google01b5732cb2ec8f39 August 2022 ~ আর্যবীর आर्यवीर aryaveer

Recent News

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

শ্রাদ্ধ বিষয়ক শাস্ত্রীয় ও যৌক্তিক আলোচনা

              শ্রাদ্ধ বিষয়ক শাস্ত্রীয় ও যৌক্তিক আলোচনা



প্রায় হাজারও বছর ধরে চলছে আমাদের আর্যাবর্ত দেশে ধর্ম নিয়ে ব্যবসা। এই কথা সকলের জেনে রাখা উচিত যে এই আর্যাবর্ত দেশ থেকেই ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছিল আবার এই আর্যাবর্ত দেশ থেকেই সর্বপ্রথম অধর্মেরও প্রচার শুরু হয়েছিল। ঋষি কপিল সাংখ্য দর্শনে লিখেছেন- যখন সমাজে উত্তম-উত্তম উপদেশকারী থাকেনা তখন অন্ধ পরম্পরা চলতে থাকে [সাংখ্যসূত্র ৩/৭৯,৮২]। অর্থাৎ বলা যায় যখন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের সংখ্যা কমতে শুরু করে সেই সময় অল্প শিক্ষিত ভণ্ড ব্যক্তিরা ধর্মের নামে ব্যবসা শুরু করে। আর এই সমস্ত ধর্ম ব্যবসায়ীদের বর্তমান সময়ে ব্রাহ্মণ বলা হয়, যদিও ব্রাহ্মণ তাকেই বলে যিনি বেদজ্ঞ, যিনি বেদানুকূল জীবন ধারণ করেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে নিজেদের জন্মগত ব্রাহ্মণ বলে চেল্লানো কথিত ব্রাহ্মণরা বেদ পড়া তো দূরের কথা বেদ পড়ার ২% যোগ্যতাও তাদের নাই, এরা কোনো ভাবেই প্রকৃত ব্রাহ্মণ নয়। 


এই সমস্ত ধর্ম ব্যবসায়ী কথিত ব্রাহ্মণদের ডজন ডজন ব্যবসার মধ্যে একটি ব্যবসা হলো মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করা। কোনো ব্যক্তি যতই পাপ করুক না কেন চিন্তার কোনো কারণ নেই, মৃত্যুর পর যদি সেই ব্যক্তির নামে শুধু মাত্র শ্রাদ্ধ করা হয় তাহলে সেই ব্যক্তি স্বর্গ লাভ করবে। আমাদের বৈদিক শাস্ত্রে মনুষ্যের ১৬ টি সংস্কারের কথা রয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে কোথাও শ্রাদ্ধ নামক সংস্কার নাই। কেননা এটা পুরোই কুসংস্কার মাত্র। 


১৬ সংস্কার

১।গর্ভাধান

২।পুংসবন 

৩।সীমান্তোয়ন 

৪।জাতকর্ম

৫।নামকরণ

৬।নিষ্ক্রমণ

৭।অন্নপ্রাশন

৮।চূড়াকর্ম

৯।কর্ণবেধ

১০।উপনয়ন 

১১।বেদারম্ভ 

১২।সমাবর্তন 

১৩।বিবাহ

১৪।বানপ্রস্থ

১৫।সন্ন্যাস

১৬।অন্ত্যেষ্টি 

এই হলো আমাদের ১৬ সংস্কার, গর্ভাধান থেকে শুরু করে অন্তেষ্টি ক্রিয়া পর্যন্ত। শ্মশানে মৃতদেহ আগুনে দাহ করার ক্রিয়াকে "অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া" বলা হয়। অন্ত‍্যা অর্থাৎ অন্তিম এবং ইষ্টি অর্থাৎ যজ্ঞ বা শুভ কর্ম বা সংস্কার বোঝায়। এই অন্তিম সংস্কারকে নরমেধ, পুরুষমেধ, পুরুষযাগও বলা হয়। মৃতদেহ আগুনে দাহ করাই হল শেষ সংস্কার, এরপর শ্রাদ্ধ বা পিণ্ড দান আদি কোনো নিয়ম শাস্ত্র সম্মত নয়।


য়জুর্বেদ ৪০/১৫

বায়ুরনিলমমৃতমথেদং ভস্মান্তং শরীরম্।ওম্ ক্রতো স্মর ক্লিবে স্মর কৃতং স্বর।।

এই মন্ত্র অনুযায়ী শরীর ভস্ম করা অর্থাৎ অন্ত্যেষ্টি সংস্কারই শেষ সংস্কার। এরপর শরীরের জন্য অন্য কোন সংস্কারই অবশিষ্ট থাকে না।  শ্মশান ভূমিতে জ্বলন্ত চিতায় সমিধা, সুগন্ধি, রোগনাশক ও বুদ্ধিবদ্ধক ঔষধ এবং ঘৃত আহুতি দ্বারা মৃত শরীরকে ভস্মীভূত করাই অন্ত্যেষ্টি সংস্কার। জীব তার কৃত কর্মে ফল নিজেই ভোগ করে। বংশধরদের কোন কার্যই তাকে সাহায্য করতে পারে না।

বর্তমান সময়ে কোনো সনাতনী বন্ধুকে যদি জিজ্ঞাসা করা হয় মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করলে কি হয় ? তিনি উত্তরে বলবেন, যে মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ হবে সে স্বর্গ লাভ করবে। ঋষি বাল্মীকি লিখেছেন- 

য়দাচরতি কল্যাণি শুভম্ বা য়দি বাঽশুভম্ 

তদেব লভতে ভদ্রে কর্তা কর্মজমাত্মনঃ।।

মনুষ্য যেমন ভালো অথবা খারাপ কর্ম করে ঠিক তেমনই ফল ভোগ করে। কর্তা কে নিজের কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হয়।।

[বাল্মীকি রামায়ণ, অরণ্যকাণ্ড/ ৬৩/৬]


অতএব আপনি যে কর্ম করবেন [খারাপ বা ভালো] তার ফল আপনাকে ভোগ করতেই হবে। কিন্তু এই কথিত শ্রাদ্ধ অনুযায়ী যে যতই পাপী হোক না কেন তার মৃত্যুর পর যদি সন্তানেরা শ্রাদ্ধ করে তাহলেই তার স্বর্গ লাভ। বাহ কি দারুণ! এদের মতে স্বর্গ করা লাভ এতটাই সহজ! একজন চোর, ধর্ষক, খুনি, জঙ্গি, ব্যভিচারী ব্যক্তির মৃত্যুর পর যদি তার শ্রাদ্ধ করা হয় তাহলেই সেই ব্যক্তি মুক্তি লাভ করবে। ঈশ্বর হচ্ছেন ন্যায়কারী তিনি সকলকে কর্ম অনুযায়ী ফল প্রদান করেন। সনাতনী বন্ধুদের কাছে আমার জিজ্ঞাসা এই যে মনুষ্য কর্ম অনুযায়ী ফল প্রাপ্ত হয় নাকি শ্রাদ্ধ অনুযায়ী ? যদি কেউ বলেন মনুষ্যের কৃত কর্ম অনুযায়ী ফল প্রাপ্ত হয়। তাহলে মনুষ্যের কৃত কর্ম অনুযায়ী যখন ফল লাভ হয় তাহলে শ্রাদ্ধ কেন করা হয় ? যে ব্যক্তি স্বর্গ লাভের যোগ্য সে ব্যক্তি অবশ্যই স্বর্গ লাভ করবে, তাই না ? আবার কেউ যদি বলেন মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধ করলেই মুক্তি বা স্বর্গ লাভ হয় কৃতকর্ম অনুযায়ী নয়। তাহলে এটাই বলা যায় যে আপনার মান্য ঈশ্বর নিশ্চিতরূপে ঘুষখোর! কেননা আপনার মান্য ঈশ্বর বিচার করছেন না যে অমুক ব্যক্তি কিরূপ কর্ম করেছেন জীবিত অবস্থায়, সে কি আদৌ মোক্ষ লাভের যোগ্য ? ঈশ্বর এমনটা বিচার না করে তিনি শ্রাদ্ধ নামক ঘুষ নিয়ে যেকোনো ব্যক্তিকে মোক্ষ বা স্বর্গ লাভ করিয়ে দিচ্ছেন। অতএব যারা বিশ্বাস করেন মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করলেই সেই ব্যক্তি আত্মা স্বর্গ লাভ করে, তাদের মান্য ঈশ্বর ১০০% ঘুষখোর। 

