■ কোরআন কী আল্লাহর সৃষ্টি?
- ইসলামের প্রথম যুগের বেশ পরে তৎকালীন আলেমদের মধ্যে একটি প্রশ্ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে যে, কোরআন কি অনাদি অনন্ত, নাকি আল্লাহ পাকের সৃষ্ট? মু‘তাযিলী দার্শনিকগণ কোরআন মজীদকে আল্লাহর সৃষ্ট বলে দাবী করেন এবং অদৃষ্টবাদী (জাবারী) আলেমগণ কোরআনকে অনাদি বলে দাবী করেন। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে কাফের ও মুরতাদ এবং হত্যাযোগ্য বলে ফতোয়া দিতে শুরু করে। পরবর্তীতে আব্বাসীয় খিলাফতে শাসকরা বহু আলেমকে এই দ্বন্দ্বে হত্যা করে। বর্তমানে শিয়া-সুন্নী নির্বিশেষে মুসলমানদের মধ্যে মোটামুটিভাবে এ ধারণা বিরাজ করে যে, যেহেতু আল্লাহ্ তা‘আলা ছাড়া আর কোনো কিছুই অনাদি নয়, সুতরাং কোরআন মজীদও অনাদি নয়, তথা আল্লাহ্ কর্তৃক সৃষ্ট। কিন্তু পরবর্তীকালে ইবনে তাইমীয়াহ্ ও ‘আবদুল ওয়াহ্হাব্ নজদীর মাধ্যমে ইসলামে যে গোঁড়া ইফরাত্বী ধারা গড়ে ওঠে তারা এ বিষয়টিকে নতুন করে গুরুত্ব প্রদান করে এবং যারা কোরআনকে অনাদি বলে স্বীকার করে না তাদেরকে কাফের বলে অভিহিত করে।
‘কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি নয়’- এই বিষয়ে বেশ কিছু বিখ্যাত ইসলামিক আলেমের মতামত পাওয়া যায়, সেগুলো হচ্ছে,
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রা. বলেন,
“কোরআন আল্লাহ কালাম (বাণী); মাখলুক বা সৃষ্ট নয়। যে ব্যক্তি মনে করে যে, কোরআন আল্লাহর মাখলুক (সৃষ্ট) সে জাহমী-কাফির। আর যে ব্যক্তি কোরআন আল্লাহর কালাম বলে চুপ থাকে- মাখলুক না কি মাখলুক নয় সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করে না-সে ১ম ব্যক্তির থেকেও নিকৃষ্ট।
ইমাম ইবনে আব্দুল ইয আল হানাফি (তাহাবীয়া গ্রন্থের ভাষ্যকার), বলেন:
“চার মাযহাব সহ পূর্বসূরি ও পরবর্তী মনিষীদের সকলেই একমত যে, আল্লাহর কালাম মাখলুক নয়।
ইমাম ইবনে তাইয়িমা রাহ .এর ব্যাপারে অত্যন্ত দৃঢ়তা সূলভ বক্তব্য আছে। তিনি ‘কোরআন আল্লাহর সৃষ্টি’ মতবাদে বিশ্বাসীদেরকে অত্যন্ত শক্তিশালীভাবে জবাব দিয়েছেন।
শায়খ হাফেয আল হাকামী রহ. বলেন:
“কোরআন প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর কালাম বা বাণী। অক্ষর-সমূহ এবং তার অর্থ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এ নয় যে, আল্লাহর কালাম বলতে শুধু কুরআনের শব্দগুলোকে বুযায়। এমনিভাবে শব্দ ছাড়া শুধু অর্থগুলোর নাম আল্লাহর কালাম নয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মাধ্যমে কথা বলেছেন এবং তাঁর নবির উপর অহি আকারে তা নাযিল করেছেন। মুমিনগণ তা বিশ্বাস করেছে।
সুতরাং আঙ্গুলের মাধ্যমে কোরআন লিখা, জবানের মাধ্যমে তা তেলাওয়াত করা, অন্তরের মাধ্যমে তা মুখস্থ করা, কান দিয়ে শুনা এবং চোখ দিয়ে দেখলেই তা আল্লাহর কালাম থেকে বের হয়ে যায় না। আঙ্গুল, কালি, কলম এবং কাগজ এগুলোর সবই আল্লাহর সৃষ্টি । কিন্তু এ সব দিয়ে যা লেখা হয়েছে তা সৃষ্টি নয়। ঠিক তেমনি জবান এবং আওয়াজ আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু জবান দিয়ে তা তেলাওয়াত করা হচ্ছে তা মাখলুক তথা সৃষ্টি নয়। বক্ষসুমহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু তাতে যে কোরআন সংরক্ষিত আছে, তা মাখলুক নয়। কান-সমূহ আল্লাহর সৃষ্টি কিন্তু কান দিয়ে কোরআন আমরা শুনছি, তা মাখলুক নয়।
অধিকাংশ ইসলামিক আলেমের মত হচ্ছে, কোরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহর কাছে তা পুনরায় ফেরত যাবে। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাত বা গুণাগুন বা বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং যে বলবে আল্লাহর কোন সিফত বা গুণ হচ্ছে সৃষ্টি বা মাখলুক, সে কাফের ও মুরতাদ। তাকে পুনরায় ইসলামে ফেরত আসতে বলা হবে। ফিরে আসলে তো ভাল, অন্যথায় তাকে কাফের হিসেবে হত্যা করা হবে। এই বিষয়ে আরো জানার জন্য [ তথ্যসূত্র ২,৩ ] পড়ুন। উল্লেখ্য, এই অংশে উল্লেখিত তিনটি রেফারেন্স একটি ইসলামিক ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করা ছাড়া নেয়া হয়েছে।
■ কোরআন কী সরাসরি আল্লাহর বাণী?
