালন আদি কর্ম হয়ে থাকে, এইরুপ তুমি জানো।

আমি পুরো মন্ত্রের ব্যাখ্যা তুলে ধরলাম না , যেটুকু নিয়ে শঙ্কা রয়েছে সেটাই তুলে ধরলাম। কারোর যদি ইচ্ছে হয় আরও বিস্তারিত জানার, তাহলে এই লিঙ্ক থেকে দেখে নেবেন। আচাৰ্য় অগ্নিব্রত জি এখানে উক্ত মন্ত্রের তিন প্রকারের ভাষ্য করেছেন

👉য়জুর্বেদ ২৫/৭ ভাষ্য [আচাৰ্য় অগ্নিব্রত নৈষ্টিক] pdf 👈


এই বিষয়ে সকল বৈদিক বন্ধুদের ধ্যান দেওয়া উচিত যে ঋষি দয়ানন্দ যেমন বেদ ভাষ্য করতে চেয়েছিলেন তেমন ভাষ্য করতে পারেনি। ঋষি দয়ানন্দ সাংকেতিক বেদ ভাষ্য করেছেন। 

ঋষি দয়ানন্দ বলেছিলেন বেদের মধ্যে সকল প্রকারের বিদ্যা রয়েছে [ ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা/ ব্রহ্মবিদ্যাবিষয়]। তিনি বলেছিলেন -যদি এমন বিস্তৃত ভাষ্য আমি চার বেদের করি, তাহলে চার বেদের ভাষ্য করতে চারশো বছর সময় লাগবে। [ঋগ্বেদ মহাভাষ‍্যম্, আচাৰ্য় বিশ্বশ্রবা ব্যাস, পৃষ্ঠা-১৪৭]। ঋষি দয়ানন্দ ভ্রান্তি নিবারণ গ্রন্থে লিখেছেন- পরমাত্মার কৃপায় আমার শরীর সুস্থ থাক এবং সেই দিনের দেখা মিলবে যেদিন বেদ ভাষ্য সম্পূর্ণ হয়ে যাবে সেদিন নিঃসন্দেহে এই আর্য়্যাবর্ত্ত দেশে সূর্যের সমান প্রকাশিত হবে, যাকে ধ্বংস করার সামর্থ্য কারোর থাকবে না। কেননা সত্যের মূল এমন নয় যে যাকে যে কেউ খুবই সহজে উপড়ে ফেলবে। বেদের প্রতিটি মন্ত্রের তিন প্রকারের অর্থ হয় আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক বিষয়ে নিম্নলিখিত পোষ্টটি দেখে নেবেন-

 👉বেদ মন্ত্রের ত্রিবিধ ভাষ্য বিষয়ক👈


ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন চার বেদের পূর্ণাঙ্গ ভাষ্য করতে চারশো বছর সময় লাগবে অর্থাৎ প্রতিটি বেদের একশো বছর করে সময় লাগবে, কিন্তু ঋষি দয়ানন্দ বেদ ভাষ্য করার জন্য ১০ বছরও সময় পাননি অর্থাৎ বলা যায় যে তিনি যেমন ভাষ্য করতে চেয়েছিলেন তার ২০% করতেও পারেননি। এই অধার্মিক নিকৃষ্ট সমাজ ঋষি দয়ানন্দকে বেঁচে থাকতে দেয়নি! সামান্য উদাহরণ স্বরূপ দেখুন ঋষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ১/১/১ মন্ত্রের ভাষ্য করেছেন প্রায় ২ পৃষ্ঠায় কিন্তু কয়েক সুক্ত পেরিয়ে গিয়ে দেখুন কত ছোট ছোট ভাষ্য করেছেন। প্রায়ই মন্ত্রের কিছু কিছু শব্দের অর্থ তিনি করেননি, খুবই সংক্ষিপ্ত ভাষ্য করেছেন। ঋষি দয়ানন্দ হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে এই নোংরা সমাজ তাকে বেশিদিন বাঁচতে দেবে না, কাজেই তিনি বেদের ভাষ্য খুবই সাংকেতিক করেছিলেন। কিন্তু আমাদের বিদ্বানেরা ঋষি দয়ানন্দের সাংকেতিক ভাষ্যকে ঠিকভাবে বুঝতে না পেরে ভুলভাল অর্থ করেছেন। 