যারা মনে করেন শ্রাদ্ধ অনুযায়ীই মুক্তি লাভ হয় তাদের মতানুসারে ঈশ্বর অবশ্যই বোকা, কেননা সে ফালতু ফালতু বেদের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মন্ত্র দিয়েছেন, তিনি যদি বোকা না হতেন তাহলে বেদের মধ্যে এতগুলো মন্ত্র না দিয়ে শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ বিষয়ক কিছু মন্ত্র দিতে পারতেন, কেননা জীবের মূল উদ্দেশ্য হলো মোক্ষ লাভ। এদিকে যারা শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানেন এবং মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধে বিশ্বাসী তাদের মতেও শ্রীকৃষ্ণ বোকা হওয়া উচিত, কেননা শ্রীকৃষ্ণ যদি বোকা না হতেন তাহলে তিনি গীতায় অর্জুন কে ফালতু ফালতু এত জ্ঞান দিতেন না। শুধুমাত্র মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ বিষয়ক কয়েকটা শ্লোক বলতেন তাহলেই তো হয়ে যেত। কেননা জীবের পরম লক্ষ মোক্ষ লাভ করা আর শ্রাদ্ধ করলেই তো স্বর্গ বা মোক্ষ লাভ তাই না ? 

মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করলেই মুক্তি, এই সকল উদ্ভট কথাবার্তায় কোনো যুক্তি নেই আর নেই কোনো বেদানুকূল শাস্ত্রীয় প্রমাণ। এই শ্রাদ্ধ হলো কথিত ব্রাহ্মণদের একটা ব্যবসা মাত্র, এর মধ্যে কোনো সত্যতা নেই। এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য গড়ুর পুরাণ আদি নানান কথিত পুরাণ লিখেছেন যার মধ্যে এই শ্রাদ্ধের বিধি বিদ্যমান। শ্রাদ্ধ শব্দটি শ্রদ্ধা থেকে এসেছে, জীবিত পিতা মাতার সেবা যত্ন করাই প্রকৃত শ্রাদ্ধ। আপনার পিতা মাতা যদি জীবিত থাকে তাহলেই আপনি তাদের সম্মান বা অসম্মান করতে সামর্থ্য হবেন এবং তারা সেটাকে অনুভব করতে পারবেন। আপনি যদি তাদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রাখেন তাহলে অবশ্যই আপনার পূণ্য হবে এবং আপনি যদি তাদের অসম্মান করেন, দুঃখ দেন তাহলে আপনার পাপ হবে। কিন্তু আপনি আপনার পিতা বা মাতাকে যতই শ্রদ্ধা করুন না কেন তার জন্য আপনার পিতা মাতার কৃত কর্মের ফল বদলে যাবে না। যে ব্যক্তি যেমন কর্ম করবে সেই অনুযায়ী পরমাত্মা তাকে পুনর্জন্ম দেবে অথবা স্বর্গ(মুক্তি) লাভ করাবে। কিন্তু যে সকল কথিত ব্রাহ্মণরা এই শ্রাদ্ধ প্রথা চালু করেছে, তাদের মতে আপনার পিতা মাতার স্বর্গ লাভ হবে তখন যখন আপনি আপনার পিতা মাতার শ্রাদ্ধ করবেন। ভেবে দেখুন এই কথিত ব্রাহ্মণরা নিজেদের নোংরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিরূপ হাস্যকর, ভিত্তিহীন বিধান তৈরি করেছে। 

এইবার বেদাদি শাস্ত্র থেকে দেখি মোক্ষ লাভ কখন সম্ভব-

য়জুর্বেদ ৪০/১১

সম্ভূতিং চ বিনাশং চ যস্তদ্বেদোভয়ং সহ ।

বিনাশেন মৃত্যুং তীৰ্ত্বাঽসম্ভূত্যাঽমৃতমশ্নুতে।।১১।

পদার্থ : হে মনুষ্য! (য়ঃ) যে বিদ্বান (সম্ভূতিম্) যারমধ্যে  পদার্থ উৎপন্ন হয় সেই কার্যরূপ সৃষ্টিকে (চ) এবং সৃষ্টির গুন, কর্ম, স্বভাবকে এবং (বিনাশম্) যার মধ্যে পদার্থ বিনষ্ট = অদৃশ্য হয়ে যায় ওই কারণরূপ প্রকৃতিকে তথা (চ) তার গুন, কর্ম, স্বভাবের (সহ) একত্রে (উভয়ম্ তত্) সেই কার্যকারণ রূপ জগতকে (বেদ) জানেন; তিঁনি ( বিনাশেন) নিত্য স্বরূপকে উপলব্ধি করার কারন (মৃত্যুম্) শরীর এবং আত্মার বিয়োগে উৎপন্ন দুঃখকেও (তীৰ্ত্বা) অতিক্রম করে (সম্ভূত্যা) শরীর ইন্দ্রিয় অন্তকরণ রূপ উৎপন্ন হওয়ায় কার্যরূপ, ধর্মকার্যে প্রবৃত্ত কারী  সৃষ্টির সহযোগে (অমৃতম্) মোক্ষ সুখকে প্রাপ্ত হয় ।


গীতা ১৩/২৪

 য়ঃ এবম্ বেত্তি পুরুষম্ প্রকৃতিম্‌ চ গুণৈঃ সহ ।

সর্বথা বর্তমানঃ অপি ন সঃ ভুয়ঃ অভিজায়তে ।২৪।

অর্থঃ- যে ব্যক্তি এই প্রকারে পরমপুরুষ কে আর গুণের সাথে প্রকৃতি কে জানেন ,সে সর্বথা সংসারে বর্তনাম থেকেও কর্ম ফল ভোগের জন্য জন্ম ধারণ করেনা । 