বেশিরভাগ মুসলমানই এই কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, কোরআনের প্রতিটি বাক্য হচ্ছে সরাসরি আল্লাহর মুখ থেকে মানুষের জন্য সুনির্দিষ্ট বাণী বা নির্দেশনা কিংবা বলা যেতে পারে জীবন বিধান। কোরআনেই বলা আছে,
এবং এটা কোন কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর।
এবং এটা কোন অতীন্দ্রিয়বাদীর কথা নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর।
এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ।
সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত,
তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম,
অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা।
তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না।
কোরআন ৬৯ আয়াত ৪১ – ৪৭
ধরে নিচ্ছি কোরআন আল্লাহর সরাসরি বানী, এবং তা সৃষ্টির আদিকাল থেকে লাওহে মাহফুজে লিখিতভাবে সংরক্ষিত ছিল। এরপরে নবী মুহাম্মদ নবুয়ত লাভ করেন, জিব্রাইলের মাধ্যমে আল্লাহ সেই পবিত্র কেতাবে আল্লাহ পাক যা বলেছিলেন তা মুহাম্মদের কাছে প্রেরণ করেন। এসব ধরে নিলে বোঝা যাচ্ছে, কোরআনের মূল বক্তা আল্লাহ পাক, এবং নবী মুহাম্মদের ওপর তা নাজিল হয়েছে মাত্র। জিব্রাইল ছিলেন বাহক মাত্র, মুহাম্মদ ছিলেন মেসেজঞ্জার নবী/রাসুল। জিব্রাইল এবং মুহাম্মদের দায়িত্ব ছিল, আল্লাহ পাক যা সরাসরি বলেছেন, হুবুহু সেইসব আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়া। নিজেরা সেই কথাগুলোর মধ্যে কোন বক্তব্য না ঢোকানো বা কোন কথার সামান্যতম কোন পরিবর্তন না করা। কিন্তু কোরআনে এই ধারাটি ঠিক রাখা হয় নি। কোথাও আল্লাহ বলছেন, কোথাও নবী বলছেন, আবার কোথাও মনে হচ্ছে এগুলো জিব্রাইলের বক্তব্য, আবার কোথাও আল্লাহর বান্দারা আল্লাহকে উদ্দেশ্য করে বলছেন। এরকম অসংখ্য সূরা পাওয়া যায়, সেখানে এক এক সময় বক্তা এক এক রকম। সব যে আল্লাহর সরাসরি বক্তব্য না, তার অসংখ্য প্রমাণ আছে। যেমন ধরুন, নিচের সূরাটি। এই সূরাটি কী কোন অবস্থাতেই আল্লাহর বক্তব্য বলে মেনে নেয়া যায়? তাহলে আল্লাহ কোন আল্লাহর কাছে সাহায্য চাচ্ছে? স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, বক্তব্যগুলো অন্য কারো, সরাসরি আল্লাহর বক্তব্য হতেই পারে না।
- পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে (শুরু করছি)।
- আল্লাহরই জন্য সমস্ত প্রশংসা, যিনি বিশ্বজগতের রাব্ব।
- যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়।
- যিনি বিচার দিনের মালিক।
- আমরা আপনারই ইবাদাত করছি এবং আপনারই নিকট সাহায্য চাচ্ছি।
- আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।
- তাদের পথ, যাদের আপনি অনুগ্রহ করেছেন। তাদের পথে নয়, যাদের প্রতি আপনার গযব বর্ষিত হয়েছে, তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। ( সূরা ফাতিহা )
যেমন ধরুন, করিম বলছে তার ছেলেকে রহিমকেঃ
হে রহিম, বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাও, যা তোমার শরীরের জন্য ভাল।
অথবাঃ
