মহাত্মা বুদ্ধ কি সনাতন ধর্ম বিরোধী ছিলেন ?
বর্তমানে কিছু ব্যক্তি এমন রয়েছে যারা নিজেদের দলিত, মূল নিবাসী বলে দাবি করে এবং নিজেদের মহাত্মা বুদ্ধের অনুসারী মনে করে অথচ এরাই মনে করে যারা বেদাদি শাস্ত্র কে মেনে চলে অর্থাৎ সকল মুনি ঋষিগণ, শ্রীরাম, শ্রীকৃষ্ণ আদি মহাপুরুষদের ঘৃণা করে, এরা গৌতম বুদ্ধ কে মেনে চললেও সনাতন ধর্মের শাস্ত্র আদি সম্পর্কে বাজে কথা বলা এদের নিত্য দিনের কাজ।
নিজেদের মূল নিবাসী বলে দাবি করা ডক্টর আম্বেদকরের ভক্ত গুলো যদি ত্রিপিটকের জ্ঞান অর্জন করতো তাহলে তারা মূর্খের মতো কখনোই ঋষি মুনিদের, শ্রীরাম শ্রীকৃষ্ণ আদিদের গালি দিতো না। বৌদ্ধ মতবাদে ত্রিপিটকের একটি ভাগ হলো সুত্তপিটক, আর এই সুত্তপিটকের মধ্যে নানান গ্রন্থ রয়েছে তার মধ্যে ধম্মপদ ও সুত্তনিপাত নামক দুই গ্রন্থ রয়েছে। এই সকল গ্রন্থ পালী ভাষায় রচিত, এই গ্রন্থ গুলোতে মহাত্মা বুদ্ধের নানান বাণী রয়েছে, তার থেকে কিছু বাণী তুলে ধরা হলো___
ধম্মপদ / ১৯ ধম্মট্ঠবগ্গো/১৩,১৪,১৫
ন মোনেন মুনী’ হোতি মূল্হরূপো অবিদ্দসু,
যো চ তুলং ব পগ্গয্হ বরমাদায় পণ্ডিতো।।১৩।।
পাপানি পরিবজ্জেতি স মুনী তেন সো মুনি, যো মুনাতি উভো লোকে মুনী তেন পবুচ্চতি।।১৪।।
অর্থঃ অতিমূঢ় এবং অজ্ঞান ব্যক্তি, কেবল মৌনের দ্বারা মুনি হয় না, কিন্তু যে ব্যক্তি পণ্ডিত, তিনি তুলাদণ্ড ধারণ করে যা মঙ্গলকর তা গ্রহণ করেন, এবং যা পাপ তা বর্জন করেন, সেইরূপ ব্যক্তিকেই মুনি বলা যায়। এইরূপ কার্য্যের দ্বারা তিনি মুনি হন। যিনি উভয় লোক মনন করেন তিনি সেই কার্য্যের দ্বারা মুনি বলে কথিত হন।
ন তেন অরিয়ো হোতি যেন পাণানি হিংসতি,
অহিংসা সব্বপাণানং অরিয়ো তি পবুচ্চতি।।১৫।।
অর্থঃ যদি কেহ প্রাণিহিংসা করে, তবে সে ‘আর্য' হয় না। সৰ্ব্বপ্রাণীতে যিনি হিংসা করেনা তাকে আর্য বলা হয়।।
ধম্মপদ / ২৬ ব্রাহ্মণবগ্গো/ ৯, ১০, ১১, ২০, ২১, ৪০
যস্স কায়েন বাচায়, মনসা নত্থি দুক্ক টং।
সংবুতং তীহি ঠানেহি তমহং ব্রুমি ব্রাহ্মণং।।৯।।
অর্থঃ যার শরীরে, মনে ও বাণীতে পাপ নাই, যিনি এই ত্রিস্থানে অতিশয় সংযমশীল, সেই লোককে আমি ব্রাহ্মণ বলি।
যম্হা ধম্ম বিজানেয্য সম্মাসম্বুদ্ধ দেসিতং,
সক্ক চ্চং তং নমস্সেয্য অগ্গিহুতং ব ব্ৰাহ্মণো।।১০।।
অর্থঃ যেমন ব্রাহ্মণ অগ্নিহোত্রকে ভক্তিভাবে নমস্কার করে, সেইরূপ যে ব্যক্তির নিকট হইতে বুদ্ধোপদিষ্ট ধৰ্ম্ম জ্ঞাত হওয়া যায়, তাঁহাকে ভক্তিভাবে প্রণাম করিবে।
ন জটাহি ন গোত্তেহি ' ন জচ্চা হোতি ব্রাহ্মণো,