বেদ ও গীতার উক্ত কথন অনুযায়ী এটাই বলা যায় যে মোক্ষ লাভ করতে গেলে জড় প্রকৃতির বিদ্যা কে জানা আবশ্যিক। যখন জীব জড় প্রকৃতির বিদ্যাকে জানেন বা ঈশ্বরের সৃষ্টি প্রতিটি পদার্থের বিদ্যা সম্পর্কে এবং আধ্যাত্মিক বিদ্যা সম্পর্কে অবগত হন তখন জীব মোক্ষ লাভ করেন। স্রষ্টার সৃষ্টিকে না জেনে  স্রষ্টাকে জানা সম্ভব নয়। যেমন- স্রষ্টা কে ? একজন সাধারণ মুসলিম, খ্রিষ্টান বা সনাতনী এই প্রশ্নের সাধারণ উত্তর হিসেবে বলবেন যে যিনি আপনাকে- আমাকে, সূর্য, চন্দ্র, পৃথিবী আদি পদার্থ সৃষ্টি করেছেন বা যিনি জগৎ নির্মাণ করেছেন তিনি স্রষ্টা বা ঈশ্বর। যদি বলা হয় সূর্য আদি কোনো পদার্থের বিষয়ে কথন না করে উত্তর দিন যে স্রষ্টা বা ঈশ্বর কে ? তাহলে উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়, কেননা স্রষ্টার বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে পদার্থের সৃষ্টি বিষয়ে আলোচনা ছাড়া স্রষ্টার মাহাত্ম্য বিষয়ে জানা এবং অন্যকে জানানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ মোক্ষ লাভ করতে গেলে স্রষ্টার সৃষ্টি পদার্থ সমূহের বিদ্যা ও আধ্যাত্মিক বিদ্যা লাভ করতে হবে। যারা মনে করেন হরেকৃষ্ণ জপ, শ্রাদ্ধ, গঙ্গাতে স্নান, গীতা পাঠ করলে, ভাগবত পুরাণ পাঠ করলে, কাশী বৃন্দাবন আদি কথিত তীর্থ ভ্রমণ করলেই মোক্ষ লাভ হয়, তারা সকলেই ভ্রম জালে বসবাস করছেন। আমরা সনাতনীরা বিচারবুদ্ধি ত্যাগ করেছি, আমরা শুধুমাত্র অন্যের কথাকে অন্ধের মত মেনে চলি কিন্তু বিচার করিনা। ঋষি য়াস্ক লিখেছেন- মনুষ‍্যঃ কস্মাত্ মত্বা কর্মাণি সীব‍্যতি অর্থাৎ যিনি বিচার পূর্বক কর্ম করে তিনি মনুষ্য [নিরুক্ত ৩/৭]। ভেবে দেখুন তো আমরা কি সত্যিই মানুষ হতে পেরেছি ? ৪ এর সাথে ৪ যোগ করলে ৮ হয়, এইটা জানার জন্য মহান শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিত হতে হয়না, সাধারণই জ্ঞানই যথেষ্ট। ঠিক এমনই আমাদের সমাজে যে সকল কুসংস্কার রয়েছে, সেগুলোকে ধ্বংস করার জন্য সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট। 

মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী তার অমরত্ব গ্রন্থ সত্যার্থ প্রকাশে ও সংস্করবিধিতে শ্রাদ্ধ বিষয়ক মান্যতা খণ্ডন করেছেন👇

 প্রথম খণ্ডন

দ্বিতীয় খণ্ডন

সকল সনাতনী বন্ধুদের উচিত সত্যকে জানার চেষ্টা করা, যেকোনো সংস্কৃত বইকে ধর্মগ্রন্থ ভাবা বন্ধ করা উচিত, নিজেকে সাধু বলে পরিচয় দেওয়া কোন ব্যক্তি কি বললো সেটা ধর্মের অংশ মনে করার আগে সেই বিষয়ে বিচার করা। সনাতন ধর্মের প্রতিটি মান্যতা সত্য এবং তার মধ্যে যৌক্তিকতা অবশ্যই বিদ্যমান। মিথ্যা, যুক্তিহীন কোনো মান্যতা কখনোই সনাতন ধর্মের অংশ হতেই পারে না, এটা আমাদের মাথায় রাখা উচিত। আমরা যদি সকলে উদ্যোগ নেই যে কথিত ব্রাহ্মণদের তৈরি মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ করার ব্যবসাকে বন্ধ করবো, তাহলে খুবই তাড়াতাড়ি এই ব্যবসা বন্ধ করা সম্ভব কিন্তু আমরা যদি মূর্খের মতন কথিত ব্রাহ্মণদের এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে সাহায্য করি, তাহলে এই ব্যবসাকে বন্ধ করার ক্ষমতা কারোর নেই। আচাৰ্য় চাণক্য লিখেছেন-

     য়স‍্য নাস্তি স্বয়ম্ প্রজ্ঞম্ শাস্ত্রম্ তস‍্য করোতি কিম্।

     লোচনাভ‍্যাম্ বিহীনস‍্য দর্পণঃ কিম্ করিষ‍্যতি।।

যে ব্যক্তির বুদ্ধি নাই সেই ব্যক্তিকে শাস্ত্র কিছুই করতে পারবে না। যেমন চক্ষু বিহীন ব্যক্তিকে আয়না কিছুই দর্শন করাতে পারে না।

[চাণক্য নীতি ১০/৯]


নমস্তে

সত্যমেব জয়তে

কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্

সনাতন ধর্মের জয় হোক

জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩


ঋষি দয়ানন্দ কৃত য়জুর্বেদ ২৫/৭ ভাষ্যের ভ্রান্তি নিবারণ

 ঋষি দয়ানন্দ কৃত য়জুর্বেদ ২৫/৭ ভাষ্যের ভ্রান্তি নিবারণ


ঋষি দয়ানন্দকৃত য়জুর্বেদ ২৫/৭ মন্ত্রের ভাষ্যের হিন্দি অনুবাদ নিয়ে বাংলা ও হিন্দি ভাষী পৌরাণিক বন্ধুরা খুবই খিল্লি করে থাকে এবং ঋষি দয়ানন্দ কে নানান ভাষায় গালিও দিয়ে থাকে।ফলে বৈদিক বন্ধুদের মনে শঙ্কা উৎপন্ন হতেই পারে যে তাহলে কি সত্যিই ঋষি দয়ানন্দ ভুল ভাষ্য করেছেন ? পৌরাণিকদের আচরণ দেখলে বোঝা যায় তারা ঋষি দয়ানন্দকে গালি দিলে নিজেকে গর্বিত মনে করে। যে সকল পৌরাণিক বন্ধুরা উক্ত মন্ত্রের হিন্দি অনুবাদ অনুসারে ঋষি দয়ানন্দকে গালি দিয়ে থাকে তারা কি একবারও দেখার চেষ্টা করে যে তাদের পৌরাণিক বিদ্বানেরা এই মন্ত্রের অর্থ কিরূপ করেছে ? যদি তারা পৌরাণিক বিদ্বানদের মহাবিকৃত ভাষ্য দেখতো তাহলে কখনোই ঋষি দয়ানন্দকে নিয়ে খিল্লি করতো না। ঋষি দয়ানন্দ আদৌ কোনো ভুল করেছে নাকি অন্য বিদ্বানেরা ভুল করেছে এই বিষয়ে সবার শেষে বিস্তৃত আলোচনা করা হবে। আগে দেখে নেওয়া যাক পৌরাণিক বিদ্বানেরা য়জুর্বেদ ২৫/৭ মন্ত্রের কিরূপ অর্থ করেছে-