আমি এই পোষ্ট টি লিখলাম শুধুমাত্র বৈদিক বন্ধুদের জন্য শঙ্কা সমাধান হিসেবে। যে সকল পৌরাণিকরা ঋষি দয়ানন্দ কে গালি দেয়, তাদেরকে ঋষি দয়ানন্দের বেদ ভাষ্য বিষয়ে কিছু বোঝানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। মহারাজ ভর্তৃহরি বলেছেন- ''সর্বস্যৌষধমস্তি শাস্ত্র বিহিতম্ মূর্খস‍্যনাস্ত্যৌষধম্।'' সকল রোগের ঔষধ শাস্ত্রে লিখিত রয়েছে কিন্তু মূর্খের ঔষধ শাস্ত্রে নাই অর্থাৎ দুঃখ রূপী রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শাস্ত্রে বহু কথন রয়েছে কিন্তু মূর্খকে বোঝানোর মত কোনো কথন শাস্ত্রে নাই [ভর্তৃহরি, নীতি শতক/ ১০]। কিন্তু আমি মনে করি আগামীতে সকল পৌরাণিক বন্ধুরা মিলে অনুসন্ধান বিষয়ক একটি সংস্থা খুলবে। তারা দেশ বিদেশ ঘুরে নানান পশু বা প্রাণীদের সংগ্ৰহ করবে এবং তাদের মলদ্বার অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করে দেখবে যে সেই মলদ্বার দ্বারা অন্ধ সাপ দেবতার সম্পর্কে কিভাবে জানা যায় এবং সামান্য মলদ্বার পরীক্ষা করে দেখবে যে সাপ দেবতার সম্পর্কে কিভাবে জানা যায়। পরীক্ষায় সফল হলে হয়তো আচার্য উব্বটের কার্যের [বেদ ভাষ্য] প্রশংসা সকলেই করবে।  ঠিক এইরূপ ব্রহ্মস্বরূপ করপাত্রীর কথা অনুসারে কোন কোন পশু বা প্রাণীর স্থূল ম*লদ্বার দ্বারা অন্ধ সাপ কে এবং ম*লদ্বারের অন্য ভাগ দিয়ে সাপকে প্রসন্ন করা সম্ভব এই বিষয়ে পরীক্ষা করা হবে। আমি মনে করি এই পরীক্ষার কাজটা পুরীর নিশ্চলানন্দ সরস্বতী কে দেওয়া উচিত, কেননা তিনিও মায়াবাদী। 


নমস্তে

সত্যমেব জয়তে

কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্

সনাতন ধর্মের জয় হোক

জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩





বেদের প্রতিটি মন্ত্রের আধিদৈবিক, আধিভৌতিক ও আধ্যাত্মিক অর্থ হয়

 



বর্তমান সময়ে ৪ হাত যুক্ত বিষ্ণুর কিছু ভক্তরা (বৈষ্ণব) সকল শাস্ত্র কে তুচ্ছ করে শুধুমাত্র গীতাকে নিয়ে লাফালাফি করে। সনাতন ধর্মের মূল হল বেদ, এরা যুক্তিতে না পারলে বেদকে তুচ্ছ করতেও কারোর পরোয়া করেনা। আর এই সকল বৈষ্ণবরা বেদের চেয়েও গীতাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য গীতা ২/৪৫ শ্লোকটি খুবই ব্যবহার করে থাকে। আসুন দেখি এই শ্লোকে কি রয়েছে- 


ত্রৈগুণ‍্যবিষয়াঃ বেদাঃ নিস্ত্রৈগুণ‍্যঃ ভব অর্জুন ।

নির্দ্বন্দ্বঃ নিত্যসত্ত্বস্থঃ নির্য়োগক্ষেমঃ আত্মবান্ ॥৪৫


অর্থ-বেদে প্রধানত জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুণ সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন! তুমি সেই গুণ গুলিকে অতিক্রম করে নির্গুণস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।



যে সকল পৌরাণিক বিদ্বানরা গীতার ভাষ্য করেছেন, তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই উক্ত শ্লোকের একই অর্থ করেছেন। এখানে বলা হচ্ছে যে বেদে প্রধানত জড় প্রকৃতির তিন গুণের বিষয়ে বলা হয়েছে। এখানে অর্জুনকে বলা হচ্ছে এই গুণ গুলোকে অতিক্রম করতে। আসলে এই ত্রিগুণ কি ? ঋষি কপিল লিখেছেন- সত্ত্বরজস্তমসাং সাম‍্যাবস্থা প্রকৃতিঃ। [সাংখ্য দর্শন ১/৬১] প্রকৃতির মধ্যে সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণ সমান অবস্থায় থাকে। এই সূত্রে আরও বলা হয়েছে এই প্রকৃতি থেকেই সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পদার্থ তৈরি হতে হতে স্থূল ভূত আদি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ এই জগতে যে সকল জড় পদার্থ রয়েছে তা সবই প্ৰকৃতি নামক উপাদানের অংশ। 