যম্হি সচ্চঞ্চ ধম্মো চ সো সুচী সো চ ব্রাহ্মণো।।১১।।
অর্থঃ জটা পরিধান দ্বারা, গোত্র দ্বারা এবং জাতি দ্বারা কেউ ব্রাহ্মণ হয় না, কিন্তু যিনি চার আর্য সত্য ষোড়শ প্রকারে দর্শন করেছেন ও নয় লোকত্তর ধর্ম পরিজ্ঞাত- তিনি শুচি এবং তিনিই প্রকৃত ব্রাহ্মণ।
যো দুক্খস্স পজানাতি ইধেহব খয়মত্তনো,
পন্নভারং বিসংযুত্তং তমহং ব্রুমি ব্ৰাহ্মণং।। ২০।।
অর্থঃ যিনি এই জগতে অথবা এই জীবনে নিজ দুঃখের ক্ষয় জেনে ভারশূন্য এবং পাপমুক্ত হয়েছেন, তাকে আমি ব্রাহ্মণ বলি।
গম্ভীরপঞ্ঞ মেধাবিং মগ্গামগ্গস্স কোবিদং,
উত্তমত্থমনুপ্পত্তং তমহং ব্রুমি ব্ৰাহ্মণং।।২১।।
অর্থঃ যিনি প্রগাঢ় জ্ঞানী, মেধাবী, সত্যাসত্য পথের সুদর্শী এবং যিনি উত্তমপদ (নির্ব্বাণ) লাভ করেছেন তাকে আমি ব্রাহ্মণ বলি।
উসভং পবরং বীরং মহেসিং বিজিতাবিনং,
অনেজং নহাতকং বুদ্ধং তমহং ব্রুমি ব্ৰাহ্মণং।।৪০।।
অর্থঃ যিনি মহৎ, প্রবর, বীর, মহর্ষি, বিজেতা, স্নাতক এবং বুদ্ধ তাকে আমি ব্রাহ্মণ বলি।।
সুত্তনিপাত/ মহাবগ্গো/ পূরলাস (সুন্দরীক ভরদ্বাজ) সুত্তং/১০,১১,২৯
মা জাতিং পুচ্ছি চরণঞ্চ পুচ্ছ, কট্ঠা হবে জায়তি জাতবেদো;
নীচাকুলীনোপি মুনী ধিতীমা, আজানিযো হোতি হিরীনিসেধো।।১০।।
অর্থঃ জাতি জিজ্ঞাসা করিও না, চরণই জিজ্ঞাসা কর। কাঠ হতে অগ্নির জন্ম হয়। মুনি নীচকুলে জন্মিলেও ধৃতিমান (বহুশ্রুত), বিবেক সংযত হয়ে পাপে লজ্জাশীল হযে উচ্চবংশীয় আচরণ সম্পন্ন হতে পারেন
সচ্চেন দম্ভ দমসা উপেতো, বেদন্তগূ বূসিতব্রহ্মচরিযো কালেন তম্হি হব্যং পবেচ্ছে, যো ব্রাহ্মণো পুঞ্ঞপেক্খো' যজেথ।।১১।।
অর্থঃ যিনি সত্যের দ্বারা দমিত ও সংযম সম্পন্ন, বেদান্তে উচ্চতম জ্ঞানের অধিকারী, এবং পূর্ণ-ব্রহ্মচর্য সম্পন্ন; তিনি যথাকালে হব্য লাভ করেন; হে পুণ্যকামী ব্রাহ্মণ! দানযজ্ঞের আয়োজন করুন।
অঞ্ঞেন চ কেবলিনং মহেসিং, খীণাসবং কুক্কুচ্চবূপসন্তং,
অনেন পানেন উপট্ঠহস্সু, খেত্তংহিতং পুঞ্ক্রপেকখস্স হোতি।।২৯।।
অর্থঃ যিনি সংসার হতে মুক্তিলাভী মহর্ষি, ক্ষীণাসব, অনুতাপ উপশমকারী; তাঁহাকে অন্যরকম অন্ন, পানীয়াদির সাহায্যে পরিচর্যা কর। কারণ, পুণ্যকামীদের এমনটাই উপযুক্ত ক্ষেত্র।।
মহাত্মা বুদ্ধ এই সকল কথা সঠিক বলেছে নাকি ভুল বলেছে এই বিষয়ে আমি কিছু বলছি না। আমি বলতে চাই যে, যারা নিজেদের গৌতম বুদ্ধের আদর্শ মনে করে অথচ সনাতন ধর্মকে এবং সনাতনী মহাপুরুষদের গালি দেয়, তাদেরকে অনুরোধ করবো তারা যেন নিজেদের মূর্খতা বন্ধ করে গৌতম বুদ্ধ কে জানার চেষ্টা করে।
নমস্তে