■ আচাৰ্য সত্যব্রত সামশ্রমী, মহিধরের ভাষ্যের ওপর আধারিত■ 

য়জুর্বেদ ২৫/৭


পুষাকে বনিষ্ঠু দ্বারা প্রীত করি, অন্ধঅহিদিগকে স্থূল গুদা দ্বারা, সর্পগণকে গুদা দ্বারা, বিহতদিগকে আন্ত্র দ্বারা, জলদেবীকে বস্তি দ্বারা, বৃষণকে অণ্ডদ্বয় দ্বারা, বাজিনকে শেপ দ্বারা, প্রজাকে রেতঃ দ্বারা, চাষদিগকে পিত্ত দ্বারা প্রদরদিগকে পায়ু দ্বারা কূশ্মগণকে শকপিণ্ড দ্বারা প্রীত করি। 

■স্বামী করপাত্রীর ভাষ্য, অদ্বৈতবাদীদের একজন মহান বিদ্বান ব্রহ্মস্বরূপ■

য়জুর্বেদ ২৫/৭


बड़ी आंत के स्थानीभूत घृत से पूषा देवता को, स्थूल गुदा से अन्धे सर्पों को, गुदा के अन्य भागों से सर्पों को, छोटी आँतों से विह्रुत देवता को बस्ति से जल देवता को, वृषणों से कामनावर्षी वृषण देवता को मेद्र से बाजी को वीर्य से प्रजा को पित्त से चाप को, पायु से प्रदर को और लीद के पिण्डों से कूश्म को प्रसन्न करता हूँ।।७।।

■জিজ্ঞাসাঃ পৌরাণিকদের মহান বেদ ভাষ্যকার মহিধর ও অদ্বৈতবাদী ব্রহ্মস্বরূপ করপাত্রী উক্ত মন্ত্রের প্রায় একই ধরণের অর্থ করেছে,তারা লিখেছে- স্থূল গুদা দ্বারা অন্ধ সাপকে, গুদার অন্য ভাগ দিয়ে সর্প কে প্রসন্ন বা প্রীত করি। আমি সকল মহিধর ভক্ত ও করপাত্রী ভক্ত অদ্বৈতবাদীদের কাছে জানতে চাই যে আপনারা পশু নাকি প্রাণীর মলদ্বার দ্বারা অন্ধ সাপ কে প্রসন্ন করেন ? নাকি নিজেদের ম*লদ্বার দিয়ে অন্ধসাপ কে প্রসন্ন করেন ? স্থূল ম*লদ্বার দিয়ে অন্ধ সাপ কে প্রসন্ন করার প্রযুক্তিবিদ্যাটা কেমন, তা জানতে চাই! এবং এটাও জানতে চাই যে স্বয়ং করপাত্রী বা মহিধরও নিশ্চয় ম*লদ্বার দিয়ে অন্ধ সাপকে প্রসন্ন করেছিল ? যেহেতু মায়াবাদীদের মতে করপাত্রী ব্রহ্মস্বরূপ ছিলেন, তাই বলা যায় যে করপাত্রী ভুল করতেই পারে না। আমি আশা রাখি এইবার থেকে সকল অদ্বৈতবাদীরা স্থূল মলদ্বার দিয়ে অন্ধ সাপ কে এবং সাধারণ সাপ কে প্রসন্ন করার যথাযথ চেষ্টা করবে।

■ডঃ রেখা ব্যাস ( এম.এ., পি-এস. ডি.)>সংস্কৃত সাহিত্য প্রকাশন> আচার্য উব্বট এর অনুবাদের ওপর আধারিত■

য়জুর্বেদ ২৫/৭


बड़ी आंत पूषा देव, स्थूल गुदा अंधे सर्प देव, सामान्य गुदा अन्य सर्प देवों, बची हुई आंतें विद्युत् देव, वस्ति भाग जल देव, अंडकोष वृषण देव व उपस्थ बल देव से संबंधित हैं. वीर्य प्रजापति देव, पित्त चाष देव, पायु (गुदा) प्रदर देव व शक पिंड कूश्म देव से संबंधित हैं।। ७।।

■জিজ্ঞাসাঃ এখানে বলা হচ্ছে ''স্থূল গুদা অন্ধ সর্প দেব, সামান্য গুদা অন্য সর্প দেব সম্বন্ধীয়।'' খাজুরাহ মন্দিরের মূর্তি প্রিয় সকল পৌরাণিক বন্ধুদের কাছে আমি জানতে চাই যে কোন পশু বা প্রাণীর স্থূল ম*লদ্বার অন্ধ সাপ দেবতা সম্বন্ধীয় ? এবং কাদের সামান্য মলদ্বার অন্য সাপ দেবতা সম্বন্ধীয় ? কোন পশু বা প্রাণীর স্থূল ও সামান্য ম*লদ্বার কিভাবে সাপ সম্বন্ধীয় হতে পারে ? কারোর ম*লদ্বার থেকে সাপের বিবরণ পাওয়া কি সম্ভব ? কি আশ্চর্য! পৌরাণিক বন্ধুরা আপনাদের বিদ্বানেরা খুবই সুন্দর বেদ ভাষ্য করেছে তাই না ? 

■শ্রীরাম শর্মা আচার্য এবং ওনার শিষ্য ভগবতী দেবী শর্মার ভাষ্য■

য়জুর্বেদ ২৫/৭


स्थूल आँत का भाग पूषादेवता के लिए, स्थूल गुदा नेत्रहीन सर्पों के लिए तथा अन्य सर्पों के लिए सामान्य गुदा का भाग, आँतों का शेष भाग विह्रुत देवता के लिए, वस्ति भाग को जल के लिए, अण्डकोषों की शक्ति वृषणदेव के लिए, उपस्थ की शक्ति वाजी देव के लिए, वीर्य प्रजा के लिए, पित्त 'चाष' देवता के लिए, गुदा का तृतीय भाग प्रदरदेवों के लिए तथा शकपिण्डों को कूश्म देवता की प्रसन्नता के लिए समर्पित करते हैं ॥७ ॥

শ্রীরাম শর্মাও প্রায় মহিধর, করপাত্রীর মতোই লিখেছে 'স্থূল মলদ্বার অন্ধ সাপের জন্য এবং অন্য সাপের জন্য সামান্য মলদ্বার ভাগ প্রসন্নতার জন্য সমর্পিত করি।'

এইবার আলোচনা করা যাক ঋষি দয়ানন্দকৃত সংস্কৃত ভাষ্যের হিন্দি অনুবাদের বিষয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে ঋষি দয়ানন্দ কি আদৌ কোনো ভুল লিখেছেন ? উত্তর হবে 'না' কেননা ঋষি দয়ানন্দ য়জুর্বেদ, ঋগ্বেদ এর ভাষ্য করেছেন সংস্কৃত ভাষায়, আর সেই ভাষ্যকে হিন্দি অনুবাদ করেছে অন্যান্য বিদ্বানেরা। তাই এই বিষয়টা সকলের মাথায় ঢুকিয়ে নেওয়া উচিত যে ঋষি দয়ানন্দের বেদ ভাষ্যের বিরুদ্ধে কিছু বলার আগে বেদাঙ্গ, ব্রাহ্মণ ইত্যাদি শাস্ত্র অধ্যয়ন করুন কেননা তিনি সংস্কৃতে বেদ ভাষ্য করেছেন হিন্দিতে নয়। আমাদের আর্য় সমাজের একজন মহান পণ্ডিত য়ুধিষ্ঠির মীমাংসক একটি গ্রন্থ লিখেছেন যার নাম 'ऋषि दयानन्द के ग्रन्थों का इतिहास' 'ঋষি দয়ানন্দ কে গ্রন্থ কা ইতিহাস' [মার্গশীর্ষ ২০০৬ সম্বত্> ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত] এই গ্রন্থে মীমাংসক জি ঋষি দয়ানন্দ কৃত সকল সংস্কৃত ও হিন্দি গ্রন্থের বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যে সকল বিদ্বানেরা সংষ্কৃত ভাষ্য থেকে হিন্দি ভাষানুবাদ করেছিলেন তারা প্রায়ই জায়গায় ভুল করেছিলেন, ঋষি দয়ানন্দ কিছু ভুল সংশোধনও করেছিলেন কিন্তু সম্পূর্ণরূপে করতে পারেননি। ঋষি দয়ানন্দকৃত বেদভাষ্য বিষয়ে মীমাংসক জি উক্ত গ্রন্থের ৯০-১০৮ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, তিনি সেখানে ঋষি দয়ানন্দের 'পত্র ব্যবহার' থেকে নানান প্ৰমাণও দিয়েছেন।