এইবার দেখে নেওয়া যাক গীতা ২/৪৫ শ্লোক অনুযায়ী বৈষ্ণব বন্ধুরা যে দাবিটি করে থাকে তা কতটা সত্য। বেদের ৬ টি অঙ্গ রয়েছে যার মধ্যে একটি হল নিরুক্ত, বর্তমানে যে নিরুক্ত শাস্ত্রটি পাওয়া যায় তা লিখেছেন ঋষি য়াস্ক। নিরুক্তের ৭/১ অনুযায়ী বেদের প্রতিটি মন্ত্রের তিন প্রকার অর্থ হয়। এইবার এই বিষয়ে প্রাচীন কিছু নিরুক্ত টীকাকারের মান্যতা দেখে নেওয়া যাক- 


#স্কন্দস্বামী


সর্বদর্শনেশু চ সর্বে মন্ত্রা য়োজনীয়াঃ।  কুতঃ ? স্বয়মেব ভাষ্যকারেণ সর্বমন্ত্রাম্ ত্রিপ্রকারস‍্য বিষয়স‍্য প্রদর্শনায় অর্থবাচঃ পুষ্পফল মাহ ইতি যজ্ঞাদীনাম্ পুষ্পফলত্বেন প্রতিজ্ঞানাত্।


[ নিরুক্ত ৭/৫, স্কন্দস্বামী টীকা] 


অর্থাৎ সর্ব পক্ষে সমস্ত মন্ত্রের যোজনা করা উচিত। কেননা স্বয়ং ভাষ্যকার (নিরুক্তকার য়াস্ক) সমস্ত মন্ত্রে তিন প্রকারের বিষয় কথন করার জন্য অর্থ কে মন্ত্ররূপী বাক্ এর পুষ্প ফল বলেছেন। এবং যজ্ঞ আদিকে পুষ্প বা ফল বলেছেন।



#দুর্গাচার্য


আধ্যাত্মিকাধিদৈবতাধিয়জ্ঞাভিবায়িনাং মন্ত্রাণামর্থাঃ পরিজ্ঞায়ন্তে।


[নিরুক্ত ১/১৮ দুর্গাচার্য টীকা]


দুর্গাচার্য এখানে তিন প্রকারের অর্থের কথা বলেছেন। 


তস্মাদেতেষু য়াবন্তোঽর্থা উপপদ্যেরন্নধিদৈবাধ্যাত্মাধিয়জ্ঞাশ্রয়া সর্ব এব তে য়োজ্যাঃ মাত্রাপরাধোঽস্তি।


[নিরুক্ত ২/৮, দুর্গাচার্য টীকা] 


আধিদৈবিক আধ্যাত্মিক এবং অধিযজ্ঞে  আশ্রিত যতটা অর্থ সম্ভব হয়, সেগুলোর যোজনা করা উচিত। এমনটা করা কোনো অপরাধ নয়। 



#ঋষি দয়ানন্দও একই মান্যতা দিয়েছেন- 


সর্বেমন্ত্রাস্ত্রিবিধানামর্থানাম্ বাচকা ভবন্তি। কেচিত্ পরোক্ষাণাং, কেচিত্ প্রত‍্যক্ষাণাং, কেচিদধ‍্যাত্মম্ বক্তুমর্হাঃ।


[ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা, প্রশ্নোত্তরবিষয়ঃ, ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী] 


অতএব বেদের প্রতিটি মন্ত্রের তিন প্রকারের অর্থ পাওয়া যায়, যেমন- আধ্যাত্মিক অর্থাৎ যা জীবাত্মা- পরমাত্মা বিষয়ক, আধিদৈবিক যা সূর্য, চন্দ্র আদি পদার্থ বিষয়ক এবং আধিযাজ্ঞিক বা আধিভৌতিক অর্থাৎ যাজ্ঞিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আদি বিষয়ক। অতএব গীতা ২/৪৫ শ্লোক অনুযায়ী যে দাবিটি করে থাকে আমাদের বৈষ্ণব বন্ধুরা তা শতভাগ মিথ্যা!কেননা শাস্ত্র অনুযায়ী বেদের প্রতিটি মন্ত্রের আধ্যাত্মিক অর্থ হয়। তাই এই কথা বলা পুরোই পাগলামি যে বেদের মধ্যে প্রধানত জড় প্রকৃতির বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।