হে রহিম, বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খাও, যা আমি তোমার জন্য নিয়ে আসি। নিশ্চয়ই আমি উত্তম খাবার বাজার থেকে কিনে আনি।
কিন্তু এই কথা পিতা করিম তার ছেলে রহিমকে কখনই বলবে না, এরকম কেউ বললে কথাগুলো তার ছেলে রহিমের বক্তব্য বলেই বোঝা যাবেঃ
- শুরু করছি বাজার থেকে উত্তম খাবার নিয়ে আসা পিতা করিমের নামে
- সম্মানীত পিতা করিমই উত্তম খাবার বাজার করে আনেন
- যিনি অত্যন্ত দয়ালু, খুবই উদার
- বাজারের তাজা সবজি আর মাছ উনিই সবচেয়ে ভাল চেনেন
- আমরা আপনার কাছ থেকেই স্কুল টিফিনের টাকা পাই
- আমরা আপনার কাছ থেকেই স্কুলের বেতনের টাকা চাই
- হে পিতা, আমাদেরকে বিকাল বেলা ফুটবল খেলতে দিন
- আর যারা আপনার খাবার খেয়ে আপনার তোষামোদি করে না,
- আপনার মাথা আর পিঠ টিপে দেয় না,
- তাদের ওপর গযব নাজিল করুন
আবার যেমন নিচের সূরাটি লক্ষ্য করি।
- হে মানবসমাজ, তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন। [ কোরআন ৪ঃ১ ]
- যে কেউ আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্যতা করে ও তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন । [ কোরআন ৪ঃ১৪ ]
- আর তোমরা আকাংক্ষা করো না এমন বিষয়ে যাতে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের একের ওপর অন্যের শ্রেষ্টত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ, নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত। [ কোরআন ৪ঃ৩২ ]
উপরের সূরার আয়াতগুলো পড়ে স্পষ্টই মনে হচ্ছে, কথাগুলো সরাসরি আল্লাহ পাকের কথা নয়। মুহাম্মদের কথা, জিব্রাইল কিংবা অন্য কারো। কোরআনের প্রতিটি শব্দ যদি আল্লাহ পাকেরই বক্তব্য হয়ে থাকে, তাহলে এই সূরাগুলো হওয়ার কথা নিম্নরূপঃ
- হে মানবসমাজ, তোমরা তোমাদের পালনকর্তা অর্থাৎ আমাকে ভয় কর, আমি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছি ও আমি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছি।
- যে কেউ আমার এবং আমার রাসুলের অবাধ্যতা করে ও তার সীমা অতিক্রম করে, আমি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবো।
- আর তোমরা আকাংক্ষা করো না এমন বিষয়ে যাতে আমি তোমাদের একের ওপর অন্যের শ্রেষ্টত্ব দান করেছি। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ, নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আমার কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আমি সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত।
তাহলে, এই সূরাগুলোর এইসব বক্তব্য কী আল্লাহ নিজ মুখে বলেছেন? নাকি আল্লাহ বলেছেন একভাবে, জিব্রাইল বলেছে আরেকভাবে, আর মুহাম্মদ লিখেছে আরেকভাবে? মানে, ব্যক্তি ভেদে বক্তব্যের কী পরিবর্তিত হয়েছে? সরাসরি আল্লাহর বানী হলে তো অন্যরকম হওয়া উচিত ছিল।
অনেক মুসলিমই বলবেন, এগুলো আল্লাহ পাক বলে আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, কীভাবে আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করতে হয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, এই সূরাটিও কী আল্লাহর মুখের বাণী?
তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল
করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে।
কোরআন ৫৮ঃ২২
এরকম অসংখ্য সূরা আছে, যেখানে মূল বক্তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ বলেই বোঝা যায়। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আল্লাহ মুহাম্মদের কাছে সূরাটি একভাবে পাঠিয়েছিলেন, আর মুহাম্মদ সূরাটি নিজের মত করে বলেছেন। আল্লাহ আসলে বলেছিলেন,
আমি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবো, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আমি(আল্লাহ) তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আমার (আল্লাহর) প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আমার (আল্লাহর) দল। জেনে রাখ, আমার (আল্লাহর) দলই সফলকাম হবে।
এই বক্তব্যটি জিব্রাইলকে বলা হয়েছিল, যেখানে জিব্রাইল কথাটি শুনে মুহাম্মদকে বলেছেন, মুহাম্মদ মুসলিমদের বলেছেন। যার কারণে বাচ্য পরিবর্তিত হয়ে গেছে।
যেমন ধরুন, আল্লাহ বলছেঃ “আমি সর্বশক্তিমান। আমি সব করতে সক্ষম।” এই কথাটি জিব্রাইল শুনলো। এবং তিনি মুহাম্মদকে বললেন, “আল্লাহ বলেছেন যে, তিনি সর্বশক্তিমান। তিনি সব করতে সক্ষম।” মুহাম্মদ কথাটি শুনলো। এবং তিনি মুসলিমদের বললেন যে, আল্লাহর কাছ থেকে ওহী আসলো যে, আল্লাহ জানিয়েছেন, “আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি সব করতে সক্ষম। ”
লক্ষ্য করে দেখুন, একই বক্তব্য, তিনজনার কাছে এসে বক্তব্যগুলোর কিছু পরিবর্তন ঘটে গেল। তাহলে, কোরআনে মুহাম্মদ বা জিব্রাইল বা বান্দাদের যেসকল বক্তব্য পাওয়া যায়, সেগুলো তো আল্লাহর সরাসরি বক্তব্য হতে পারে না। আল্লাহ তো কথাগুলো সেভাবে বলবেন না।
আবার ধরুন, নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুনঃ
তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর
আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর
আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেুগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।
কোরআন ৬ঃ৯৯
এবারে ভেবে বলুন তো, উপরের আয়াতে তিনিই কে এবং আমি কে? একই বাক্যের মধ্যে যদি তিনি এবং আমি ব্যবহৃত হয়, তা কী একই জনকে উদ্দেশ্য করে বলা হতে পারে?
আরো দেখুনঃ
তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্রপুঞ্জ সৃজন করেছেন যাতে তোমরা স্থল ও জলের অন্ধকারে পথ প্রাপ্ত হও। নিশ্চয় যারা জ্ঞানী তাদের জন্যে
আমি নির্দেশনাবলী বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছি।
কোরআন ৬ঃ৯৭
তিনিই তোমাদের কে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন। অনন্তর একটি হচ্ছে তোমাদের স্থায়ী ঠিকানা ও একটি হচ্ছে গচ্ছিত স্থল। নিশ্চয়
আমি প্রমাণাদি বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের জন্যে, যারা চিন্তা করে।
কোরআন ৬ঃ৯৮
লক্ষ্য করুন, একই আয়াতে একবার বলা হচ্ছে তিনি, আবার বলা হচ্ছে আমি। এই আয়াতটির মূল বক্তা কে? আল্লাহ, নবী, জিব্রাইল না বান্দা?
আবার ধরুন, নিচের আয়াতটি যদি পর্যালোচনা করিঃ
আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না, সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। হে আমাদের পালনকর্তা, যদি আমরা ভুলে যাই কিংবা ভুল করি, তবে আমাদেরকে অপরাধী করো না। হে আমাদের পালনকর্তা! এবং আমাদের উপর এমন দায়িত্ব অর্পণ করো না, যেমন আমাদের পূর্ববর্তীদের উপর অর্পণ করেছ, হে আমাদের প্রভূ! এবং
আমাদের দ্বারা ঐ বোঝা বহন করিও না, যা বহন করার শক্তি আমাদের নাই। আমাদের পাপ মোচন কর। আমাদেরকে ক্ষমা কর এবং আমাদের প্রতি দয়া কর। তুমিই আমাদের প্রভু। সুতরাং কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কে সাহায্যে কর।
কোরআন ২ঃ ২৮৬
উপরের সূরার আয়াতটি কার বক্তব্য? প্রথম লাইনটি আল্লাহ বা নবী বা জিব্রাইলের বক্তব্য হতে পারে। কিন্তু পরের লাইনগুলো তো পরিষ্কারভাবেই মানুষের বক্তব্য। কোন মানুষের প্রার্থণা, বা প্রত্যাশা। মানুষের কথাবার্তা কোরআনে আল্লাহর বানী হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে কীভাবে? তাছাড়া, আল্লাহ শুরুর লাইনে যেখানে বলেই দিচ্ছেন, আল্লাহ সাধ্যাতীত কাজের ভার কারো ওপর চাপান না, পরের লাইনে আবার বলা হচ্ছে, আমাদের ওপর এমন ভার চাপিও না যা বহন করার শক্তি আমাদের নেই। পূর্ববর্তীদের ওপর যা চালিয়েছো! আয়াতটির মধ্যে প্রবল স্ববিরোধীতা লক্ষ্য করছেন?
এরকম ভাষাগত এবং ব্যাকরণগত আরো অসংখ্য সমস্যা পাওয়া যায়, যার তালিকা আমরা ভবিষ্যতে প্রস্তুত করবো বলে আশা রাখি। আপাতত অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করছি।
0 Reviews:
Post a Comment