এইবার দেখে নেওয়া যাক ঋষি দয়ানন্দ য়জুর্বেদ ২৫/৭ মন্ত্রের সংস্কৃত ভাষ্য-

पदार्थ :- (पूषणम्) पुष्टिकरम् (वनिष्ठुना) याचनेन ( अन्धाहीन्) अन्धान् सर्पान् (स्थूलगुदया) स्थूलया गुदया सह ( सर्पान्) (गुदाभि:) (विह्रुतः) विशेषेण कुटिलान् (आन्त्रैः) उदरस्थैर्नाडीविशेषैः (अप) जलानि ( वस्तिना) नाभेरधोभागेन ( वृषणम्) वीर्याधारम् ( आण्डाभ्याम्) अण्डाकाराभ्यां वृषणावयवाभ्याम् (वाजिनम्) अश्वम् (शेपेन) लिङ्गेन (प्रजाम् ) सन्ततिम् (रेतसा) वीर्येण (चापान्) भक्षणानि (पित्तेन ) ( प्रदरान्) उदरावयवान् (पायुना) एतदिन्द्रियेण ( कूश्मान् ) शासनानि । अत्र कशधातोर्मक्प्रत्ययोऽन्येषामपीति दीर्घश्च (शकपिण्डैः) शक्तैः संघातैः॥७॥


ঋষি দয়ানন্দ এই মন্ত্রের ভাষ্যে যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তা হিন্দি অনুবাদকেরা বুঝে উঠতে পারেনি, কাজেই তারা এই মন্ত্রের অর্থ তেমনই করেছে যেমনটা বেদ অজ্ঞ পৌরাণিক বিদ্বানেরা করেছে, প্রকৃত ভুলটা হয়েছে এই জায়গায়। দুঃখের বিষয় হলো আজ পর্যন্ত এই ভুল গুলোকে সংশোধন করা হয়নি। পৌরাণিকরা যেমন এমন এক ধরণের প্রাণী যারা ১৮+ পুরাণ কাহিনীর মধ্যে নিজেদের মান্য ঈশ্বর, মুনি, ঋষিদের লম্পট বানিয়েছে, কুলষিত করেছে তবুও আজ পর্যন্ত এমন কোনো পুরাণ বিদ্বান দেখলাম না যারা পুরাণ থেকে বিকৃত বিষয় গুলোকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেছে অথবা পুরাণ কাহিনীর বিকৃত বিষয় গুলোর বিরুদ্ধে কিছু লিখেছে, ঠিক এই প্রকারের প্রাণী আর্য সমাজের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে নয়তো এই সকল ভুল গুলোকে সংশোধন করা হতো। আমাদের বৈদিকদের মধ্যে কয়জন জানে যে ঋষি দয়ানন্দ হিন্দি ভাষায় নয় বরং সংস্কৃতে বেদ ভাষ্য করেছিলেন ? অনেকেই জানেনা, কাজেই তারা মনে করে হিন্দি ভাষ্যও ঋষি দয়ানন্দ স্বয়ং করেছেন। ফলে হিন্দি অনুবাদে কোনো ভুল পেলে মনে করা হয় ঋষি দয়ানন্দই ভুল করেছে, এতে হিন্দি অনুবাদকের না বরং ঋষি দয়ানন্দেরই বদনাম হবে। এই সাধারণ জ্ঞান গুলো  আমাদের ওই সকল বিদ্বানদের নেই যারা আজও ভুল গুলোকে সংশোধন করার কোনো প্রয়াস করেনি!


বর্তমান সময়ের একজন শ্রেষ্ঠ বৈদিক বিদ্বান এবং নৈষ্টিক ব্রহ্মচারী হলেন আচাৰ্য় অগ্নিব্রত। যিনি মহর্ষি ঐতরেয় মহিদাসের লেখা ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ভাষ্য করেছেন, যে গ্রন্থের নাম দেওয়া হয়েছে 'বেদ বিজ্ঞান আলোক'। ওনার সম্পর্কে আরও জানতে হলে vaidic physics ইউটিউব চ্যানেল দেখুন। আচাৰ্য় অগ্নিব্রত জি ঋষি দয়ানন্দ কৃত সংস্কৃত ভাষ্যের বিস্তৃত ব্যাখ্যা করেছেন। আসুন দেখি-


পদার্থঃ হে মনুষ্য! (বনিষ্ঠুনা) যাচন অর্থাৎ গ্রহণ করার ইচ্ছা তথা নষ্ট করার প্রবৃত্তি এই উভয় প্রকারের কর্ম দ্বারা (পূষণম্) পুষ্টি করণের ক্রিয়া সম্যক্ প্রকারে সম্পূর্ণ হয়। এই বিষয়ে ধ্যান দেওয়া উচিত যে শরীর এবং ব্রহ্মাণ্ড উভয়ের সংযোগ-বিয়োগ অথবা সৃজন-বিনাশ উভয় প্রকারের প্রবৃত্তির প্রক্রিয়া একসাথে চলে। 

এদের মধ্যে একটির অভাব হলেই সৃষ্টি প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়ে যাবে। এখানে ঋষি দয়ানন্দকৃত 'য়াচনেন' পদের দুই প্রকারের অর্থ গ্রহণ করা উচিত। যদি এখানে কেউ 'য়াচনেন' পদের দুই প্রকার অর্থ গ্রহণ না করে তাহলে তাকে বনিষ্ঠুনা পদ 'বনু য়াচনে' তথা 'বনু সম্ভক্তৌ' এই দুই ধাতু হতে ব্যুৎপন্ন মানা উচিত। তাহলে এখানে দুই প্রকার অর্থ বের হয়।  (স্থূলগুদয়া) স্থূল গুদা অথবা পুচ্ছভাগ দ্বারা (অন্ধাহীন্) অন্ধ সর্প নিজের ক্রিয়া সমূহকে করতে সমর্থ হয়। আমরা জানি যে সমস্ত সাপ অন্ধ হয় তাদের পুচ্ছ বা লেজ মুখের সাদৃশ্য মোটা হয়ে থাকে। সেখানেই সর্পের গুদাও থাকে। সেই স্থূল গুদার মাধ্যমে সর্প ডিম দেয়। এই কারণে  গুদা স্থূল হয়ে থাকে। brahminy blind snake শুধুমাত্র মহিলা হয়, পুরুষ হয়না। এই কারণে এই সাপ পুরুষের সংযোগ ছাড়াই গুদা দ্বারা ডিম দেয়। কাজেই বলা হয়েছে স্থূল গুদা দ্বারা অন্ধ সর্প নিজের কর্ম করে থাকে। 