এই শ্লোক নিয়ে বৈষ্ণবরা আরও ধরণের পাগলামি করে থাকে, বৈষ্ণবদের মতে বেদে যেহেতু প্রধানত জড় প্রকৃতির বিষয়ে আলোচনা রয়েছে তাই বেদে কে অতিক্রম করে গুণাতীত হতে বলা হয়েছে অর্থাৎ বেদ জ্ঞান অর্জন করার কোন দরকার নাই, গীতা মানলেই গুণাতীত হওয়া যাবে। বৈষ্ণবদের এই পাগলামি দেখে একটা ১০ বছরের বুদ্ধিমান শিশুও হাসবে! কিছুক্ষণের জন্য যদি ধরেও নেওয়া হয় বেদে শুধুই জড় প্রকৃতির বিষয়ে কথন রয়েছে আর গীতায় বলা হয়েছে এই সকল গুণ অতিক্রম করতে। তো এই ত্রিগুণ যুক্ত প্রকৃতির বিদ্যা (বেদ) না জেনেই কি এই ত্রিগুণকে অতিক্রম করা যাবে ? উদাহরণ স্বরূপ একজন ব্যক্তিকে বলা হলো যে- আপনি আর মাত্র ১০০ কিমি পথ অতিক্রম করলেই দিল্লি পৌঁছে যাবেন। তার মানে কি এই যে ওই ব্যক্তিকে ১০০ কিমি পথ যেতে বারণ করা হচ্ছে ? ১-৯ শ্রেণীর বিদ্যা অতিক্রম করলে ১০ শ্রেণীতে ওঠা যায়। এর মানে কি এই যে ১-৯ শ্রেণীর বিদ্যা ত্যাগ করে ১০ শ্রেণীতে ওঠা সম্ভব ? সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি জড় প্রকৃতির গুণ সমূহকে আগে জানতে হবে তারপরই সেই গুণ গুলোকে অতিক্রম করা সম্ভব, অন্যথা সম্ভব নয়। এখন কিছু বৈষ্ণব বলতে পারে যে 'আমরা জড় প্রকৃতিকে জানতে চাই না, না জানলেও ঈশ্বর কে পাওয়া যাবে গীতা ১৮/৬২, ৬৬ শ্লোক মানলেই হবে'। আমি এই সকল বৈষ্ণবদের বলতে চাই যে গীতা ১৩/২৪ শ্লোকে স্পষ্ট করে বলা আছে প্রকৃতি কে এবং ঈশ্বর কে জানলে মোক্ষ লাভ হবে। অতএব গীতা ২/৪৫ শ্লোকে যদি প্রকৃতির বিদ্যাকে জানতে বারণ করে, তাহলে তো এই বৈষ্ণবরা নিজেই গীতাকে স্ববিরোধী ও মিথ্যা শ্লোকের গ্রন্থ বানিয়ে দিচ্ছে। 



#শেষে এটাই বলবো যে গীতা গীতা করে লাফানো এবং বেদ কে তুচ্ছ মনে করা প্রাণীদের উদ্দেশ্যে বলবো যে আপনারা গীতা কে আগে ভালো করে পড়ুন। গীতা ঠিক করে না পড়ে ও বুঝে লম্ফঝম্প করা বন্ধ করুন! আপনাদের বৈষ্ণবদের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে এর জন্য নিজেদের বিশাল ভাবার কিছু নাই, জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেই যে তা সত্যের পথ এমনটা মনে করা ভ্রম মাত্র। বর্তমান সময়ে খ্রিষ্টান মতবাদের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি তাদের সারা বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি খ্রিস্টান রয়েছে। তাই কেউ যদি বলে খ্রিস্টানরা সত্যের পথে আছে এমনটা ভাবা মুর্খতাপূর্ণ। ধর্ম মিথ্যা বা অন্ধবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে চলে না, যা অযৌক্তিক, মিথ্যা তা ধর্মের অংশ হতে পারে না। স্রষ্টা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি তার তৈরি ধর্মও সত্য। 



নমস্তে

সত্যমেব জয়তে

কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্

সনাতন ধর্মের জয় হোক

জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