Brahminy blind snake
                              

(গুদাভিঃ) গুদা অথবা পুচ্ছভাগ দ্বারা (বিহ্রুতঃ) বিশেষ রূপে বক্রগতি করা সর্প নিজের গতি আদি ক্রিয়াকে সম্যগ্রূপেণ করতে সমর্থ হয়। এখানে 'বিহ্রুতঃ' শব্দ দ্বারা শাকল সর্প গ্রহণ করা যায়। এই সাপ নিজের পুচ্ছ অথবা গুদা ভাগকে মুখ দিয়ে দাবিয়ে রেখে গোলাকার হয়ে চাকার সাদৃশ্য গতি করে থাকে। এই সর্পকে ইংরেজি ভাষায় hoop snake বলা হয়।

Hoop snake
                                      

 এই প্রকারের সর্পের বিষয়ে বৈজ্ঞানিকদের শঙ্কা রয়েছে। ঐতরেয় ব্রাহ্মণেও এক স্থানে এই প্রকার সর্পের বর্ণনা রয়েছে। আচার্য সায়ণও ঐতরেয় ব্রাহ্মণের ভাষ্যে এই সর্পের চর্চা করেছেন, সম্ভবত এই সর্পের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিছু সর্প নিজের লেজ নাড়িয়ে আওয়াজ পূর্বক শিকারকে আকর্ষিত করে ধরে নেয়, এখানেও কিন্তু গুদা বা পুচ্ছের ভূমিকা থাকে কিন্তু এখানে গতি করার  জন্য নয় বরং শিকার করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। এই কারণে গুদার মাধ্যমে এদের ক্রিয়াশীল হওয়া অথবা সম্যক্ ক্রিয়া করার চর্চা এখানে রয়েছে। (সর্পান্) অন্য প্রকারের সর্প (আন্ত্রৈঃ) উদরস্থ নাড়ী [অমতি জানাতি প্রোপ্নোতি য়েন তত্ অন্ত্রম্ (উণাদি কোষ ৪/১৬৫)] অর্থাৎ সর্প শরীরের ওপর তৈরি হওয়া শল্কের দ্বারাই সে নিজের সকল কর্ম করতে সমর্থ হয়। 

ভাবার্থঃ হে মনুষ্য! সৃষ্টিতে সংযোগ বিয়োগের গুণ দ্বারা বিভিন্ন ক্রিয়া, পদার্থের রক্ষা এবং পালন, অন্ধ সাপের পুচ্ছ বা গুদাভাগ দ্বারা ডিম দেয় অথবা এর সাহায্যে শাকল সাপের গতি করা, সমস্ত সাপের মাংসপেশী দ্বারা হওয়া কর্ম, শরীরে মূত্র বিসর্জনের সম্যক্ ক্রিয়ার দ্বারা শরীরে জলের সম্যক্ কার্যশীল থাকা, অন্ডকোষে অবয়ব ভূত অণ্ড স্বস্থ হওয়াতেই অন্ডকোষের সমর্থ হওয়া। পৌরুষ শক্তি সম্পন্ন ঘোড়া আদি বলবান প্রাণীর বল বিদ্যমান থাকা, শুক্র এবং বীর্যের শুদ্ধতা এবং স্বাস্থ্যের দ্বারা স্বস্থ প্রজা  উৎপন্ন হওয়া, পিত্ত আদি পাচক রসের দ্বারা ভোজন পচনশীল হওয়া, মল আদি বিসর্জনের সম্যক্ ক্রিয়ার দ্বারা শরীরের সকল অঙ্গ স্বস্থ থাকা এবং মস্তিকগত স্নায়ু সমূহের স্বস্থ এবং সবল থাকার ফলে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ সমূহের সম্যক্ নিয়ন্ত্রণ এবং সঞ্চালন আদি কর্ম হয়ে থাকে, এইরুপ তুমি জানো।

আমি পুরো মন্ত্রের ব্যাখ্যা তুলে ধরলাম না , যেটুকু নিয়ে শঙ্কা রয়েছে সেটাই তুলে ধরলাম। কারোর যদি ইচ্ছে হয় আরও বিস্তারিত জানার, তাহলে এই লিঙ্ক থেকে দেখে নেবেন। আচাৰ্য় অগ্নিব্রত জি এখানে উক্ত মন্ত্রের তিন প্রকারের ভাষ্য করেছেন

👉য়জুর্বেদ ২৫/৭ ভাষ্য [আচাৰ্য় অগ্নিব্রত নৈষ্টিক] pdf 👈


এই বিষয়ে সকল বৈদিক বন্ধুদের ধ্যান দেওয়া উচিত যে ঋষি দয়ানন্দ যেমন বেদ ভাষ্য করতে চেয়েছিলেন তেমন ভাষ্য করতে পারেনি। ঋষি দয়ানন্দ সাংকেতিক বেদ ভাষ্য করেছেন। 

ঋষি দয়ানন্দ বলেছিলেন বেদের মধ্যে সকল প্রকারের বিদ্যা রয়েছে [ ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা/ ব্রহ্মবিদ্যাবিষয়]। তিনি বলেছিলেন -যদি এমন বিস্তৃত ভাষ্য আমি চার বেদের করি, তাহলে চার বেদের ভাষ্য করতে চারশো বছর সময় লাগবে। [ঋগ্বেদ মহাভাষ‍্যম্, আচাৰ্য় বিশ্বশ্রবা ব্যাস, পৃষ্ঠা-১৪৭]। ঋষি দয়ানন্দ ভ্রান্তি নিবারণ গ্রন্থে লিখেছেন- পরমাত্মার কৃপায় আমার শরীর সুস্থ থাক এবং সেই দিনের দেখা মিলবে যেদিন বেদ ভাষ্য সম্পূর্ণ হয়ে যাবে সেদিন নিঃসন্দেহে এই আর্য়্যাবর্ত্ত দেশে সূর্যের সমান প্রকাশিত হবে, যাকে ধ্বংস করার সামর্থ্য কারোর থাকবে না। কেননা সত্যের মূল এমন নয় যে যাকে যে কেউ খুবই সহজে উপড়ে ফেলবে। বেদের প্রতিটি মন্ত্রের তিন প্রকারের অর্থ হয় আধ্যাত্মিক, আধিভৌতিক ও আধিদৈবিক বিষয়ে নিম্নলিখিত পোষ্টটি দেখে নেবেন-

 👉বেদ মন্ত্রের ত্রিবিধ ভাষ্য বিষয়ক👈


ঋষি দয়ানন্দ বলেছেন চার বেদের পূর্ণাঙ্গ ভাষ্য করতে চারশো বছর সময় লাগবে অর্থাৎ প্রতিটি বেদের একশো বছর করে সময় লাগবে, কিন্তু ঋষি দয়ানন্দ বেদ ভাষ্য করার জন্য ১০ বছরও সময় পাননি অর্থাৎ বলা যায় যে তিনি যেমন ভাষ্য করতে চেয়েছিলেন তার ২০% করতেও পারেননি। এই অধার্মিক নিকৃষ্ট সমাজ ঋষি দয়ানন্দকে বেঁচে থাকতে দেয়নি! সামান্য উদাহরণ স্বরূপ দেখুন ঋষি দয়ানন্দ ঋগ্বেদ ১/১/১ মন্ত্রের ভাষ্য করেছেন প্রায় ২ পৃষ্ঠায় কিন্তু কয়েক সুক্ত পেরিয়ে গিয়ে দেখুন কত ছোট ছোট ভাষ্য করেছেন। প্রায়ই মন্ত্রের কিছু কিছু শব্দের অর্থ তিনি করেননি, খুবই সংক্ষিপ্ত ভাষ্য করেছেন। ঋষি দয়ানন্দ হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন যে এই নোংরা সমাজ তাকে বেশিদিন বাঁচতে দেবে না, কাজেই তিনি বেদের ভাষ্য খুবই সাংকেতিক করেছিলেন। কিন্তু আমাদের বিদ্বানেরা ঋষি দয়ানন্দের সাংকেতিক ভাষ্যকে ঠিকভাবে বুঝতে না পেরে ভুলভাল অর্থ করেছেন। 


আমি এই পোষ্ট টি লিখলাম শুধুমাত্র বৈদিক বন্ধুদের জন্য শঙ্কা সমাধান হিসেবে। যে সকল পৌরাণিকরা ঋষি দয়ানন্দ কে গালি দেয়, তাদেরকে ঋষি দয়ানন্দের বেদ ভাষ্য বিষয়ে কিছু বোঝানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। মহারাজ ভর্তৃহরি বলেছেন- ''সর্বস্যৌষধমস্তি শাস্ত্র বিহিতম্ মূর্খস‍্যনাস্ত্যৌষধম্।'' সকল রোগের ঔষধ শাস্ত্রে লিখিত রয়েছে কিন্তু মূর্খের ঔষধ শাস্ত্রে নাই অর্থাৎ দুঃখ রূপী রোগ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য শাস্ত্রে বহু কথন রয়েছে কিন্তু মূর্খকে বোঝানোর মত কোনো কথন শাস্ত্রে নাই [ভর্তৃহরি, নীতি শতক/ ১০]। কিন্তু আমি মনে করি আগামীতে সকল পৌরাণিক বন্ধুরা মিলে অনুসন্ধান বিষয়ক একটি সংস্থা খুলবে। তারা দেশ বিদেশ ঘুরে নানান পশু বা প্রাণীদের সংগ্ৰহ করবে এবং তাদের মলদ্বার অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারা পরীক্ষা করে দেখবে যে সেই মলদ্বার দ্বারা অন্ধ সাপ দেবতার সম্পর্কে কিভাবে জানা যায় এবং সামান্য মলদ্বার পরীক্ষা করে দেখবে যে সাপ দেবতার সম্পর্কে কিভাবে জানা যায়। পরীক্ষায় সফল হলে হয়তো আচার্য উব্বটের কার্যের [বেদ ভাষ্য] প্রশংসা সকলেই করবে।  ঠিক এইরূপ ব্রহ্মস্বরূপ করপাত্রীর কথা অনুসারে কোন কোন পশু বা প্রাণীর স্থূল ম*লদ্বার দ্বারা অন্ধ সাপ কে এবং ম*লদ্বারের অন্য ভাগ দিয়ে সাপকে প্রসন্ন করা সম্ভব এই বিষয়ে পরীক্ষা করা হবে। আমি মনে করি এই পরীক্ষার কাজটা পুরীর নিশ্চলানন্দ সরস্বতী কে দেওয়া উচিত, কেননা তিনিও মায়াবাদী। 


নমস্তে

সত্যমেব জয়তে

কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্

সনাতন ধর্মের জয় হোক

জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩





বেদের প্রতিটি মন্ত্রের আধিদৈবিক, আধিভৌতিক ও আধ্যাত্মিক অর্থ হয়

 



বর্তমান সময়ে ৪ হাত যুক্ত বিষ্ণুর কিছু ভক্তরা (বৈষ্ণব) সকল শাস্ত্র কে তুচ্ছ করে শুধুমাত্র গীতাকে নিয়ে লাফালাফি করে। সনাতন ধর্মের মূল হল বেদ, এরা যুক্তিতে না পারলে বেদকে তুচ্ছ করতেও কারোর পরোয়া করেনা। আর এই সকল বৈষ্ণবরা বেদের চেয়েও গীতাকে শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার জন্য গীতা ২/৪৫ শ্লোকটি খুবই ব্যবহার করে থাকে। আসুন দেখি এই শ্লোকে কি রয়েছে- 


ত্রৈগুণ‍্যবিষয়াঃ বেদাঃ নিস্ত্রৈগুণ‍্যঃ ভব অর্জুন ।

নির্দ্বন্দ্বঃ নিত্যসত্ত্বস্থঃ নির্য়োগক্ষেমঃ আত্মবান্ ॥৪৫


অর্থ-বেদে প্রধানত জড়াপ্রকৃতির তিনটি গুণ সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন! তুমি সেই গুণ গুলিকে অতিক্রম করে নির্গুণস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।



যে সকল পৌরাণিক বিদ্বানরা গীতার ভাষ্য করেছেন, তাদের মধ্যে প্রায় সকলেই উক্ত শ্লোকের একই অর্থ করেছেন। এখানে বলা হচ্ছে যে বেদে প্রধানত জড় প্রকৃতির তিন গুণের বিষয়ে বলা হয়েছে। এখানে অর্জুনকে বলা হচ্ছে এই গুণ গুলোকে অতিক্রম করতে। আসলে এই ত্রিগুণ কি ? ঋষি কপিল লিখেছেন- সত্ত্বরজস্তমসাং সাম‍্যাবস্থা প্রকৃতিঃ। [সাংখ্য দর্শন ১/৬১] প্রকৃতির মধ্যে সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ গুণ সমান অবস্থায় থাকে। এই সূত্রে আরও বলা হয়েছে এই প্রকৃতি থেকেই সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম পদার্থ তৈরি হতে হতে স্থূল ভূত আদি তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ এই জগতে যে সকল জড় পদার্থ রয়েছে তা সবই প্ৰকৃতি নামক উপাদানের অংশ। 


এইবার দেখে নেওয়া যাক গীতা ২/৪৫ শ্লোক অনুযায়ী বৈষ্ণব বন্ধুরা যে দাবিটি করে থাকে তা কতটা সত্য। বেদের ৬ টি অঙ্গ রয়েছে যার মধ্যে একটি হল নিরুক্ত, বর্তমানে যে নিরুক্ত শাস্ত্রটি পাওয়া যায় তা লিখেছেন ঋষি য়াস্ক। নিরুক্তের ৭/১ অনুযায়ী বেদের প্রতিটি মন্ত্রের তিন প্রকার অর্থ হয়। এইবার এই বিষয়ে প্রাচীন কিছু নিরুক্ত টীকাকারের মান্যতা দেখে নেওয়া যাক- 


#স্কন্দস্বামী


সর্বদর্শনেশু চ সর্বে মন্ত্রা য়োজনীয়াঃ।  কুতঃ ? স্বয়মেব ভাষ্যকারেণ সর্বমন্ত্রাম্ ত্রিপ্রকারস‍্য বিষয়স‍্য প্রদর্শনায় অর্থবাচঃ পুষ্পফল মাহ ইতি যজ্ঞাদীনাম্ পুষ্পফলত্বেন প্রতিজ্ঞানাত্।


[ নিরুক্ত ৭/৫, স্কন্দস্বামী টীকা] 


অর্থাৎ সর্ব পক্ষে সমস্ত মন্ত্রের যোজনা করা উচিত। কেননা স্বয়ং ভাষ্যকার (নিরুক্তকার য়াস্ক) সমস্ত মন্ত্রে তিন প্রকারের বিষয় কথন করার জন্য অর্থ কে মন্ত্ররূপী বাক্ এর পুষ্প ফল বলেছেন। এবং যজ্ঞ আদিকে পুষ্প বা ফল বলেছেন।



#দুর্গাচার্য


আধ্যাত্মিকাধিদৈবতাধিয়জ্ঞাভিবায়িনাং মন্ত্রাণামর্থাঃ পরিজ্ঞায়ন্তে।


[নিরুক্ত ১/১৮ দুর্গাচার্য টীকা]


দুর্গাচার্য এখানে তিন প্রকারের অর্থের কথা বলেছেন। 


তস্মাদেতেষু য়াবন্তোঽর্থা উপপদ্যেরন্নধিদৈবাধ্যাত্মাধিয়জ্ঞাশ্রয়া সর্ব এব তে য়োজ্যাঃ মাত্রাপরাধোঽস্তি।


[নিরুক্ত ২/৮, দুর্গাচার্য টীকা] 


আধিদৈবিক আধ্যাত্মিক এবং অধিযজ্ঞে  আশ্রিত যতটা অর্থ সম্ভব হয়, সেগুলোর যোজনা করা উচিত। এমনটা করা কোনো অপরাধ নয়। 



#ঋষি দয়ানন্দও একই মান্যতা দিয়েছেন- 


সর্বেমন্ত্রাস্ত্রিবিধানামর্থানাম্ বাচকা ভবন্তি। কেচিত্ পরোক্ষাণাং, কেচিত্ প্রত‍্যক্ষাণাং, কেচিদধ‍্যাত্মম্ বক্তুমর্হাঃ।


[ঋগ্বেদাদিভাষ্যভূমিকা, প্রশ্নোত্তরবিষয়ঃ, ঋষি দয়ানন্দ সরস্বতী] 


অতএব বেদের প্রতিটি মন্ত্রের তিন প্রকারের অর্থ পাওয়া যায়, যেমন- আধ্যাত্মিক অর্থাৎ যা জীবাত্মা- পরমাত্মা বিষয়ক, আধিদৈবিক যা সূর্য, চন্দ্র আদি পদার্থ বিষয়ক এবং আধিযাজ্ঞিক বা আধিভৌতিক অর্থাৎ যাজ্ঞিক, সামাজিক অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক আদি বিষয়ক। অতএব গীতা ২/৪৫ শ্লোক অনুযায়ী যে দাবিটি করে থাকে আমাদের বৈষ্ণব বন্ধুরা তা শতভাগ মিথ্যা!কেননা শাস্ত্র অনুযায়ী বেদের প্রতিটি মন্ত্রের আধ্যাত্মিক অর্থ হয়। তাই এই কথা বলা পুরোই পাগলামি যে বেদের মধ্যে প্রধানত জড় প্রকৃতির বিষয়ে আলোচনা রয়েছে।


এই শ্লোক নিয়ে বৈষ্ণবরা আরও ধরণের পাগলামি করে থাকে, বৈষ্ণবদের মতে বেদে যেহেতু প্রধানত জড় প্রকৃতির বিষয়ে আলোচনা রয়েছে তাই বেদে কে অতিক্রম করে গুণাতীত হতে বলা হয়েছে অর্থাৎ বেদ জ্ঞান অর্জন করার কোন দরকার নাই, গীতা মানলেই গুণাতীত হওয়া যাবে। বৈষ্ণবদের এই পাগলামি দেখে একটা ১০ বছরের বুদ্ধিমান শিশুও হাসবে! কিছুক্ষণের জন্য যদি ধরেও নেওয়া হয় বেদে শুধুই জড় প্রকৃতির বিষয়ে কথন রয়েছে আর গীতায় বলা হয়েছে এই সকল গুণ অতিক্রম করতে। তো এই ত্রিগুণ যুক্ত প্রকৃতির বিদ্যা (বেদ) না জেনেই কি এই ত্রিগুণকে অতিক্রম করা যাবে ? উদাহরণ স্বরূপ একজন ব্যক্তিকে বলা হলো যে- আপনি আর মাত্র ১০০ কিমি পথ অতিক্রম করলেই দিল্লি পৌঁছে যাবেন। তার মানে কি এই যে ওই ব্যক্তিকে ১০০ কিমি পথ যেতে বারণ করা হচ্ছে ? ১-৯ শ্রেণীর বিদ্যা অতিক্রম করলে ১০ শ্রেণীতে ওঠা যায়। এর মানে কি এই যে ১-৯ শ্রেণীর বিদ্যা ত্যাগ করে ১০ শ্রেণীতে ওঠা সম্ভব ? সম্ভব নয়। ঠিক তেমনি জড় প্রকৃতির গুণ সমূহকে আগে জানতে হবে তারপরই সেই গুণ গুলোকে অতিক্রম করা সম্ভব, অন্যথা সম্ভব নয়। এখন কিছু বৈষ্ণব বলতে পারে যে 'আমরা জড় প্রকৃতিকে জানতে চাই না, না জানলেও ঈশ্বর কে পাওয়া যাবে গীতা ১৮/৬২, ৬৬ শ্লোক মানলেই হবে'। আমি এই সকল বৈষ্ণবদের বলতে চাই যে গীতা ১৩/২৪ শ্লোকে স্পষ্ট করে বলা আছে প্রকৃতি কে এবং ঈশ্বর কে জানলে মোক্ষ লাভ হবে। অতএব গীতা ২/৪৫ শ্লোকে যদি প্রকৃতির বিদ্যাকে জানতে বারণ করে, তাহলে তো এই বৈষ্ণবরা নিজেই গীতাকে স্ববিরোধী ও মিথ্যা শ্লোকের গ্রন্থ বানিয়ে দিচ্ছে। 



#শেষে এটাই বলবো যে গীতা গীতা করে লাফানো এবং বেদ কে তুচ্ছ মনে করা প্রাণীদের উদ্দেশ্যে বলবো যে আপনারা গীতা কে আগে ভালো করে পড়ুন। গীতা ঠিক করে না পড়ে ও বুঝে লম্ফঝম্প করা বন্ধ করুন! আপনাদের বৈষ্ণবদের সংখ্যা দিনের পর দিন বাড়ছে এর জন্য নিজেদের বিশাল ভাবার কিছু নাই, জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেলেই যে তা সত্যের পথ এমনটা মনে করা ভ্রম মাত্র। বর্তমান সময়ে খ্রিষ্টান মতবাদের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি তাদের সারা বিশ্বে ২০০ কোটির বেশি খ্রিস্টান রয়েছে। তাই কেউ যদি বলে খ্রিস্টানরা সত্যের পথে আছে এমনটা ভাবা মুর্খতাপূর্ণ। ধর্ম মিথ্যা বা অন্ধবিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে চলে না, যা অযৌক্তিক, মিথ্যা তা ধর্মের অংশ হতে পারে না। স্রষ্টা যেমন সত্য, ঠিক তেমনি তার তৈরি ধর্মও সত্য। 



নমস্তে

সত্যমেব জয়তে

কৃণ্বন্তো বিশ্বমার্য়ম্

সনাতন ধর্মের জয় হোক

জয় আর্য়াবর্ত🚩🚩